মাদক নির্মূল অভিযান পরিচালনা করছে তালিবান সরকার

- মুহাম্মাদ মহসিন

0
204
মাদকের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা, ছবি:আল-ইমারাহ।

আফগানিস্তানে মাদক নির্মূল ও মাদকের সাথে জড়িতদের ব্যক্তিদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। তবে শুধুমাত্র মাদক নিষিদ্ধ ঘোষণা ও গুটি কয়েক মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করলেই যে মাদক নির্মূল হবে তা নয়, বরং মাদক উৎপাদন খাত সমূলে ধ্বংস ও এর সাথে জড়িত সব রকম গোপন প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মতো কার্যকরী পদক্ষেপে মনোযোগ দিয়েছে তালেবান সরকার।

এরই লক্ষ্যে গত ২৭ জানুয়ারি দেশটির ফারাহ প্রদেশের মাদক নির্মূল অভিযান পরিচালনা করে দেশটির পুলিশ। এ সময় পুলিশ ২টি গোপন মাদক উৎপাদন কেন্দ্রের খোঁজ পায়, এবং এর সাথে জড়িত ৩ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। একই সময়ে দাইকান্দি প্রদেশে মাদক বিক্রির অভিযোগে আরও তিনজন গ্রেফতার ও হেরাত প্রদেশে থেকে একজনকে ২০০ লিটার অ্যালকোহলসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।

অন্যদিকে মাদক নির্মূলের পাশাপাশি মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনেও পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছে দেশটির সরকার। সম্প্রতি বেশ কিছু মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তীতে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ইমারতে ইসলামিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চিকিৎসা দেয়ার পর গত ২৯ ডিসেম্বর প্রায় ৩৯ জন ব্যক্তিকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

চিকিৎসা শেষে নিজ পরিবারে ফিরে গেছেন ৩৯ জন্য মাদকাসক্ত আফগান নাগরিক, ছবি: আল-ইমারাহ।

উল্লেখ্য যে, পূর্ববর্তী পুতুল সরকারের আমলে আফগানিস্তানে মাদকাসক্তদের হার আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল দেশটি তখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আফিম ও হেরোইন উৎপাদনকারী দেশ হয়ে উঠেছিল। ঐ সময় বিশ্বের ৮০ শতাংশ পপি উৎপাদন হত দেশটিতে। এছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলোতে সরবরাহ করা আফিমের ৯৫ শতাংশই যেতো আফগানিস্তান থেকে।

মাদক সম্পর্কিত ২০০৬ সালের এক জরিপে দেখা যায়, পুতুল সরকারের আমলে আফগানিস্তানে প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষ মাদকাসক্ত ছিল। এবং ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাও জড়িয়ে পড়েছিল মাদকের নেশায়। জরিপে উল্লেখ্য করা হয়, অন্তত ৬০,০০০ শিশু তখন মাদকাসক্ত ছিল। এবং প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছিল।

২০২১ সালের ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে তালেবান মুজাহিদরা। এরপর থেকে দেশটিতে মাদক উৎপাদন লাফিয়া লাফিয়ে কমতে শুরু করে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান সরকারের পদক্ষেপে মাত্র এক বছরের মধ্যে দেশটিতে ৮০ শতাংশ পপি উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আর শুধু হেলমান্দ প্রদেশেই পপি চাষ কমেছে ৯৯ শতাংশ। অথচ এর আগে প্রায় ২০ বছর ধরে এই প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে। তখন পপি চাষের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল হেলমান্দ প্রদেশ।

আফগানিস্তানে নিষিদ্ধ পপি বিনষ্ট করছে ইমারতে ইসলামিয়া কর্তৃপক্ষ, ছবি: আল-ইমারাহ।

আফগানিস্তানে মাদক নির্মূলের এমন সফলতার প্রশংসা করে টেলিগ্রাফ বলেছে, আফগানিস্তান মানব ইতিহাসের সবথেকে সফল মাদক-বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তালেবান সরকার।


তথ্যসূত্র:

1. 7 held as 2 drug factories discovered
http://tinyurl.com/mr3m39rt
2. Around 40 addicts returned to families after treatment
http://tinyurl.com/m522d3vu
3. How the Taliban launched the ‘most successful counter-narcotics effort in human history’
http://tinyurl.com/2u9fhkba
4. Drug addiction rising in Afghan children
http://tinyurl.com/2svxzcfu

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতের বিহারে হিন্দুত্ববাদীদের আতশবাজি থেকে কবরস্থানে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধভিডিও || গাজায় ইহুদি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আল-কাসসামের প্রতিরোধ যুদ্ধ