মালি || ১৫০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আল-কায়েদার ব্যাপক আক্রমণ: লক্ষ্যবস্তু ১০টি শহর ও ৪টি শিল্প এলাকা

1
282

আল-কায়েদা পশ্চিম আফ্রিকা শাখা জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (জেএনআইএম), চলতি ২০২৫ সালের ১লা জুলাই, মালিতে বৃহৎ পরিসরে একটি সামরিক অপারেশন পরিচালনা করেছেন। অভিযানটি মালির টিম্বুকটো রাজ্য থেকে শুরু করে রাজধানী বামাকো ও দেশের পশ্চিমাঞ্চলের সিনেগাল সীমান্ত পর্যন্ত প্রশারিত ছিল। প্রাথমিক বিবরণ অনুযায়ী, এই অভিযানে অন্তত ২৫৩ এরও বেশি সৈন্য নিহত এবং আরও কয়েক শতাধিক সৈন্য আহত হয়েছে।

আঞ্চলিক সূত্রমতে, ১লা জুলাই মঙ্গলবার ভোর ৫ টার দিকে, ‘জেএনআইএম’ এর কয়েক হাজার মুজাহিদিন, মালির কয়েস ও সেগু রাজ্য থেকে শুরু করে দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় ১৫০০ কিলোমিটার এরিয়া জুড়ে ১০টি নগর ও ৪টি শিল্প এলাকা সহ কয়েক ডজন সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছেন। মুজাহিদদের সমন্বিত এই আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে নিওনো, ডিবোলি, সান্দারে, গোগুই, কায়েস এবং নিওরো-ডু শহরগুলো। এরমধ্যে কায়েস শহর ছিলো এই অঞ্চলের একটি প্রাদেশিক রাজধানী, শহরটিতে মুজাহিদদের পরিচালিত অভিযানে সরকারি সদর দপ্তর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।

আয-যাল্লাকা মিডিয়া কর্তৃক প্রচারিত তথ্যমতে, মঙ্গলবার মুজাহিদিনরা নিওনো শহরের ৫টি প্রবেশ পথ ও জান্তা বাহিনীর ১টি সামরিক ব্যারাক ও বেশ কিছু চেকপোস্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। শহরটিতে মুজাহিদদের হামলায় অন্তত ৪০ জান্তা সদস্য নিহত হয়েছে এবং আরও কয়েক ডজন সৈন্য আহত হয়েছে, অন্যরা জীবন বাঁচাতে সামরিক ব্যারাক ও শহরের দেয়াল টপকিয়ে পালিয়ে গেছে।

একই সময় কয়েস শহরে মুজাহিদিনরা জান্তা বাহিনীর ২টি সামরিক ব্যারাক, ৫টি সামরিক পোস্ট, ১টি পুলিশ স্টেশন, ১টি সামরিক কারাগার, ১টি শিল্প এলাকা এবং ১টি কারখানা সহ জান্তা বাহিনীর সাথে যুক্ত কয়েকজন মন্ত্রীর বাসভবনে আক্রমণ চালান। এই অভিযানের সময় ২ জন মন্ত্রীর বাসা ধ্বংস করে দেন মুজাহিদিনরা, সেই সাথে পার্কিং-এ থাকা ১১টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শহরটিতে মুজাহিদদের অভিযানে শিল্প এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অন্তত ২৩ জান্তা সদস্য নিহত হয়, এসময় শিল্প এলাকায় কর্মরত ৩ ভারতীয় এবং ১ চীনা কর্মকর্তা সহ ১ জান্তা সদস্যকে মুজাহিদিনরা বন্দী করে নিয়ে যান। শহরটির অন্যান্য স্থানেও মুজাহিদদের পরিচালিত অভিযানে কয়েক ডজন শত্রু সৈন্য নিহত হয়েছে।

