রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ৯ তলা ভবনের নিচ থেকে প্রীতি (১৫) নামে এক গৃহকর্মী কিশোরীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত কিশোরী দেশের ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক আশফাকুল হকের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক আশফাক ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রীতির গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারে। কয়েক মাস আগে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের ২/৭ নম্বর বাসায় কাজ করতে এসেছিল সে। মঙ্গলবার সকালে বাসার জানালা দিয়ে ভবনের নিচে পড়ে যায় কিশোরী।
স্থানীয়রা বলছেন, এর আগেও এই বাসায় একই ঘটনা ঘটেছিল। শাহজাহান রোডের এই ভবনের একই ফ্ল্যাট থেকে ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট গৃহকর্মী শিশু ফেরদৌসী পড়ে গুরুতর আহত হয়। ওই সময় তার শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়।
এই বাসায় বারবার এমন ঘটনা ঘটায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ২০২৩ সালের ঘটনার পর শিশুটির মা জোসনা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। শিশুটিকে নির্যাতন করা হতো, মায়ের কাছে যেতে চাইলেও যেতে দেওয়া হতো না, মায়ের সাথে কথা বলতে দিতো না বলে অভিযোগ করেন জোসনা বেগম। ঐ মামলায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক আশফাকুল হকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেই ঘটনার ৬ মাস না যেতেই একই ঘটনা ঘটলো আশফাকুল হকের বাসায়। মঙ্গলবার আবারও আটক হলেন তিনি।
কিশোরীর মৃত্যুতে এলাকার লোকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এ ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে এর বিচার চান।
স্থানীয় বাসিন্দা সালমান হোসেন বলেন, আজকে সকালে রাস্তায় বের হয়ে দেখি অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছে। সামনে গিয়ে দেখি একজন কাজের মেয়ের লাশ পড়ে আছে। পরে তাকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। এই ঘটনা শুধু আজকে নয়, এর আগেও একই বাসা থেকে আরেকজন কাজের মেয়েকে ফেলে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন এলাকাবাসী সেই মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আরেক বাসিন্দা তানিয়া বেগম বলেন, সকালে চিৎকার শুনে বাসা থেকে দৌঁড়ে বের হই। এসে দেখি ছোট্ট একটি মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এসময় ওই বাসার দারোয়ানকে বললে তিনি আমাদের ওপর ক্ষেপে যান, মারধর করতে আসেন। পরে মেয়েটিকে উদ্ধার করে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই, অভিযুক্তের ফাঁসি চাই।
পাশ থেকে আরেকজন বলেন, আমি সকালে আমার বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় পাশের ভবনের এক আপু ডেকে বলেন এক কিশোরী মেয়ে রেলিংয়ে ঝুলছে। তখন চেয়ে দেখি মেয়েটি রেলিংয়ের সঙ্গে ঝুলে আছে, কিছুক্ষণ পর ভিতর থেকে একজন এসে মেয়েটির হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি নিচে পড়ে যায়। এই ঘটনা দেখে চিৎকার করলে আশপাশ থেকে বেশ কয়েকজন মানুষ ছুটে আসে। নিচে পড়ে থাকা কিশোরীর শরীরে তখন জামা থাকলেও পরনে পায়জামা ছিল না।
তিনি আরও বলেন, আমার ধারণা ওই বাসার কেউ মেয়েটার সঙ্গে খারাপ কিছু করতে চেয়েছিল। সেজন্য নিজে বাঁচতে মেয়েটিকে নিচে ফেলে দেয়। ফ্ল্যাটের মালিক এর আগেও এমন কাজ করেছে। আমরা তার ফাঁসি চাই।