চার যুগ আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে সামরিক আগ্ৰাসন চালিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল তখনকার বিশ্ব পরাশক্তি এবং শক্তিমত্তার সর্বোচ্চ শিখরে। স্থানীয় দালালরা আফগানিস্তানে আগ্ৰাসীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছিল।
আফগানিস্তানের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য শুরু হয়েছিল এক দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ। সোভিয়েত বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আফগানিরা আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। সোভিয়েত আগ্রাসীদের পরাজয় ও সেনা প্রত্যাহার অবধি এ জিহাদ জারি রেখেছেন। ফলে আফগানিস্তানে পরাজিত হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন বহির্বিশ্বে সামরিক আগ্রাসন চালানোর সক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বেশ কয়েকটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়।
আফগানিস্তান সাম্রাজ্যবাদীদের গোরস্থান নামে খ্যাত। এখন পুনরায় তা বর্তমান সময়ের আরো এক উদ্ধত পরাশক্তির গোরস্থানে পরিণত হতে চলেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের মতোই আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট আগ্ৰাসন চালিয়েছে। এই আগ্রাসনের সময় যত গড়াচ্ছে, সামরিক ও রাজনৈতিক প্লাটফর্মে দখলদারবিরোধী লড়াই ততই শক্তিশালী হচ্ছে এবং আমেরিকার সামরিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক জনমত গড়ে ওঠছে।
আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশবিক আগ্রাসনের ৪১ বছর পূর্ণ হয়েছে। সোভিয়েত বাহিনীর আগ্রাসন থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্ৰাসী জোটের জন্য শেখার অনেক কিছু আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্ৰাসনের ঘোর বিরোধী ছিল। আমেরিকা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সোভিয়েত-বিরোধী প্রচারণায় নেমেছিল এবং আফগান মুজাহিদগণকে সমর্থন করেছিল। আফগানরা তখন বীরত্বের সাথে লড়াই করেছে এবং স্বাধীনতার জন্য পাহাড়প্রমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছে। আমেরিকার চোখের সামনে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয় ঘটেছে এবং বিশাল ঐ সাম্রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। এরপরও আমেরিকা সমগ্র আফগানিস্তান দখল করার স্বপ্ন নিয়ে এখানে আগ্রাসন চালানোর দুঃসাহস দেখিয়েছে।
১৯ বছরের যুদ্ধে আফগানরা মার্কিন দখলদারদের সামনে মাথা নত করেনি। আফগান জাতি একাকী লড়াই করে চলছে। সোভিয়েত-বিরোধী লড়াইয়ে যারা আফগানিস্তানের পাশে ছিল—তারাসহ গোটা বিশ্ব আজ আমেরিকার পক্ষ নিয়েছে। আফগানিস্তান দখলের স্বপ্ন নিয়ে পঞ্চাশটি দেশের লক্ষাধিক সেনা দেশটিতে প্রবেশ করেছে। বাদবাকি রাষ্ট্রগুলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আমেরিকাকে সহযোগিতা করেছে। হত্যা, লুণ্ঠন ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আফগান জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। তবে তাদের স্বপ্ন ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয় থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের এই শিক্ষা নেয়া উচিত যে, আফগান জাতির সাহসিকতা পরখ করার দুঃসাহস দেখানো বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি। আর ভবিষ্যতে এই জাতির বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের ভীমরতি ধরলে সম্ভাব্য পরিণতির কথা ঠাণ্ডা মাথায় কয়েকবার ভেবে দেখা উচিত। ইসলামি ইমারাহ শুরু থেকেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটকে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলে আসছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয়ের কথা স্মরণ করে এবং দোহা চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমেরিকার উচিত, মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধের ইতি টানতে পরিপূর্ণ সেনা প্রত্যাহার করা। তারা তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও কিছুই অর্জন করতে পারেনি এবং পারবেও না, বিইযনিল্লাহ। তাই তাদের জন্য উচিত হবে, বাস্তবতাকে মেনে নেয়া এবং এই বিপদজনক শক্তি পরীক্ষা বন্ধ করা।
চলমান যুদ্ধ—যে যুদ্ধে তারা কখনোই জয়ী হতে পারবে না—তা থেকে বেরিয়ে আসার একটিই পথ। আর তা হচ্ছে, ইসলামি ইমারাহর পরামর্শ অনুযায়ী আফগানিস্তান থেকে পরিপূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করা এবং কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সঙ্কট নিরসন করা।
________________________
ইসলামি ইমারতের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয় আর্টিকেলটি।
মূল লেখক: মুহাম্মাদ জলিল হাফিজাহুল্লাহ।
অনুবাদ: মাওলানা আবুল বাশার হাফিজাহুল্লাহ।
এটি ইউটুবে আপলোড করা উচিৎ!