
আসামের গোয়ালপাড়া জেলার হাসিলা বিল এলাকায় প্রশাসনের বুলডোজার অভিযানে ৭০০টিরও বেশি ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে শত শত মুসলিম পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। প্রশাসন একে ‘অবৈধ বসতি উচ্ছেদ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, স্থানীয়দের মতে এটি মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে পরিচালিত একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিপীড়ন।
গত ১ জুলাই ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য অবজারভার পোস্ট জানায়, ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার পর তীব্র গ্রীষ্ম ও বর্ষার প্রাক্কালে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বহু বাসিন্দা। এর মধ্যেই হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন ৬০ বছর বয়সী জৈতুন নিশা। স্থানীয়দের মতে, এ মৃত্যু বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রতি প্রশাসনের চরম অবহেলার প্রমাণ।
গোয়ালপাড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছে, ‘জমি দখলমুক্ত করতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা বৈধ দাবিদার, তাদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলছে।’ তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পুনর্বাসনের কোনো প্রকৃত উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় অল আসাম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের নেতা অনিনুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সরকার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এখানে বসবাসকারী মানুষের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের বহিরাগত হিসেবে বিবেচনা করছে। অথচ এরা সবাই ভারতীয় নাগরিক, যাদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে।’
তিনি প্রশাসনের ত্রাণ সহায়তার অভাবেরও সমালোচনা করেন এবং জানান, বিশেষ করে শিশুদের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যেসব বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মালিকদের কাছে বৈধ নাগরিকত্বের নথিপত্র থাকলেও প্রশাসন তাঁদের ‘অবৈধ দখলদার’ কিংবা ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
চার সন্তানের মা ফাতিমা বেগম বলেন, ‘আমরা একদিনেই সবকিছু হারিয়েছি—আমাদের ঘরবাড়ি, জিনিসপত্র। আমার বাচ্চারা এখন গরম আর বৃষ্টিতে দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে। আমরা কেবল মর্যাদা ও নিরাপত্তা চাই।’
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক ইমরান হুসেন মন্তব্য করেন, ‘এটি কেবল সম্পত্তির উপর আক্রমণ নয়, আমাদের পরিচয়ের উপরও আক্রমণ। আরও ক্ষতির আগেই আমরা চাই, কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা শোনুক।’
তথ্যসূত্র:
1. Over 700 Muslim Homes Demolished in Assam’s Goalpara; Community Faces Crisis Amid Neglect
– https://tinyurl.com/ahbae7pn