ভিডিও || ওআইসি সম্মেলনে আমির খান মুত্তাকির গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ: মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যের আহ্বান

2
314

সম্প্রতি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৫১তম বৈঠকে ইমারতে ইসলামিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমির খান মুত্তাকি হাফিযাহুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি মূহুর্তে একত্রিত হয়েছি, যখন বিশ্ব, বিশেষ করে আমাদের অঞ্চল, গভীর পরিবর্তন ও রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, এ সময় আমাদেরকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’

বিশেষকরে গাজা ট্র্যাজেডি ও অন্যান্য বিশ্বব্যাপী সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গাজা ট্র্যাজেডির সমাপ্তির আগেই আমাদের অঞ্চলে নতুন একটি সংকট দেখা দিয়েছে, আর তা হলো—ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসন!’

তিনি ইসরায়েলি সরকারের কর্মকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবিক রীতিনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করে সতর্ক করেন যে, এর অনবরত আগ্রাসন শুধু একটি গুরুতর মানবিক ট্র্যাজেডি নয়, বরং একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও এক বিপজ্জনক হুমকি। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলিকে অবিলম্বে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানায়, যার মধ্যে ইরানের সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি বলেন, ‘এই কর্মকাণ্ডগুলি আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতি, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রগুলির আঞ্চলিক অখণ্ডতার স্পষ্ট লঙ্ঘন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলটি আর অতীতের মতো আরও যুদ্ধ সহ্য করতে পারবে না। অঞ্চলটি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের কারণে ক্লান্ত এবং নতুন সংকটের জন্য প্রস্তুত নয়।’ তিনি বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘বিশ্ব এক মেরুর ব্যবস্থা থেকে একটি নতুন কাঠামোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে আঞ্চলিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই সুযোগগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। এটি আমাদের ইসলামি বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ প্রদান করছে।’

এই সময় তিনি আফগানিস্তানের চলমান উন্নতির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে সংঘাত, বিদেশী হস্তক্ষেপ এবং অস্থিতিশীলতা সহ্য করার পর, আফগানিস্তান ইসলামি ব্যবস্থার অধীনে শান্তি, পুনর্গঠন এবং স্বাধীনতার এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। আল্লাহর করুণা, আজ আফগানিস্তান ইসলামি নীতি অনুসারে ঐক্য, নিরাপত্তা, প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কূটনৈতিক পুনরুজ্জীবনে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করছে।’

তবে, আফগানিস্তান বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলির আরোপিত বেআইনি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন। তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের জাতীয় সম্পদ জব্দ করেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।’ এর পাশাপাশি, তিনি ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে আফগানিস্তানের রিজার্ভের মুক্তি এবং ইমারতে ইসলামিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তান ইসলামি মূল্যবোধের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে, তার বৈদেশিক সম্পর্ককে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পৃক্ততার নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে চায়। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা সদস্য রাষ্ট্রগুলির সহায়তায়, আফগানিস্তান এখন একটি স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছে এবং এটি আঞ্চলিক সংযোগ, বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।’

বক্তব্যের শেষে তিনি আবারও ফিলিস্তিন ও ইরানে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানান।

ভিডিওটি ইউটিউব থেকে দেখুন:


তথ্যসূত্র:
1. Speech by IEA-Foreign Minister at the 51st OIC Ministerial Meeting
– https://tinyurl.com/mptp336v

2 মন্তব্যসমূহ

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধত্রাণ সংগ্রহকারীদের ওপর চলছে ইসরায়েলি বর্বরতা, গাজায় শহীদের সংখ্যা ছাড়াল ৫৬ হাজার
পরবর্তী নিবন্ধইরানের গিলানে সন্ত্রাসী ইসরায়েলের হামলায় নিহত ৯, আহত অন্তত ৩৩