অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ‘চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ’ হওয়ায় মুম্বাইয়ে ট্রেন বিস্ফোরণ মামলার ১২ মুসলিমকে বেকসুর খালাস

0
67

ভারতের মুম্বাইয়ে ২০০৬ সালের ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় দণ্ডিত ১২ মুসলিমকে ১৮ বছর পর বেকসুর খালাস দিয়েছে মুম্বাই হাইকোর্ট। আদালত রায়ে জানিয়েছে, তদন্তকারী সংস্থা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৫ সালে বিচারকরা অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। কিন্তু ২১ জুলাই (সোমবার), মুম্বাইয়ের হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে দেয়, রায়ে বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ‘চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ’ হয়েছে।

২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বাইয়ের পশ্চিম রেলপথের লোকাল ট্রেনে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ১৮৯ জন নিহত হন এবং আহত হন আরও আট শতাধিক মানুষ। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার প্রায় ৯ বছর পর ২০১৫ সালে বিশেষ আদালত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। তবে ২১ জুলাই (সোমবার), বম্বে হাই কোর্টের দুই বিচারপতি—আনিল কিলোর ও শ্যাম চাঁদক—রায় বাতিল করে বলেন, ‘যথাযথ প্রমাণের ঘাটতির কারণে সাজা বাতিল করা হলো।’ যদিও এখনো পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়নি।

দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে যাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তারা হলেন কামাল আনসারি, মোহাম্মদ ফয়সাল আতাউর রহমান শেখ, এহতেশাম কুতুবউদ্দিন সিদ্দিকি, নাভিদ হুসেন খান ও আসিফ খান।

আর যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত সাতজন হলেন তানভীর আহমেদ মোহাম্মদ ইব্রাহিম আনসারি, মোহাম্মদ মাজিদ মোহাম্মদ শফি, শেখ মোহাম্মদ আলি আলম শেখ, মোহাম্মদ সাজিদ মারগুব আনসারি, মুজাম্মিল আতাউর রহমান শেখ, সোহেল মাহমুদ শেখ ও জমীর আহমেদ লতিফুর রহমান শেখ।

এই মামলায় ওহিদ শেখ নামের আরও একজন ৯ বছর কারাভোগের পর আগেই খালাস পেয়েছিলেন।

২০১৫ সালের বিশেষ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি ও রাজ্য সরকার—উভয় পক্ষই উচ্চ আদালতে আপিল করলেও শুনানি বছরের পর বছর ঝুলে ছিল। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য গঠিত হয় বিশেষ বেঞ্চ।

আসামিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়ান সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ও ওড়িশা হাই কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি ড. এস. মুরলিধর। তিনি বলেন, ‘এই মামলা প্রমাণের ভিত্তিতে নয়, বরং জনচাপ ও মিডিয়ার প্রচারে পরিচালিত হয়েছে। মিডিয়া ট্রায়ালের কারণে শুরু থেকেই অভিযুক্তদের ‘জঙ্গি’ হিসেবে সমাজ চিহ্নিত করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘১৮৯ জনের প্রাণহানির ঘটনায় সন্দেহ নেই এটি মর্মান্তিক। কিন্তু বিনা অপরাধে ১২ জন মানুষ ১৭-১৮ বছর ধরে জেল খেটেছে। এখন তারা নির্দোষ প্রমাণিত হলেও তাদের জীবন আর স্বাভাবিক নয়। পরিবার, সমাজ, কর্মজীবন—সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে।’

ড. মুরলিধর আদালতে বলেন, ‘একবার কাউকে ‘জঙ্গি’ তকমা দিলে সমাজ আর সম্মান দেয় না। খালাস পেলেও কেউ আর তার জীবনে ফিরতে পারে না। এই মানুষগুলোর জন্য পুনর্বাসনের কোনো রাষ্ট্রীয় নীতি নেই—এটাই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।’


তথ্যসূত্র:
https://tinyurl.com/3p8d2u36

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্বর ইসরায়েলি হামলার মুখে ডব্লিউএইচও কার্যালয়: ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
পরবর্তী নিবন্ধইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা