জায়োনিস্ট ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় গাজা উপত্যকা জুড়ে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন মুজাহিদগণ। এতে গাজা স্ট্রিপের সমস্ত ফ্রন্ট লাইনে দখলদার ইসরাইলের “অজেয়(!)” বাহিনী ব্যাপক ধ্বংস ও ভারী ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
সশস্ত্র ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী আল-কাসসাম ব্রিগেডের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ আগস্ট শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায়, জায়োনিস্ট বাহিনীর একটি বড় দলকে মুজাহিদগণ ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। গাজা শহরের দক্ষিণ-পূর্ব আল-জায়তুন এলাকার দক্ষিণে একটি ভবনে ৫টি ট্যাংঙ্ক এবং ২টি বুলডোজার দ্বারা সজ্জিত জায়োনিস্ট বাহিনীর উক্ত দলটিকে মুজাহিদগণ প্রলুব্ধ করতে সক্ষম হন। শত্রু বাহিনী আসার আগেই মুজাহিদগণ উক্ত ভবনটিকে বিস্ফোরক ডিভাইস দ্বারা সজ্জিত করেন।
জায়োনিস্ট বাহিনী বুবি ফাঁদে পড়ার পর, মুজাহিদগণ বিল্ডিংটিতে ইনস্টল করে রাখা ক্যামেরার মাধ্যমে শত্রুদের পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। আর জায়োনিস্ট সৈন্যরা ভবনটির নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশের সাথে সাথেই মুজাহিদগণ ডিভাইসগুলিকে দূর থেকে বিস্ফোরিত করেন। এতে বহু সংখ্যক জায়োনিস্ট সৈন্য হতাহত হয়।
তবে জায়োনিস্ট বাহিনী হতাহতের সঠিক তথ্য গোপন করতে দাবি করে যে, ঘটনাস্থলে বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণে ১ সৈন্য তাৎক্ষণিক নিহত হয়েছে। পরে ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে যে, এই হামলায় ৩ সৈন্য নিহত হয়েছে এবং ৪ সৈন্য গুরুতর আহত সহ ১২ জায়োনিস্ট আহত হয়েছে। পরে মৃত ও আহতদের দুটি হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেয় ইসরায়েলী বাহিনী।
এদিন রাফাহ শহরের আল-সুলতান এলাকায়ও একটি জায়োনিস্ট দলকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানান মুজাহিদগণ। এসময় মুজাহিদদের স্নাইপার হামলায় ১ জায়োনিস্ট সৈন্য নিহত হয়।
আল-কাসসাম নিশ্চিত করেছে যে, দলটির মুজাহিদগণ ঐদিন গাজা উপত্যকার দক্ষিণ খান ইউনুস শহরের হামাদ এলাকায়ও ২টি সামরিক অপারেশন পরিচালনা করছেন। প্রথমটি শহরের পশ্চিমে একটি টানেলে জায়োনিস্ট সৈন্যদের প্রলুব্ধ করার পর টানেলটি বিস্ফোরক ডিভাইস দ্বারা সেনাদের উপর ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় হামলাটি চালানো হয় শহরের উত্তরে জায়োনিস্ট বাহিনীর ২টি মারকাভা ট্যাংক লক্ষ্য করে, যেখানে মুজাহিদগণ ২টি “আল-ইয়াসিন ১০৫” শেল দিয়ে ট্যাংক দুটিকে সফল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। পরে জায়োনিস্ট বাহিনী তাদের হতাহত সেনাদের সরিয়ে নিতে হেলিকপ্টারের সহায়তা নেয়।
এমনিভাবে গত ২৫ আগস্ট রবিবার বিকালে, দেইর আল-বালাহ শহরের পূর্বে জায়োনিস্ট বাহিনীর একটি দলকে ফাঁদে ফেলেন মুজাহিদগণ। জায়োনিস্ট বাহিনী ভবনটিতে মুজাহিদদের অস্বাভাবিক গতিবিধি লক্ষ্য করে এবং সেখানে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ড্রোন প্রেরণ করে। এসময় জায়োনিস্ট বাহিনী ড্রোনের সাহায্যে ভবনের ভিতরে একটি সুড়ঙ্গ চিহ্নিত করে, এবং কোনো মুজাহিদের সন্ধান না পেয়ে ভবনটিকে নিজেদের জন্য নিরাপদ মনে করে।
ভবনটি নিরাপদ কিনা তা আরও নিশ্চিত হতে একটি প্রজেক্টাইল নিক্ষেপ এবং কুকুর পাঠানো হয়। এরপর জায়োনিস্ট বাহিনীর ২০২ তম ব্যাটালিয়নের প্যারাসুট ব্রিগেডের সদস্যরা ভবনে প্রবেশ করে। ভবনে প্রবেশ করার পর কোনো কিছুই না ঘাটায় জায়োনিস্ট দলটি টানেলের দিকে অগ্রসর হয় এবং কাছাকাছি আসা মাত্রই বিকট শব্দে একটি বিস্ফোরক ডিভাইস বিস্ফোরিত হয়। এতে প্যারাসুট ব্রিগেডের কমান্ডার অমিত সহ বেশ কিছু জায়োনিস্ট সৈন্য ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
এদিকে গত ২৬ আগস্ট সোমবার, খান ইউনুসের উত্তর-পূর্ব আল-কাররা এলাকায় একটি ভবনে অবস্থান নেওয়া জায়োনিস্ট সৈন্যদের বিরুদ্ধে গুণগত সফল অ্যাম্বুশ করেন মুজাহিদগণ। আল-কাসসাম ব্রিগেডের যোদ্ধারা দু’দিক থেকে ভবনটিকে ২টি TBG শেল দ্বারা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। এতে ভবনের ভিতর আটকা পড়া অন্তত ২৩ জায়োনিস্ট সৈন্য হতাহত হয়।
এরপর হতাহত সেনাদের উদ্ধারে উক্ত এলাকায় এসে পৌঁছায় জায়োনিস্ট বাহিনীর অন্য একটি দল। এসময় তারা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করে এবং তাতে কোনো মুজাহিদ আছে কিনা তা অনুসন্ধানের জন্য ৫ জায়োনিস্ট সৈন্য সুড়ঙ্গে প্রবেশ করে।
অপরদিকে মুজাহিদগণ জায়োনিস্ট বাহিনীর এই দলটির আসার সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই আগে থেকে সুড়ঙ্গে বিস্ফোরক ডিভাইস স্থাপন করে রাখেন। ফলে জায়োনিস্ট বাহিনীর ৫ সদস্য সুড়ঙ্গ ঢুকা মাত্রই মুজাহিদগণ বুবি-ট্র্যাপিং করে উক্ত বিস্ফোরকগুলোর বিস্ফোরণ ঘটান। এতে সুড়ঙ্গে অনুপ্রবেশকারী ৫ জায়োনিস্ট সৈন্য হতাহতের শিকার হয়।