২০২১ সাল বিদায় নিয়েছে, তবে রেখে গেছে বহু বেদনার স্মৃতি, হয়েছে অনেক অপরাধের সাক্ষী। ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর বিদ্বেষমূলক অপরাধের ভয়ানক উত্থান ২০২১ সাল প্রত্যক্ষ করেছে। বিশেষভাবে মুসলিমদের উপর হিন্দু সন্ত্রাসীদের আক্রমণ বেড়েছে বহুগুণে। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা নিয়ে সংখ্যালঘুদের খুন করার মিশনে নেমেছে হিন্দুরা। হিন্দু সন্ত্রাসীদের এমন বিদ্বেষমূলক অপরাধগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে সাবরাং ইন্ডিয়া নামে একটি গণমাধ্যম।
সাবরাং ইন্ডিয়ার প্রকাশিত তালিকায় কেবল মিডিয়ায় প্রকাশিত ঘটনা এবং অন্যান্য কিছু সংগঠনের সংকলিত ঘটনাবলি স্থান পেয়েছে। তবে এমন বহু ঘটনা থেকে যায় অন্তরালে। এসব ঘটনার সূত্র প্রায় সময়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও। আর এই ভিডিওগুলো ছড়ায় অপরাধে জড়িত হিন্দু সন্ত্রাসীরাই। তারা নিজেদের জঘন্য এসব অপরাধের ভিডিও নিজেরাই বড়ত্বসহকারে অনলাইনে প্রকাশ করে। কারণ তাদের গ্রেফতার হওয়ার ভয় নেই, জবাবদিহিতার মুখোমুখি হওয়ার আশংকা নেই। সরকার, পুলিশ, মিডিয়া থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত সবাই-ই তো হিন্দুত্ববাদীদের লোক। এদের প্ররোচনা ও আশ্বাসেই মুসলিমদের উপর প্রকাশ্যে গণহত্যা চালানোর ঘোষণা দিতে পারে হিন্দুরা। তাদের বক্তব্যে উৎসাহিত হয়েই হিন্দু সন্ত্রাসীরা মুসলিমদের খুন করেও নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। এ কারণে ভারতে মুসলিমদের উপর হিন্দু সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে। ভারতে ২০২১ সালে মুসলিমদের উপর হামলার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
নামাজে বাধা প্রদান:
১৫-নভেম্বর: গুজরাটের আহমেদাবাদের বস্ত্রাপুর লেক গার্ডেন পার্কের যে জায়গায় মুসলিমরা নামাজ আদায় করে থাকেন, সেখানে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সদস্যরা গঙ্গা জল দিয়ে পবিত্র করার নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ গুজরাটের ভিএইচপি সেক্রেটারি অশোক রাভাল দাবি করে, ভিএইচপি কর্মীরা জায়গাটিকে পরিশুদ্ধ করতে পার্কে গিয়েছিল। তারা মন্ত্র পড়ে এবং ‘গঙ্গা জল’ ছিটিয়ে দেয়। রাভালের দাবি ‘পরিশুদ্ধকরণ’ অনুষ্ঠানটি জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার জন্য করা হয়েছিল। সে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মানুষকে উসকে দিতে আরও বলে, নিয়মিত নামাজ আদায়ের ফলে শেষ পর্যন্ত মুসলিমরা এই জমির অংশীদারিত্ব দাবি করবে।
২০২১ অক্টোবর-ডিসেম্বর: গুরুগ্রামে গত কয়েক মাস ধরে প্রতি শুক্রবার হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো জুমার নামাজে বাধা প্রদান করে আসছে। আগে শান্তিপূর্ণভাবে এখানে নামাজ আদায় করা যেত। মুসলিমরা বলছেন, গুরুগ্রামের মুসলিমদেরকে ধর্ম পালনের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত খোলা মাঠে জুমার নামাজে বাধা সৃষ্টি করছে। গত বছর গুরুগ্রাম প্রশাসন জুমার নামাজের জন্য ৩৭ টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ক্রমাগতভাবে ঐসব স্থানেও মুসলিমদের নামাজে বাঁধা দিতে থাকে। এখন নামাজ আদায়ের স্থান কমিয়ে ২০ এর নিচে আনা হয়েছে। মুসলিমরা জানান, নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় মসজিদ নির্মাণের সুযোগ না দেয়ায় খোলা মাঠে নামাজ আদায় করতে বাধ্য হন মুসলিমরা৷ স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মাদ আদিব বলেন, মসজিদের জন্য নগর পরিকল্পনায় কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। তিনি বলেন, গুরুগ্রাম প্রসারিত হলেও মুসলিমদের একটি মসজিদ নির্মাণের জায়গাও দেওয়া হয়নি। অথচ, হিন্দুদের জন্য মন্দির আর শিখদের জন্য গুরুদ্বার বানানোর জন্য ঠিকই জমি বরাদ্দ দিচ্ছে।
