অপরাজেয় আফগানিস্তানে সাম্রাজ্যবাদের পরাজয়: সোভিয়েতের বিদায়

0
147

আফগানিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভরপুর দেশগুলির একটি। দেশটির সাথে মিশে আছে বহু ইসলামি ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কিন্তু যুগে যুগে সব পরাশক্তি কোন না কোন অজুহাতে এই অঞ্চলটি দখল করার চেষ্টা করেছে। পরাশক্তিগুলো তাদের লক্ষ্য অর্জনে দেশটির জনসাধারণের ওপর চালিয়েছে ইতিহাসের বর্বরোচিত সব নিপীড়ন।

এসব পরাশক্তিগুলোর একটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন যা অনেক ভাগে ভাগ হয়ে এখন বৃহত্তর অংশ রাশিয়া নামে পরিচিত। দেশটি আফগানিস্তানে আক্রমণ করেছিল ১৯৭৯ সালে। সোভিয়েত সেনাদের আফগানিস্তানে আগ্রাসন বিশ্ব ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় রচনা করে। এই দখলদার গোষ্ঠী আফগান জাতির সম্পদ লুণ্ঠনের পাশাপাশি মুসলিমদের ওপর চালায় গণহত্যা, এভাবে চলতে থাকে দীর্ঘ ১০ বছর। ঐ সময় সোভিয়েত সেনারা দেশটিতে অন্তত ১০ লাখ মুসলিমকে হত্যা করে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এর চেয়েও বেশি জুলুম করার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা নিপীড়িত আফগানদের আর্তনাদে সাড়া দিয়েছেন। এই খুনি বাহিনীকে থামানোর জন্য আফগানিস্তানে জাগিয়ে তুলেছিলেন বিশ্ব ইতিহাসের বীর মুজাহিদদের। ঐ সময় মুজাহিদরা সোভিয়েত বাহিনীকে উপযুক্ত জবাব দিয়ে নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছিলেন।

অবশেষে দীর্ঘ ১০ বছরের অত্যাচার ও অপরাধের পরে মুজাহিদদের প্রতিরোধের মুখে ১৯৮৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি পরাজয় ও অপমানের বোঝা মাথায় নিয়ে আফগানিস্তানে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় সোভিয়েত বাহিনী।

সোভিয়েতের আগে ব্রিটেনও এখানে তার সামাজ্যবাদের ঘাঁটি গড়তে চেয়েছিলো। কিন্তু তারাও বিতারিত হয়েছে।

ইতিহাস এই সত্যের সাক্ষ্য দেয় যে, যে জাতি মহান আল্লাহর পথে জিহাদ এর মাধ্যমে নিজেদের স্বাধীনতা অর্জন ও দখলদারদের বিতাড়নের চেষ্টা করেছে তারা সফল হয়েছেন। আফগান মুসলিমরা দ্বীনের এই মহা বিধান আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে যুগে যুগে প্রতিটি পরাশক্তিকে পরাজিত করেছেন। আর এ জন্য বিশ্বদরবারে দেশটি সাম্রাজ্যবাদের কবরস্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

আফগানিস্তানে ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয় সত্ত্বেও, পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট ফের দেশটিতে আগ্রাসন শুরু করে। কিন্তু দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধে মুজাহিদদের কাছে তাদেরও লজ্জাজনক পরাজয় ঘটে।

এভাবে ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকাকে পরাজিত করে আফগানরা বরাবরই প্রমাণ করেছেন যে, আফগানিস্তান কখনোই কোন দখলদার বা কোন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দখল করতে পারবে না। যদি কখনও এমনটি ঘটেও যায়, তবে আফগান জাতি পূর্বে যেমন ত্যাগ স্বীকার করেছেন আবারও তাঁরা শত্রুদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবে; এভাবে দেশ, জাতি ও ইসলামকে রক্ষায় নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করতে তাঁরা সদা প্রস্তুত থাকবেন ইনশাআল্লাহ।

উল্লেখ্য যে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয়ের ৩৫ তম বার্ষিকী ছিল। এ উপলক্ষে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের তালিবান প্রশাসন দেশজুড়ে বিভিন্ন সভা সেমিনারের আয়োজন করে। এসব সভা-সেমিনারে তালিবান উমারারা দখলদার পরাশক্তিগুলোর পরাজয়ে আফগানদের ভূমিকা তুলে ধরেন। পাশাপাশি দেশটির সেনাবাহিনীও তাদের বর্তমান সক্ষমতা জানান দিতে বিভিন্ন সামরিক দক্ষতা প্রদর্শন করেন।

অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয় উপলক্ষে তালিবান প্রশাসন একটি বিবৃতি প্রদান করেছেন। উক্ত বিবৃতিতে তালেবান প্রশাসন আফগানিস্তানে ভবিষ্যতে কোন দেশ বা গোষ্ঠী যদি আবারও আগ্রাসনের চিন্তা করে তাহলে তাদের সাথে কি আচরণ করা হবে এ সম্পর্কে এক রকম কূটনৈতিক হুমকি প্রদান করেছেন।

উক্ত বিবৃতিটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

আজকের এই দিনে ( ১৫ ফেব্রুয়ারি) আফগানিস্তান থেকে রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের লাল আর্মির পরাজয় এবং প্রত্যাহারের ৩৫ তম বার্ষিকী।

ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান এই দিনটিকে আমাদের জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গর্বের একটি দিন বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি এটিকে আমরা মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের দিন বলেও মনে করি। এমন গুরুত্বপূর্ণ দিবসে আমরা দেশের বীর মুজাহিদ জাতিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

জাতির পরিচয়, বীরত্ব ও স্বাধীনতা সব কিছু সংগ্রামের সাথে জড়িত। আলহামদুলিল্লাহ, আফগান জনগণ মহান আল্লাহর সাহায্যে বিগত শতাব্দীতে তিনটি পরাশক্তিকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছেন এবং তাদের দেশের জন্য স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

তৃতীয়বারের মতো স্বাধীনতা, ধর্ম ও মাতৃভূমি রক্ষার জন্য আফগান জাতির ত্যাগ, তাদের শক্তি এবং সংকল্পকে বারবার বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছে।

বিগত শতাব্দীতে আফগানিস্তানে আগ্রাসন পরিচালনাকারী দেশগুলোকে আফগান জনগণের সাহসিকতার মূল্যায়ন করা উচিত, এবং এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। পাশাপাশি ভবিষ্যতে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালানোর আগে তাদের আরও একশোবার ভাবা উচিত।

আফগানরা শান্তিপ্রিয় মানুষ, কিন্তু বিদেশী আগ্রাসন এবং সংঘাতের কারণে তাদের শান্তি বারবারই ব্যাহত হয়েছে। বছরের পর বছর আফগানরা ভোগান্তির শিকার হয়েছে।

আফগানিস্তানের বীর মুসলিম জনতাকে দেশের বিরুদ্ধে সকল প্রকার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। সবসময় জাতীয় ঐক্য বজায় রেখে ইসলামী আকিদাহ অনুসরণ করতে হবে। এবং আমাদের প্রিয় দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় পূর্বপুরুষদের পথ অনুসরণ করে যেতে হবে।


তথ্যসূত্র:
1. Statement of Islamic Emirate on expulsion of the Red Army of the former Soviet Union from Afghanistan on 26th of Dalwa
http://tinyurl.com/m74bt3mh

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধখান ইউনিসের আল-আমাল হাসপাতাল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের গোলাবর্ষণ
পরবর্তী নিবন্ধনয় মাসে রেকর্ড পরিমাণ আমদানি-রপ্তানি করেছে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান