“বিশ্ব সন্ত্রাসের যৌথ প্রকল্প”: ইসরায়েল-মার্কিন অস্ত্র চুক্তির আড়ালে ফিলিস্তিনি গণহত্যা

0
61

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দখলদার ইসরায়েলের বর্বর সামরিক অভিযানে সরাসরি সহায়তা দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইতোমধ্যেই কমপক্ষে ২২.৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। এই বিশাল অঙ্কের ব্যয় শুধুমাত্র ইসরায়েলকে দেওয়া নিরাপত্তা সহায়তা নয়, বরং ইয়েমেনসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক কর্মকাণ্ডের অর্থনৈতিক বহরও এর অন্তর্ভুক্ত।

তথ্যসূত্র অনুযায়ী, কেবল ইসরায়েলকে সরাসরি দেওয়া সামরিক সহায়তা হিসেবেই আমেরিকা ১৭.৯ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে, যা ১৯৫৯ সালে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক অনুদান শুরুর পর থেকে এক বছরে সর্বোচ্চ সহায়তা। এই সহায়তার মধ্যে রয়েছে গাইডেড বোমা কিট, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ও সরাসরি অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা সহায়তা।

সন্ত্রাসী ইসরায়েলের আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু অস্ত্র ও অর্থই সরবরাহ করছে না, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সরাসরি সামরিক অভিযানে যুক্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষত ইয়েমেনের ওপর চালানো হামলা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক অভিযানগুলোর একটি হয়ে উঠেছে — যা ২০১৬-২০১৯ সালের আইএসবিরোধী বোমাবর্ষণের পর সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধাভিযান। এই অঞ্চলিক মার্কিন সামরিক অভিযানের ব্যয় ৪.৮৬ বিলিয়ন ডলার, যা মূল ২২.৭৬ বিলিয়নের অংশ।

এছাড়া মার্কিন আগ্রাসনের প্রভাব পড়ছে বিশ্ববাণিজ্যেও। ইয়েমেন উপকূল ও রেড সি এলাকায় হুথি প্রতিরোধের কারণে বহু বাণিজ্য জাহাজ বিকল্প পথ ধরতে বাধ্য হচ্ছে বা উচ্চ প্রিমিয়ামে বীমা নিতে হচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২.১ বিলিয়ন ডলার।

এই বিপুল ব্যয়ের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের এক অজানা স্বার্থ জড়িয়ে আছে। মার্কিন সরকার প্রকাশ্যেই বলছে, ইসরায়েল ও মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পুরোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে তারা ইসরায়েলকে নিয়মিত অস্ত্র ও প্রযুক্তি সরবরাহ করে যাবে।

এই তথাকথিত “সামরিক সহায়তা” মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিল্পকে চাঙ্গা রাখার কৌশল। আর এর শিকার হচ্ছে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি মুসলমানরা, যাদের ওপর প্রতিনিয়ত বোমা, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নাম করে চালানো হচ্ছে গণহত্যা।

ইসরায়েলকে “অস্ত্র দিয়ে হত্যাকাণ্ডে মদদদাতা” হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে মানবতার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের বুলি আজ পুরোপুরি ভণ্ডামিতে পরিণত হয়েছে। গাজার শিশু, মা, বৃদ্ধ— কেউই রেহাই পাচ্ছে না এই ইসলামবিদ্বেষী অভিযানের হাত থেকে।

সাম্প্রতিক এই রিপোর্টটি আরও একবার স্পষ্ট করে দেয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে থাকা সম্পর্কটি কেবল কূটনৈতিক নয়, বরং এটি সন্ত্রাসের একটি যৌথ প্রকল্প, যার লক্ষ্য একটাই— ইসলামের শক্তিকে ধ্বংস করা।

ইহুদিবাদী ইসরায়েল ও তার পৃষ্ঠপোষক আমেরিকার এ অমানবিক ব্যয় ও সমর্থন শুধু ফিলিস্তিনিদের ওপরই আগ্রাসন নয়, বরং এটি গোটা মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্বের ওপরই এক সুপরিকল্পিত যুদ্ধ। মুসলিমবিশ্ব যদি এখনো চুপ থাকে, তবে কাল হয়তো শিকার হবে আরও বহু দেশে নিরীহ মুসলমানরা।


তথ্যসূত্র:
1. United States Spending on Israel’s Military Operations and Related U.S. Operations in the Region, October 7, 2023-September 30, 2024
– https://tinyurl.com/3wppwkx6

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাজায় এক দখলদার ইসরায়েলি সেনা নিহত, আহত আরও ৩
পরবর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে রাশিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিলেন মাওলানা গুল হাসান