
রংপুরের আট উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের হাজারো ঘর এখনো নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের দখলে। রাতে ঘরগুলোকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা দেশবিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে। এছাড়া মাদক সেবন ও বেচাকেনার পাশাপাশি এখানে চলে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এতে একদিকে যেমন প্রকৃত ভূমিহীনরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন, অন্যদিকে জেলাজুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কাও করছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা।
জেলা প্রশাসকের অফিস ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলার আট উপজেলার মধ্যে তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও সদরসহ সাতটি উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয় বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে। এছাড়া পূর্ব থেকে যেখানে গুচ্ছগ্রাম ছিল, সেগুলো সংস্কারের পাশাপাশি ব্যারাক নির্মাণের জন্য তালিকা করা হয়।
জানা গেছে, ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নাম দিয়ে ওই সময় গৃহ নির্মাণ শুরু হয়। ছয় হাজার ৫৪৮ জন ভূমি ও গৃহহীনের তালিকা করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ধাপে ধাপে নির্মাণ করা হয়। প্রথম থেকে পঞ্চম ধাপে গিয়ে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এবং তার আগে জেলায় ছয় হাজার ১৩০ জন গৃহহীনের নামে বরাদ্দ দেখানো হয়।
এরমধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম ধাপে বদরগঞ্জ উপজেলায় ৮১৫টি, তারাগঞ্জে ৭১৪টি, সদরে ব্যারাকসহ ৬৬৭টি, গঙ্গাচড়ায় ব্যারাকসহ ৯৯০টি, কাউনিয়ায় ব্যারাকসহ ৯১৩টি, পীরগাছায় ব্যারাকসহ ৯৫৫টি, মিঠাপুকুরে ব্যারাকসহ এক হাজার ৭৫৮টি এবং পীরগঞ্জ উপজেলায় ব্যারাকসহ এক হাজার ৯৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়।
গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, প্রথম ধাপে একটি ঘর নির্মাণে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও পর্যায়ক্রমে তিন লাখ চার হাজার টাকা বরাদ্দে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিনে গণমাধ্যমের রিপোর্টে উঠে আসে, সারি সারি আধাপাকা ও টিনশেড ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ। প্রতিটি ঘরে ব্যয় হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে দুই শতক জমিসহ ঘরগুলো বাসিন্দাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ঘরগুলোয় একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগারের পাশাপাশি রয়েছে বিদ্যুৎ আর সুপেয় পানির ব্যবস্থাও। কিন্তু সেখানকার অধিকাংশ ঘরই ফাঁকা। কিছু কিছু ঘরে তালা দেখা গেলেও মাদকের গন্ধ বেরোচ্ছে।
গণমাধ্যমের রিপোর্টে উঠে আসে, ঘর পেয়েছিল আকবর আলী। তার বাড়ি বারো বিগায়। কিন্তু বর্তমানে ওই ঘরে থাকে মহিদুল নামে এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে জোর করে দখল নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেস আলী। সবজা বেগমের ঘরের দখল নিয়েছে যুবলীগের বাবলু। তিনি ভাড়ায় বিক্রি করেছেন ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছে। রংপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় সব ঘর ও ব্যারাকে অনিয়ম ও দখলদারিত্বের প্রভাব দেখা গেছে।
মিঠাপুকুর উপজেলার ওয়াজেদ আলী ও সাহেব মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, প্রকৃত ভূমি-গৃহহীনরা ঘর বরাদ্দ পাননি। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই যাদের নিজস্ব বাড়ি ও জমিজমা রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত, তাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাদের কেউ এখন ঘরে থাকছেন না। রাত হলে অনেক ঘরে মাদকের আখড়া বসে। আবার অনেক ঘরে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিটিং করেন। এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে তারা জানান।
তথ্যসূত্র:
১. রংপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের হাজারো ঘর আ.লীগের দখলে
– https://tinyurl.com/2afnbz3t


