ক্রসফায়ার দেওয়ার জন্য বিশেষ টিম করা হয়েছিল

0
254

খুলনা অঞ্চলের এক ‘চরমপন্থী’ নেতাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০০৩ সালে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় খুলনার তখনকার এসপিকে। শুরুতে সে রাজি না হলেও পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে বাধ্য হয়। তবে ক্রসফায়ার করতে কোনো পুলিশ সদস্যকে রাজি করানো যাচ্ছিল না।

শেষে একজন কনস্টেবল রাজি হলে তাকেসহ ‘চরমপন্থী নেতা’ ও এসপিকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি নির্জন স্থানে। সেখানে ‘চরমপন্থী নেতা’-কে গুলি করার আগমুহূর্তে কনস্টেবল ফের বেঁকে বসে। তখন এসপি তাকে আবারও বুঝিয়ে রাজি করালে সে বলে, ‘আমি গুলি করছি, কিন্তু সব দায়দায়িত্ব আপনার।’ এসপি দায় নিতে রাজি হলে কনস্টেবল বন্দুকের ট্রিগার চাপে।

সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্যে ক্রসফায়ারের এমন স্মৃতির কথা জানা গেছে।

ক্রসফায়ারের ইতিহাসে ২০০৩ সালে খুলনার ক্রসফায়ারই সর্বপ্রথম। এর পরের বছর ২০০৪ সালে গঠন করা হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব ব্যাপক ক্রসফায়ার দিতে শুরু করলে আলোচনা তৈরি হয়।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর র‌্যাবকে দিয়ে রাজনৈতিক কিলিং মিশন শুরু করে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষ ‘বন্দুকযুদ্ধে’র নামে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের পর রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দমনে র‌্যাবকে ব্যবহার শুরু করে সরকার। ক্রমে এর মাত্রা বাড়তে থাকে।

পরে ক্রসফায়ারের পাশাপাশি শুরু করা হয় গুম। গুম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, গুম কমিশনে জমা পড়া এক হাজার ৬০০টি গুমের অভিযোগের মধ্যে ৩৮৩টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করছে কমিশন। এসব অভিযোগের মধ্যে র‌্যাবের বিরুদ্ধেই রয়েছে ১৭২টি। আর সিটিটিসির বিরুদ্ধে ৩৭টি, ডিবির বিরুদ্ধে ৫৫টি, ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে ২৬টি, পুলিশের বিরুদ্ধে ২৫টি এবং অন্য সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ৬৮টি গুমের অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগের ঘটনায় এরই মধ্যে গুম কমিশন জানতে পেরেছে গ্রেপ্তার সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, পুলিশের এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী, অতিরিক্ত এসপি আলেপ উদ্দিনসহ আরো অনেকের নাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্রসফায়ার করতে অনেক পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তাকে রাজি করানো যেত না। এ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভ্যন্তরে এক ধরনের অসন্তোষ ছিল। ফলে ক্রসফায়ারের জন্য র‌্যাব ও ডিবিতে আলাদা টিম গঠন করা হয়। টিমটি অলিখিত হলেও ক্রসফায়ারে পারদর্শীদের আলাদা নামের তালিকা ছিল। কোথাও ক্রসফায়ারের প্রয়োজন হলে ডাক পড়ত ওই কর্মকর্তা ও সদস্যদের। এদের অনেকে বিপিএম, পিপিএম পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রসফায়ারের প্রয়োজনে ডেকে পাঠানো হতো ঢাকার টিমকে। আর ক্রসফায়ারের পর সাজানো হতো একই গল্প—আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ‘বন্দুকযুদ্ধ’।


তথ্যসূত্র:
১. ক্রসফায়ারের বিশেষ টিম করেছিল আ. লীগ সরকার
– https://tinyurl.com/m8mw8b4

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধপেশাগত ও দ্বীন বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন ইমারতে ইসলামিয়ার ২৩৫ জন পুলিশ সদস্য
পরবর্তী নিবন্ধচিন্ময় কৃষ্ণসহ ১৭ ইসকন নেতার ব্যাংক হিসাব জব্দ