মুসলিমদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে নির্বাসন দিচ্ছে ভারত

0
69

কোনোরকম বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াই শতশত ভারতীয়কে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছে শত শত মানুষকে কোনোরকম বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াই বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এর নিন্দা জানিয়েছেন উচ্চ পর্যায়ের আইনজীবীরা। তারা বলেছে এভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে মানুষ পাঠানো অবৈধ। যদিও নয়াদিল্লির দাবি বহিষ্কৃত লোকজন অবৈধ অভিবাসী। সম্প্রতি কথিত এমন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বেশ চড়াও হয়েছেন ভারতের উগ্ৰ হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের প্রধান নরেন্দ্র মোদি। বিশেষ করে যারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশের কথিত অভিবাসী তাদের বিরুদ্ধে বেশ কঠোর দিল্লি।

মোদি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতারাও এসব কথিত অভিবাসীদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের এই পদক্ষেপ প্রায় ২০ কোটি ভারতীয় মুসলমানের মধ্যে বেশ উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এরমধ্যে বাংলাভাষীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এখানে বলে রাখা ভালো ভারতের পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশে বাংলাভাষীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রবীণ ভারতীয় মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মান্ডার বলেছেন, ভারত সরকারের এমন পদক্ষেপে দেশের পূর্বাঞ্চলের মুসলিমরা বেশ আতঙ্কিত। এর মাধ্যমে লাখ লাখ ভারতীয় মুসলিমকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে বর্তমান ভারত সরকার।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ সীমান্তই ভারত বেষ্টিত। ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার পতন হওয়ায় ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের বরফ আরও শক্ত হয়েছে। এদিকে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কথিত সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নাগরিক নিহত হওয়ার পর অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করে দিল্লি সরকার। কেননা ২৪ এপ্রিলের ওই হামলায় নিহত বেশির ভাগই ছিল হিন্দু। ওই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়। যার ফলে দুই দেশের মধ্যে ৪ দিনের সংঘাত হয় এবং তাতে ৭০ জনের বেশি নিহত হয়।

এদিকে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বাসিন্দা রহিমা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, মে মাসের শেষের দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাকে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যায়। যদিও তিনি ও তার পরিবার, তাদের গোটা জীবন ভারতেই কাটিয়েছে। তিনি বলেন, আমি আমার পুরো জীবন এখানেই কাটিয়েছি। আমার বাবা-মা, দাদা-দাদিরাও এখানের বাসিন্দা। এরপরেও তাকে কেন জোরপূর্বক সীমান্তে ঠেলে দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। রহিমা বেগমের সঙ্গে আরও পাঁচজনকেও আটক করে সীমান্তে নিয়ে যায় পুলিশ। যাদের সকলেই মুসলমান। এদের সবাইকে জোর করে অন্ধকারে ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ। রহিমা বেগম এএফপিকে বলেন, পুলিশ আমাদের দূরের একটি গ্রাম দেখিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে সেদিকে যেতে বলেন। পাশাপাশি আমাদের দাঁড়িয়ে হাঁটতে নিষেধ করেন, যদি এমনটি করা হয় তাহলে পেছন থেকে গুলি করবে বলে ভয় দেখায়।

রহিমা বেগম আরও বলেন, একসময় তারা বাংলাদেশিদের হাতে ধরা পড়েন। তারা তাদেরকে বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করে। এদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করে রহিমা বলেন, তারা আমাদের ভারতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে আমরা যখন সীমান্তে পৌঁছলাম তখন আমাদের লক্ষ্য করে অপর প্রান্ত (ভারত) থেকে গুলি করা হয়। আমরা ভেবেছিলাম এটাই হয়ত আমাদের শেষ দিন, আর হয়ত বাঁচব না। তবে অলৌকিকভাবে রহিমা বেঁচে গেলেন। পরে তাকে চুপ থাকার শর্তে আসামে ফিরে যেতে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে গত মে থেকে এভাবে অন্তত ১৬০০ ভারতীয়কে সীমান্তে ঠেলে দিয়েছে দিল্লি। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ওই সংখ্যা প্রায় ২৫০০।


তথ্যসূত্র:
1.India accused of illegal deportations targeting Muslims
-https://tinyurl.com/2mse4yj5

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানের ৯টি প্রদেশকে সংযুক্ত করতে রেলপথ সম্প্রসারণ প্রকল্পের রূপরেখা প্রণয়ন
পরবর্তী নিবন্ধবুরকিনান জান্তাকে হটিয়ে ২টি সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদিনরা