ভুয়া পরিচয়পত্রে ১ লাখ টাকা নিতো ইসির কর্মী

0
582
ভুয়া পরিচয়পত্রে ১ লাখ টাকা নিতো ইসির কর্মী

ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেননি, কিংবা ক্রেডিট কার্ডের টাকা পরিশোধ করেননি—এমন লোকজন ছিল চক্রটির গ্রাহক। তাঁদের নতুন করে ঋণ পাইয়ে দিতে নতুন করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতো তারা।

লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, সুমন পারভেজ ও মজিদ ব্যাংকঋণ পাইয়ে দেবেন, এই শর্তে একেকজনের কাছ থেকে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিতেন। ঋণ হাতে পাওয়ার পর তাঁদের দিতে হতো মোট টাকার ১০ শতাংশ পর্যন্ত।

তদন্তে যুক্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, যাঁরা দ্বিতীয় আরেকটি পরিচয়পত্র করিয়েছেন তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা রয়েছেন। এখন পর্যন্ত ২০-২৫টি পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়েছে।

এসব পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তাঁরা সিটি ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন। মো. মিল্টন নামের এক ব্যক্তি নর্থ সাউথ সড়কের সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।

সুমন পারভেজ সাত-আট বছর আগে ‘ভেরিফিকেশন ফার্মে’ কাজ করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল কেউ ঋণ পাওয়ার যোগ্য কি না, তা যাচাই–বাছাই করা। পরে চাকরি ছেড়ে এই কাজে যুক্ত হন।

এই চক্রের অপর সদস্য মজিদের ঋণের দরকার পড়ায় তিনি সুমন পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর দুজন মিলে এই কারবারে নামেন।

কারও ঋণ প্রয়োজন হলে তাঁরা নির্বাচন কমিশনের খিলগাঁও অফিসের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর ও গুলশান অফিসের মো. আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এই দুজন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন।

একটি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র কী করে তৈরি করা যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে আসামিদের উদ্ধৃত করে পুলিশ জানায়, অপারেটররা এ জন্য একটি কৌশল অবলম্বন করেন।

যাঁরা দ্বিতীয় পরিচয়পত্র করিয়েছেন, তাঁরা জন্মসনদ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে নাগরিকত্বের সনদ ও বিদ্যুৎ বিল ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের হাতে পৌঁছে দিতেন। তাঁরা অফলাইনে সব তথ্য, আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয়পত্র অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। অনুমোদন হতে সময় লাগত সর্বোচ্চ ১৫–২০ মিনিট। তারপরই নতুন আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র চক্রটির ঋণ নিতে ইচ্ছুক এমন লোকজনের হাতে তুলে দিতেন।

যে ব্যক্তির নামে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হলো, তাঁর নামে আগে কোনো পরিচয়পত্র আছে কি না, তা যাচাই–বাছাই হতে মাস দুয়েক সময় লেগে যায়। ব্যাংকও টের পায় ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়। তারা নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে খোঁজখবর করে আর তাঁকে (নতুন করে যিনি ঋণ নিয়েছেন) খুঁজে পায় না।

নির্বাচন কমিশন অফিসের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সিদ্ধার্থ ২০০৭ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজ করে আসছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন গত বছর থেকে এই চক্রে জড়িয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, দ্বৈত জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে তিনি একবার ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও সিটি ব্যাংক থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা তুলেছিলেন। এরপর স্ত্রী রোজিনা রহমানের নামেও আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজ করাচ্ছিলেন। প্রথম আলো

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাকিস্তান | ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ ও পিটিআই এর সহ-সভাপতি তাহির ইকবাল কে হত্যা করেছেন মুজাহিদিন
পরবর্তী নিবন্ধ১১ দিনেও বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দেয়নি সীমান্ত সন্ত্রাসী বিএসএফ