
দক্ষিণ গাজায় বর্বর ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জনকে হারিয়েছেন যে মা, সেই ডা. আলা আল-নাজ্জার বেদনা চেপে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন অন্যদের। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে সন্ত্রাসী ইসরায়েলি বিমান হামলায় একসঙ্গে ৯ সন্তান হারিয়েছেন ফিলিস্তিনি শিশু চিকিৎসক ডা. আলা আল-নাজ্জার। হৃদয়বিদারক এই ঘটনার পরও তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে।
নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আহমদ আল-ফাররা সিএনএনকে বলেছেন, ডা. নাজ্জার তার সন্তানদের হারিয়েও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে তিনি স্বামী ও বেঁচে যাওয়া একমাত্র সন্তানকে দেখতে যাচ্ছেন। ২৩ মে, শুক্রবার নাজ্জার তার ১০ সন্তানকে বাড়িতে রেখে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কাজ করতে গিয়েছিলেন। তার কয়েক ঘণ্টা বাদে সাত শিশুর দেহ হাসপাতালে আনা হয়, যাদের বেশিরভাগই মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়েছিল।
গাজা সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ডা. নাজ্জারের বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার এই সাত শিশু শহীদ হয়। এই চিকিৎসকের ৭ মাস বয়সী ও ১২ বছর বয়সী আরেক সন্তান এখনো নিখোঁজ রয়েছে। তারাও শহীদ হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে।
সিএনএন লিখেছে, তার ১০ সন্তানের মধ্যে ১১ বছর বয়সী আদমই একমাত্র বেঁচে গেছে। ডা. নাজ্জারের স্বামী হামদিও একজন চিকিৎসক, যিনি এই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। আদম একটি হাতে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যে তার আরেকটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। তার বাবা হামদি এখনও গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন।
“তাদের নয় সন্তান শহীদ হয়েছে: ইয়াহিয়া, রাকান, রাসলান, জিবরান, হাওয়া, রিভাল, সায়দেন, লুকমান ও সিদরা। এটাই গাজায় আমাদের চিকিৎসাকর্মীদের বাস্তবতা। এই বেদনা ভাষায় প্রকাশ করার মতন নয়। গাজায় কেবল স্বাস্থ্যকর্মীদের নিশানা করা হচ্ছে না- ইসরায়েলের আগ্রাসন আরও ভয়াবহ, পুরো পরিবারকেই শেষ করে দিচ্ছে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউসুফ আবু আল-রিশ বলেন, ডা. নাজ্জার তার সন্তানদের বাড়িতে রেখে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন। তিনি সেই সব অসুস্থ শিশুদের দেখভাল করেন, যাদের নাসের হাসপাতাল ছাড়া আর কোনো আশ্রয় নেই।
রিশ বলেন, তিনি হাসপাতালে পৌঁছানোর পর নাজ্জারকে ‘দৃঢ়, শান্ত, ধৈর্যশীল ও স্থির’ দেখেছেন, যার চোখে ছিল বাস্তবতা মেনে নেওয়ার দৃষ্টি। তার কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল কেবল আল্লাহর জিকির ও ক্ষমা প্রার্থনার ধ্বনি।
৩৮ বছর বয়সী ডা. নাজ্জার একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, কিন্তু গাজার বেশিরভাগ চিকিৎসকের মতই ইসরায়েলের প্রচণ্ড আক্রমণের সময় তিনি জরুরী বিভাগে কাজ করছেন। সিভিল ডিফেন্স ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের একটি এলাকায় তাদের পারিবারিক বাড়িটি ইসরায়েলি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বার্তায় ডা. নাজ্জারকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছে, ‘তিনি সেই অবিচল ফিলিস্তিনি নারী ও চিকিৎসক, যিনি নিজের বেদনা চেপে রেখে অন্যের সেবা করে যাচ্ছেন। এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে চালানো একটি অপরাধ।’
তথ্যসূত্র:
1. Dr. Ala, a female doctor in Gaza, continues to provide services despite losing 9 children
– https://tinyurl.com/4n49rya5
2. Gaza doctor Alaa al-Najjar loses nine of her 10 children in Israeli attack
– https://tinyurl.com/t3dwprxz