এদিকে ২টি শহরে মুজাহিদদের হামলায় ব্যাপক হতাহতের শিকার জান্তা বাহিনীর সহায়তায় শহর ২টিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালাতে শুরু করে রাশিয়ান বাহিনী ও তুর্কি ড্রোনগুলো। এতে ৬ জন মহিলা ও ১০ জন মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেছেন বলে জানা যায়।

এমনিভাবে ‘জেএনআইএম’ এর কাতিবা মাসিনা ব্রিগেডের মাত্র ৩০ জন মুজাহিদ, সেগু অঞ্চলের বাফুলাব শহরের উত্তরে জান্তা বাহিনীর একটি চেকপয়েন্ট এবং তিনটি শিল্পস্থলে আক্রমণ চালান। এসময় মুজাহিদিনরা কয়েক শতাধিক জান্তার বিরুদ্ধে কয়েক ঘন্টা যাবৎ তীব্র লড়াই চালিয়ে যান, এতে অন্তত ৩৬ জান্তা সদস্য নিহত হয় এবং অন্যরা জীবন বাঁচাতে সামরিক পোস্ট ও শিল্প এলাকার নিরাপত্তা দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে মুজাহিদদের হামলায় জান্তা বাহিনীর সামরিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানগুলো ধ্বংস ও পুড়ে যায়।

এই অভিযানের ধারাবাহিকতায় মুজাহিদিনরা তান্ডারি শহরেও জান্তা বাহিনীর ১টি সামরিক ঘাঁটি, ৩টি চেকপয়েন্ট এবং টোগো ভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত জান্তার ১টি শিল্প এলাকায় আক্রমণ চালান। শহরটিতে মুজাহিদদের হামলায় জান্তা বাহিনীর অন্তত ২৮ সদস্য নিহত এবং আরও অসংখ্য সৈন্য আহত হয়। এসময় মুজাহিদিনরা জান্তা বাহিনীর সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেন এবং ৩টি চেকপয়েন্ট ও শিল্প এলাকার নির্মাণ সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ধ্বংস করেন। এছাড়াও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মুজাহিদিনরা গাড়িতে করে গনিমত হিসাবে নিয়ে যান।

এদিন ‘জেএনআইএম’ এর ৫ম একটি দল, কায়েস রাজ্যের উত্তরের গোরজি শহরে জান্তা বাহিনীর সামরিক অবস্থানগুলোতে জটিল আক্রমণ চালান। এতে ৩১ জান্তা সদস্য নিহত হয়।

‘জেএনআইএম’ এর মুজাহিদিনরা মালি-সেনেগাল সীমান্তবর্তী শহর ডিবোলিতেও একটি সামরিক অপারেশন পরিচালনা করছেন। অভিযানটি শহরে জান্তা বাহিনীর ১টি সামরিক ঘাঁটি এবং ১টি পুলিশ স্টেশন লক্ষ্য করে চালানো হয়। অভিযানের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, ডিবোলিতে মুজাহিদদের হামলায় অন্তত ১১ জান্তা সদস্য নিহত হয়েছে।

মুজাহিদদের সমন্বিত এই অভিযানগুলো মালির রাজধানী বামাকো ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলেও ব্যাপক আঘাত হেনেছে। কেননা মঙ্গলবার, মালির কেন্দ্রীয় মনোন্ডো রাজ্যও মুজাহিদদের ব্যাপক হামলার শিকার হয়েছে। এদিন মুজাহিদিনরা রাজ্যটির ২টি শহরে জান্তা বাহিনীর একাধিক সামরিক ঘাঁটি ও অবস্থানে ভারী আক্রমণ চালিয়েছেন। এতে জান্তা বাহিনীর অন্তত ৪৫ শত্রু সৈন্য নিহত হয় এবং আরও অসংখ্য সৈন্য আহত হয়। এসময় অনেক সৈন্য জীবন বাঁচাতে সামরিক ঘাঁটি ও অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়।

