
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে স্বাস্থ্য খাত প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার অন্তত ৯৪% হাসপাতাল আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর। ২৩ মে, শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ।
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক আগ্রাসনে গাজার ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন চরম সংকটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও জাতিসংঘ জানায়, অব্যাহত হামলা, মানবিক সহায়তার ঘাটতি, খাদ্য ও জ্বালানির অভাবে গাজার হাসপাতালগুলো একে একে অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
গাজা উপত্যকার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১৯টি কিছুটা কার্যকর অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি হাসপাতাল বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দিলেও বাকি সাতটি কেবল জরুরি চিকিৎসা দিতে পারছে। বর্তমানে পুরো গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষের জন্য মাত্র ২০০০টি হাসপাতাল বেড বিদ্যমান, যা প্রয়োজনের তুলনায় ভয়াবহভাবে অপ্রতুল। নতুন করে ঘোষিত নিরাপদ অঞ্চল ও নিরাপত্তা সংকটের কারণে এই বেডেরও ৮৫০টি হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সাতদিনে গাজায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওপর ২৮টি হামলার রেকর্ড করেছে WHO। গত সপ্তাহে চারটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল— কামাল আদওয়ান, ইন্দোনেশিয়া হাসপাতাল, হামাদ হাসপাতাল ফর রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড প্রোস্টেটিকস এবং ইউরোপিয়ান গাজা হাসপাতাল— বর্বর ইসরায়েলি বিমান হামলায় সম্পূর্ণভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
উত্তর গাজায় এখন কার্যত কোনো হাসপাতাল নেই। কেবলমাত্র আল-আওদা হাসপাতাল আংশিকভাবে চালু রয়েছে, যা বর্তমানে একটি ট্রমা স্ট্যাবিলাইজেশন পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছে। তবে এ হাসপাতালকেও গত কয়েকদিনে দুইবার আক্রমণ করা হয়েছে।
২১ মে, বুধবার হাসপাতালের তৃতীয় তলায় গোলাবর্ষণে একজন কর্মী আহত হন। ২৩ মে, শুক্রবার হামলায় তৃতীয় ও চতুর্থ তলা আবারো ক্ষতিগ্রস্থ হয়, এতে আরও দুই স্বাস্থ্যকর্মী আহত হন এবং ট্রায়াজ টেন্টে আগুন ধরে যায় ধ্বংস হয় ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অ্যাম্বুলেন্স।
দক্ষিণ গাজার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স, আল-আমাল এবং আল-আকসা হাসপাতালগুলো আহত ও বাস্তুচ্যুত মানুষের অতিরিক্ত চাপে পড়েছে। ইউরোপিয়ান গাজা হাসপাতাল ১৩ মে’র হামলার পর থেকে বন্ধ রয়েছে, ফলে গাজায় স্নায়ু, হৃদরোগ ও ক্যান্সার চিকিৎসা এখন পুরোপুরি বন্ধ।
গাজায় স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিপর্যয় আজ কেবল একটি মানবিক সংকট নয়, বরং এক গভীর নৈতিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। গাজায় বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা শুধু একটি যুদ্ধ নয়, এটি এক নিঃশব্দ গণহত্যা। এই সংকট কেবল একটি ভূখণ্ডের নয়, এটি গোটা মানবতার বিবেকের প্রশ্ন। যুদ্ধবিরতি, নির্বিঘ্নে সহায়তা পৌঁছানো এবং স্বাস্থ্যসেবা রক্ষা এখন সময়ের দাবি।
তথ্যসূত্র:
1.At least 94% of hospitals in Gaza damaged or destroyed: UN
– https://tinyurl.com/n6k9e8c6
2. Health system at breaking point as hostilities further intensify in Gaza, WHO warns
– https://tinyurl.com/ype5wtzm