ভারত, পাকিস্তান, ইরান এমনকি চীনের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ইমারতে ইসলামিয়া

0
131

চার বছর আগে কাবুল পুনর্দখলের পর তালিবান মুজাহিদিনের হাতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান। আজও কোনো রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও, একে উপেক্ষা করার ক্ষমতা হারিয়েছে আঞ্চলিক শক্তিগুলো। ভারতের মতো চিরবিরোধী শক্তি থেকে শুরু করে পাকিস্তান, ইরান ও চীনের মতো প্রভাবশালী প্রতিবেশী পর্যন্ত তালিবান নেতৃত্বাধীন ইমারতে ইসলামিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এ যেন স্বীকৃতি না দিয়েও বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ারই নামান্তর।

বিশেষ করে ইমারতে ইসলামিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি হাফিযাহুল্লাহ সম্প্রতি একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়েছেন, যা ইমারতে ইসলামিয়াকে আঞ্চলিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। পাকিস্তান, ভারত, ইরান ও চীনের মতো পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে মুত্তাকির অংশগ্রহণ প্রমাণ করছে, তালিবান সরকারকে বাদ দিয়ে এখন আর দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক হিসাব কষা সম্ভব নয়।

ভারত একসময় তালিবানকে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের হাতের পুতুল মনে করত, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর কাবুলে দূতাবাসও বন্ধ করে দেয় দিল্লি। কিন্তু এখন সেই ভারতই ২০২২ সালের মধ্যে কাবুলে দূতাবাসে ‘প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ’ পাঠিয়েছে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য তালিবান এখন এক বিরাট কৌশলগত চ্যালেঞ্জ। তেহরিক-ই-তালিবানের হামলার সংখ্যা বেড়েছে, যার জন্য ইসলামাবাদ আফগান ভূখণ্ডকে দায়ী করছে। যদিও ইমারতে ইসলামিয়া এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। সীমান্তে বাণিজ্য বাধা, আফগান শরণার্থীদের জোরপূর্বক বহিষ্কার, এসবই দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনার ইঙ্গিত দেয়। এর মধ্যেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশহাক দার কাবুল সফর করেছেন এবং মুত্তাকি হাফিযাহুল্লাহর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনাও করেছেন, যা সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তালিবান সরকারের ওপর ইসলামাবাদের নির্ভরতা তুলে ধরে।

ইরানের সঙ্গেও এখন বাস্তববাদী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে ইমারতে ইসলামিয়া। ১৯৯৮ সালের মাজার-ই-শরীফ হত্যাকাণ্ডের পর সম্পর্কের অবনতি হলেও, বর্তমান সময়ে সীমান্ত নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও পানিবণ্টন ইস্যুতে ইরান তালিবানের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতায় যাচ্ছে।

চীন এখনো স্বীকৃতি দেয়নি ঠিকই, তবে তালিবানের সঙ্গে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্পষ্ট করছে—বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, খনিজ সম্পদ আহরণসহ নানা বিষয়ে বেইজিং এখন কৌশলগতভাবে তালিবান সরকারের সাথে কাজ করতে চায়। আফগানিস্তানের ভূ-অবস্থান এবং সম্পদ চীনকে এই অঞ্চলে এক নতুন মিত্র খুঁজে পেতে বাধ্য করছে।

আজকে যে তালিবান সরকারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, সেটি একপ্রকার আনুষ্ঠানিকতার প্রশ্ন মাত্র। আসল সত্য হলো, ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানই এখন আফগান ভূখণ্ডের একমাত্র কার্যকর সরকার, যার সঙ্গে উপেক্ষা নয় বরং সমঝোতার দিকেই ঝুঁকছে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো।


তথ্যসূত্র:
1. Guess who India, Pakistan and Iran are all wooing? The Taliban
– https://tinyurl.com/2fxp3u46

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধইয়েমেনে মুজাহিদদের অতর্কিত আক্রমণে ২ শত্রু সেনা হতাহত
পরবর্তী নিবন্ধএনসিপির সভায় নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা