লাকসামে নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীর হিজাব নিয়ে কটূক্তি করেছে। এ ঘটনায় ২৫শে ফেব্রুয়ারি রবিবারে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন।
মানববন্ধনে কলেজের অধ্যক্ষ মেজর মিতা সফিনাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হিজাব নিয়ে কটূক্তি, বোরকা ধরে টানাটানি, হিজাব পরা ছাত্রীদের অপমান করাসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সূত্রে একাধিক সংবাদমাধ্যম জানায়, গত ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনার ও মেলা উপভোগ করতে আসেন ওই কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আঞ্জুমা আক্তার আঁখি ও তার ছোট বোন। ওই দিন কলেজে দুই বোন হিজাব-বোরকা পরিধান করে একসঙ্গে নারী শিক্ষার্থীদের কমনরুমে যাওয়ার সময় কলেজ অধ্যক্ষ মেজর মিতা সফিনাজ তাদের বোরকা-হিজাব পরিধান নিয়ে নানা ধরনের কটূক্তি করে। এ সময় উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার সামনে ছাত্রীদের বোরকা-হিজাব পরে আসায় অপমান করে এবং বোরকা পরে আসতে নিষেধ করে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আঞ্জুমা আক্তার আঁখি জানান, আমাকে ও আমার ছোট বোনকে বোরকা পরিহিত অবস্থায় দেখামাত্রই অধ্যক্ষ ম্যাডাম বিভিন্ন বাজে মন্তব্য শুরু করে। আমার ছোট বোনের গায়ে ছিল একটি ছোট কালো বোরকা এবং একটি ছোট কালো হিজাব আর আমার পরনে ছিল বোরকা, হাত পায়ের মোজা ও হিজাব।
আঞ্জুমা আক্তার আঁখির সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী ছোট বোনকে দেখিয়ে রাগান্বিত স্বরে ঐ অধ্যক্ষ বলে, ‘‘ছোট বাচ্চাদের এগুলো কোন ধরনের পোশাক পরায়। এ ধরনের পোশাক পরিয়ে বাচ্চাদের ভুলভাল জিনিস শেখায়।’’
ওই সময় তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন শিক্ষকের মধ্যে একজন প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেছিলেন, বাচ্চাদের হয়তো পরিবার থেকে ছোটবেলা থেকেই তারা পর্দা-নৈতিকতা শেখায়, কিন্তু প্রতিউত্তরে ঐ অধ্যক্ষ বলে ওঠে, “এগুলো কোন ধরনের নৈতিকতা? এসব বোরকা-হিজাবের ভেতরে দুষ্টামি-ভণ্ডামি আরও বেশি লুকিয়ে থাকে।”
ঐ মহিলা অধ্যক্ষ আরও বলে, ‘‘হুজুরগিরি করলে বাড়িতে করতে হবে, কলেজে নয়।’’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, এসব কথায় আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমার মানসিক অবস্থা দেখার মতো ছিল না এবং লজ্জাবোধ করি।
বোরকা নিয়ে কটূক্তি করার ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “একটি সাড়ে পাঁচ বছরের শিশুর পোশাকের প্রতি একজন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বক্তব্য: ‘‘এসব বোরকা-হিজাবের নিচে আরো বেশি দুষ্টামি, বেশি নোংরামি থাকে!”
শিক্ষার্থীরা বলেন, এই অধ্যক্ষ পূর্বেও কলেজে মুসলিমদের পর্দার বিধান নিয়ে কটূক্তি করেছে। ঐ অধ্যক্ষ ছেলেদের মতো পোশাক পরে বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে কলেজ অধ্যক্ষ মেজর মিতা সফিনাজের কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সে জানায়, আমি এখন অসুস্থ, ঢাকায় একটি হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে এসেছি, একদিন পর কলেজে এসে কথা বলব।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রসাদ কুমার ভাওয়াল জানায়, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পায়নি। তবে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে নজরে এসেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীর হিজাব পরিধান কটূক্তির বিষয়টি অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।
তথ্যসূত্র:
১. ‘বোরকার ভেতরে দুষ্টামি-ভণ্ডামি বেশি লুকিয়ে থাকে’ শিক্ষার্থীকে অধ্যক্ষ
– http://tinyurl.com/27hu834u
২. নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বোরকা ও হিজাব নিয়ে কটূক্তি করায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
– http://tinyurl.com/2s4zw3j8