দীর্ঘ ১২ বছর পর সোমালিয়ার কৌশলগত মাহাস শহরে প্রবেশ করেছেন আশ-শাবাব মুজাহিদিন

0
148

রবিবার (২৭ জুলাই) ভোরে এক অভূতপূর্ব অভিযানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১২ বছর পর, আশ-শাবাব মুজাহিদিনরা সোমালিয়ার পূর্ব হিরান রাজ্যের কৌশলগত মাহাস শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এসময় মুজাহিদদের হামলায় অন্তত ১৪৭ শত্রু সৈন্য হতাহত হয়েছে।

হারাকাতুশ শাবাব মুজাহিদিনরা চলতি বছরের ৭ জুলাই, পূর্ব হিরান রাজ্যের কৌশলগত মোকোকোরি জেলায় বৃহৎ পরিসরে একটি স্থল অভিযানের পর শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেন। এই বিজয়ের পর থেকেই মুজাহিদদের পরবর্তি লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠে অঞ্চলটির আরেক কৌশলগত জেলা শহর মাহাস। এই লক্ষ্যে মুজাহিদিনরা মোকোকোরি জেলা পেড়িয়ে মাহাস শহরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন এবং শহরের উপকণ্ঠের একাধিক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন।

এমন পরিস্থিতিতে মোগাদিশু বাহিনী যখন বুঝতে পারে যে, শহরটির উপর দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখা তাদের পক্ষে আর সম্ভব না, তখন মোগাদিশু বাহিনী ২৪ জুলাই বৃহস্পতিবার থেকেই শহরটিতে বসবাসরত নিজেদের পরিবারগুলোকে সরিয়ে নিতে শুরু করে। সর্বশেষ ২৬শে জুলাই মোগাদিশু বাহিনী শহরের কেন্দ্রীয় হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং প্রশাসনিক ভবনগুলো গুরুত্বপূর্ণ মালামাল কড়া পাহারায় বালদাউইন শহরের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে। মোগাদিশু বাহিনীর এমন পদক্ষেপে শহরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়।

হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিনরা এসময় পাল্টা কৌশল অবলম্বন করে উত্তর দিক থেকে শহরের উপকণ্ঠে আক্রমণ চালানো শুরু করেন। এই ধারাবাহিকতায় মুজাহিদিনরা শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ শহর থেকে মাত্র ৬ কিলিমিটার দূরে অবস্থিত ওয়াবাক্স এলাকায় অবস্থান নেন। হারাকাতুশ শাবাবের এই অবস্থান নেওয়া ছিলো মোগাদিশু বাহিনীকে বিভ্রান্ত করার একটি কৌশল, আর মোগাদিশু বাহিনী মুজাহিদদের এই কৌশলে পতিত হয়। ফলে বড়ধরণের আক্রমণের আশংকায় মোগাদিশু বাহিনী স্থানীয় মিলিশিয়াদের এবং সেনাবাহিনীর বড় একটি অংশকে শহরের উত্তর দিকে মোতায়েন করে।

শনিবার থেকে মোগাদিশু বাহিনীকে শহরের উত্তর দিকে ব্যস্ত রাখার পর, রবিবার ভোরে শত শত আশ-শাবাব যোদ্ধাকে শহরের দক্ষিণ দিগন্ত থেকে উদিত হতে দেখা যায়। দক্ষিণ দিক থেকে আশ-শাবাবের অকল্পনীয় এই আগমন ও অভূতপূর্ব আক্রমণে হতভম্ব হয়ে পড়ে শত্রু বাহিনী। এতে শহরে অবস্থিত মোগাদিশু বাহিনীর কয়েক হাজার সৈন্য এবং দখলদার ইথিওপিয়ান সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়ারা মুজাহিদদের তীব্র আক্রমণে দিকভ্রান্ত হয়ে ছুটাছুটি করতে শুরু করে। এসময় মুজাহিদদের হামলায় অসংখ্য শত্রু সৈন্য হতাহত হয়, যুদ্ধক্ষেত্রের উন্মুক্ত ময়দান থেকে প্রাথমিক গণনা অনুযায়ী, এই অভিযানে শত্রু বাহিনীতে নিহতের সংখ্যা ৬৩ পর্যন্ত ছাড়িয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও ৮৪ এরও বেশি শত্রু সৈন্য।

মুজাহিদদের কয়েক ঘন্টার তীব্র আক্রমণে ভারী ক্ষয়ক্ষতির শিকার হওয়ার পর, শত্রু বাহিনী তাদের জীবন বাঁচাতে মাহাস শহর ছেড়ে বালদাউইন ও গুরিসেইল শহরের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পলায়নকারী এসকল সৈন্যদের অনেকেই আবার মুজাহিদদের আক্রমণে বনজঙ্গল ও নদীতে পড়ে মারা গেছে।

মুজাহিদদের অভূতপূর্ব এই সামরিক অপারেশন এবং মোগাদিশু বাহিনীর শোচনীয় পরাজয়ের পর, হারাকাতুশ শাবাব প্রশাসন ২০১৪ সালের ২৪ মার্চের পর দীর্ঘ ১২ বছর পর কৌশলগত মাহাস শহরে প্রবেশ করেছেন। মুজাহিদিনরা শহরের গুরত্বপূর্ণ অবস্থান এবং সরকারি ভবনগুলোতে কালিমা খচিত তাওহিদের পতাকা উত্তোলন করেছেন।

উল্লেখ্য যে, মাহাস শহরে মোগাদিশু বাহিনীর এই পতন দেশটির পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের জন্য একটি বড়ধরণের ধাক্কা। কেননা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পূর্ব হিরান রাজ্যের ফ্রন্টলাইনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত শহর আশ-শাবাবের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আর মাহাস শহরটি সোমালিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করে আসছিল, মধ্য বালদাউইন, মাতাবান এবং জালাজদুদ অঞ্চল এরই অন্তর্গত। এমনিভাবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে শহরটি মধ্য সোমালিয়ায় বাণিজ্য, সামরিক অভিযান এবং রাজনৈতিক সমন্বয়ের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এই অঞ্চলে আশ-শাবাব স্থিতিশীলতা ফিরে আনতে পারলে হিরান রাজ্যের অন্য অংশে অবস্থিত বালদাউইন শহর হয়ে উঠবে আশ-শাবাবের পরবর্তী টার্গেট, যার মাধ্যমে হিরান রাজ্যে মোগাদিশু বাহিনী পরিপূর্ণভাবে ভেঙে পড়বে এবং খুব শীগ্রই অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ হারাবে।

আশ-শাবাব মুজাহিদিন কর্তৃক মাহাস শহর বিজয়ের পরবর্তী কিছু স্থির চিত্র দেখুন…


তথ্যসূত্র:
– https://tinyurl.com/4ee2adya

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভিডিও || উত্তরপ্রদেশে মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা করলো তিন উগ্র হিন্দুত্ববাদী যুবক
পরবর্তী নিবন্ধগাজায় ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতায় ০২ শিশুসহ আরও ০৬ জন শহীদ