মঙ্গলবার সকালে মুজাহিদদের তীব্র আক্রমণের শিকার হয় রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনীও। মুজাহিদিনরা এদিন সকালে টিম্বুকটো রাজ্যের বের শহরে রাশিয়ান বাহিনী ও জান্তা বাহিনীর যৌথ একটি সামরিক ঘাঁটিতে অতর্কিত আক্রমণ চালান। ঘাঁটিতে মুজাহিদদের তীব্র আক্রমণে রাশিয়ার (আফ্রিকান-কর্পস) এর ১৮ সৈন্য এবং মালির জান্তা বাহিনীর ২৬ সৈন্য নিহত হয়।

আয-যাল্লাকা মিডিয়া কর্তৃক ৩ জুলাই পর্যন্ত প্রকাশিত ‘জেএনআইএম’ এর ৬টি বিবৃতি থেকে জানা যায়, গত ১লা জুলাই মুজাহিদদের পরিচালিত সমন্বিত অপারেশনে জান্তা ও রাশিয়ার অসংখ্য সৈন্য নিহত এবং বহু সংখ্যক সৈন্য আহত হয়েছে। মুজাহিদিনরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন ৫টি সামরিক ব্যারাক ও কয়েক ডজন সামরিক অবস্থান, ধ্বংস করেছেন আরও অসংখ্য শত্রু সামরিক অবস্থান। আর কায়েস ও নিওনো শহর অবরোধ করার পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন।

মুজাহিদিনরা এই অভিযানের মাধ্যমে ধ্বংস করেছেন শত্রু বাহিনীর ১০০ এরও বেশি সামরিক যানবাহন, শতাধিক মোটরসাইকেল এবং অন্যান্য অসংখ্য সামরিক সরঞ্জাম। এছাড়াও মুজাহিদিনরা গনিমত হিসাবে অর্জন করেছেন ৩১টি যানবাহন ও ১৯টির বেশি মোটরসাইকেল।
পাশাপাশি ৫০টি ক্লাশিনকোভ, ৫টি আরপিজি, ১টি পিকে, ১টি 6pmm মর্টার, ৯৩টি গোলাবারুদ বাক্স এবং অন্যান্য বহু সামরিক সরঞ্জাম।

উল্লেখ্য যে, মালিতে মঙ্গলবার মুজাহিদদের অভিযানটি ছিলো সাম্প্রতিক ইতিহাসে ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দ্বারা পরিচালিত অভিযানগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ অভিযান। এদিন কয়েক ঘন্টার মধ্যে ‘জেএনআইএম’ এর শত শত মুজাহিদিন মালির হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এক ডজনেরও বেশি শহরে জান্তা ও রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন। মুজাহিদের পক্ষ থেকে এমন বৃহৎ পরিসরে সামরিক অপারেশন ইতিপূর্বে আফগানিস্তান ও সিরিয়া বিজয়ের সময়ই বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে।

১টি মন্তব্য

  1. আল্লাহ তায়ালা ভাইদের শাহাদাহ কবুল করুন বিজয়কে স্থায়ী করুন।ইমারাহ প্রতিষ্ঠাতে তরান্বিত ও সহজ করুন। آمين يا رب العالمين

    মিডিয়ার ভাইদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারা যদি সামান্য কষ্ট করে আমাদের জন্য নিয়মিত বিজিত অঞ্চল গুলো ম্যাপ আকারে এখানে দিতেন তাহলে আমরা আরো উদ্দীপ্ততা এবং প্রানবন্ততার সাথে দ্বীনের পথে লড়ার প্রেরনা পেতাম ان شاء الله

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতের দখলকৃত কাশ্মীরের কারাগারে মুসলিমদের উপর অমানবিক নির্যাতন
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে জাতিসংঘের সমকামী দূত নিয়োগ; সমকামী পার্টনারসহ থাকার জন্য চাওয়া হয়েছে আ্যগ্রিমো