আবু সাঈদকে হত্যা করলো পুলিশ, কারাগারে কিশোর শিক্ষার্থী

0
245

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। গ্রেপ্তারের পর ১২ দিন ধরে রংপুর কারাগারে বন্দী রয়েছে সে। পুলিশ মামলায় তার বয়স উল্লেখ করেছে ১৯ বছর।

এই কিশোর রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির (বিজ্ঞান বিভাগ) ছাত্র। প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) সেলিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেটি তাদের প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। সে রংপুর কারাগারে বন্দী আছে বলে বুধবার জানতে পেরেছেন।

এই শিক্ষার্থীর বাবা রংপুরের পার্কের মোড়ে স্টুডিও ব্যবসা করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আবু সাঈদ নিহত হন ১৬ জুলাই। আর তাঁর ছেলে বাড়ি থেকে বের হয় ১৮ জুলাই দুপুরে। এরপর সে মডার্ন মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। তিনি শুনেছেন, তার ছেলের পায়ে পুলিশ গুলি করেছে। এ কারণে সে পালাতে পারেনি। ওই দিন রাতে তাকে ফোন করে বলা হয়েছিল, তার ছেলে পুলিশি হেফাজতে আছে। পরদিন ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ছেলেটিকে ছেড়ে না দিয়ে জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

রংপুরের আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরকে ১৯ জুলাই আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটনের তাজহাট আমলি আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।

আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ওই দিন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।
সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি গত শনিবার (২৭ জুলাই) প্রথম আলোকে বলেন, আবু সাঈদের বুক ও পেট ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল।

আবু সাঈদ যে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন, তা ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট বোঝা যায়। তাহলে অল্প বয়সী এই শিক্ষার্থীকে কীভাবে এই হত্যা মামলার আসামি করা হলো? তার বয়স কীভাবে ১৯ উল্লেখ করা হলো? পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে এ প্রশ্নের কোনো জবাব পাননি সাংবাদিকরা।

তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুরের তাজহাট থানার উপপরিদর্শক জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলে, গ্রেপ্তারের সময় বয়স যাচাই করার সুযোগ হয়নি। পরে জেনেছে, ছেলেটির বয়স ১৭ বছরের মতো হবে।

ছেলেটির বাবা বলেন, তার ছেলে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু পুলিশ তাকে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আসামি করে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। তিনি শুনেছেন, তার ছেলে অসুস্থ। কারাগারে নেওয়ার পর তিন দিন পরিবারসহ সেখানে গেছেন। কিন্তু তাদের দেখতে দেওয়া হয়নি।

এই ঘটনার ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় ১ আগস্ট ছেলেটিকে জামিন দেয়া হয়েছে।


তথ্যসূত্র:
১. আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কিশোর গ্রেপ্তার, ১২ দিন ধরে কারাগারে
– https://tinyurl.com/95nf2mzf

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত
পরবর্তী নিবন্ধহামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার শাহাদাত বরণের ঘটনায় ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের শোকবার্তা