উলামা পরিষদের বৈঠকে শরিয়াহ বাস্তবায়নে পরস্পরকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন আমীরুল মু’মিনীন

0
87

আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশ ও শিন্দাদ জেলা উলামা পরিষদের কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন ইমারতে ইসলামিয়ার সর্বোচ্চ আমীর শাইখুল হাদিস হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদা হাফিযাহুল্লাহ।

আমীরুল মু’মিনীন তার বক্তব্যে কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, মানুষের নৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের দায়িত্ব আলেমদের বহন করতে হবে। কেননা তারাই নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তরসূরি। এছাড়া শরিয়ত বাস্তবায়নে একে অপরকে সহযোগিতা করতে তিনি আলেম সমাজকে আহ্বান জানিয়েছেন।

ইমারতে ইসলামিয়ার আইন ও ডিক্রি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব ধরনের অভ্যন্তরীণ ক্লেশের দরজা বন্ধ হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, দ্বীন রক্ষার দায়িত্ব আলেমদের উপর অর্পণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ শাসক ও বাদশাহদের উপর আলেমেদেরকে দায়িত্বশীল করেছেন। আলেমদের হেদায়েত মেনে চলা সাধারণ মুসলমানদের উপর ওয়াজিব।

আলেমদের সতর্ক করে তিনি বলেন, আলেম-ওলামাদের মহান আল্লাহর দরবারে জবাবদিহিতা রয়েছে। আলেম শ্রেণীর কর্তব্য ও মর্যাদা যেমন বেশি, তেমনি হাশরের ময়দানে তাদের হিসাব-নিকাশ হবে অত্যন্ত কঠোর।

শেষ জমানার কঠিন সময়ে ইসলামের পুনর্জাগরণ ও দুনিয়ার বুকে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্য্যময়। এই সময় সরকারি ও রাজনৈতিক দলিলের মাধ্যমে আলেমদেরকেই ইসলাম ও শরিয়ত বাস্তবায়ন করতে হবে।

খলিফাদের যুগের সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, বর্তমান সময়টি হক পথপ্রাপ্ত খলিফাদের যুগ নয়। তারা ছিলেন মুজতাহিদ, প্রকৃত অর্থেই ফকিহ। আর আমরা অত্যন্ত দুর্বল। এই কারণে আমাদের পরস্পরের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।

এছাড়া বক্তব্যে তিনি আফগানিস্তানের বিগত ২ দশকের যুদ্ধের ক্ষতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত ২০ বছরে ইসলামকে নির্মূল করতে প্রচুর আর্থিক ও সামরিক সম্পদ খরচ করেছে দুশমনরা। শরিয়তের মর্মবাণী, ইসলামী চেতনা, তাকওয়া, দ্বীনদারিতা, নৈতিকতা সবই মৌলিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।

মাদ্রাসা ও আলেমদের আক্রমণ করা হয়েছিল, তাদেরকে নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। অনৈতিক কাজের সকল দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল। গত দুই দশকে আফগানবাসীর ঘরবাড়ি, সম্পদ ও শহর যেমন ধ্বংস করা হয়েছে, তেমনি তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে।

শরিয়াহ ব্যবস্থাকে দুর্বল করা এবং আলেম-ওলামাদের মধ্যে বিভেদ তৈরির ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আলেমদের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করা এবং দ্বীনদার শ্রেণীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা এখনও বিদ্যমান রয়েছে।

তবে আফগানিস্তানে ইমারতে ইসলামিয়া সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ৪ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে দেশে বড় কোনও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, দলাদলি কিংবা যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয় নি বলে তিনি তুলে ধরেন।

তিনি আলেমদের এই সুযোগকে কাজে লাগাতে নসিহত করেন, শরিয়ত প্রতিষ্ঠায় পরিপূর্ণভাবে নিয়োজিত হতে বলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, ইমারতে ইসলামিয়ার আইন ও ডিক্রি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব ধরনের অভ্যন্তরীণ ক্লেশের দরজা বন্ধ হয়েছে, যা শরিয়াহ প্রয়োগের প্রক্রিয়াকে সহজতর করেছে। পক্ষান্তরে এই আইন ও ডিক্রি বাস্তবায়নে অবহেলা করা হলে, দেশে পুনরায় অনৈক্য ও কলহ সৃষ্টি হবে। একই সাথে জনগণের দুঃখ-দুর্দশা নিরসন ও পারস্পরিক বিরোধ-শত্রুতা দূর করতে তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে আলেমদের উৎসাহিত করেছেন।

বৈঠকে আলেমগণ আমীরুল মু’মিনীন হাফিযাহুল্লাহ’র প্রতি তাদের আনুগত্য পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শরিয়াহ ব্যবস্থার প্রতি তাদের সমর্থনের অঙ্গীকার করেন। বৈঠকের শেষ পর্যায়ে জনগণের কল্যাণ ও ইসলামী ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য সভার সকলে দোয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন।


তথ্যসূত্র:
Esteemed Amir-ul-Momineen (may Allah protect him) Meets Ulama Council of Herat
– https://tinyurl.com/3deakpuv

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাজায় আল-কুদসের প্রতিরোধ: দখলদার ইসরায়েলের সামরিক যান ধ্বংস
পরবর্তী নিবন্ধডুয়েটে বিদায়ী র‌্যাগ ডে’র নামে অশ্লীলতার চর্চা