হিন্দুত্ববাদী পুলিশের বর্বরতা:
ডিসেম্বর: এ মাসের শুরুতে ব্যাঙ্গালোর ব্যাটারায়নাপুরা থানায় হরিশ কেএন নামে একজন সাব-ইন্সপেক্টর ২৩ বছর বয়সী মুসলিম তৌসিফ পাশাকে প্রস্রাব পান করতে বাধ্য করেছিল। তৌসিফ বলেন, ‘হরিশসহ তিনজন কনস্টেবল আমাকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে কমপক্ষে ৩০ বার আঘাত করে। আমি ক্লান্ত হয়ে তাদের কাছে পানি চাইলে তারা আমাকে প্রস্রাব দেয়। তারা আমার দাড়িও কেটে দিয়েছে। দাড়ি আমার ঈমানের অংশ, তাই এটা না কাটার জন্য আমি তাদের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা বলেছিল যে, এটি (পুলিশ স্টেশন) কোনো ধর্মীয় কেন্দ্র নয়। তারা আমাকে দিয়ে থানার ময়লা পরিষ্কারের কাজও করিয়েছে।’
২রা ডিসেম্বর: বেঙ্গালুরুতে সালমান নামে একজন মুসলিম যুবককে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন চালানো হয়। এতে তার হাতে মারাত্মক ইনফেকশন হয়। ফলে হাতটি কেটে ফেলতে হয়েছে।
৮ই নভেম্বর: ২২ বছর বয়সী আলতাফকে কাসগঞ্জ পুলিশ তুলে নিয়ে খুন করে। ২৪ ঘন্টা পর পুলিশ দাবি করে যে, সে আত্মহত্যা করেছে। আলতাফের বিরুদ্ধে একটি হিন্দু মেয়েকে অপহরণ করার মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। পরে মেয়েটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সাক্ষ্য দেয় যে, আলতাফকে মেয়েটি বিয়ে করতে চেয়েছিল।
৬ই আগস্ট: পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সোনারপুরে বাঙালী মুসলিম পুলিশ কনস্টেবল সুরফ হোসেনকে মারধর করা হয়। পুলিশ তার চাচাকে খুঁজতে আসে। সুরফ পুলিশের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইলে তারা তাকে লাঞ্ছিত করে, বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে মারধর করে। তারপর হাত ও কোমরে বেঁধে তাকে উলঙ্গ করা হয়।
২৭ই মে: বুলন্দশহরে গরু জবাইয়ের অভিযোগে হিন্দুরা এক মুসলিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পরে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ ৪২ বছর বয়সী আকিল কুরেশির বাড়িতে গিয়ে বাড়ির ছাদ থেকে তাকে ফেলে খুন করে। মুহাম্মদ আকিল কুরেশির আট বছর বয়সী মেয়ে সুমাইয়া বলেছে যে, ঘটনাটি ঘটার সময় সে ছাদে ছিল। পুলিশ তার বাবার কাছে টাকা চেয়েছিল এবং তিনি অস্বীকার করলে তারা তাকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারধর শুরু করে আটকে রাখে। তারপর তাকে পা ধরে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। শিশু মেয়েটির সামনেই তার বাবাকে নির্মমভাবে খুন করে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ।
মে: এ মাসের শেষ দিকে ১৭ বছর বয়সী একজন মুসলিম সবজি বিক্রেতা উন্নাও থানা পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করে। পুলিশ তাকে নির্দয়ভাবে মারধর করে। মুসলিম ছেলেটি উন্নাওয়ের বাঙ্গারমাউ এলাকায় নিজ বাড়ির বাইরে সবজি বিক্রি করছিল, এ সময় হিন্দুত্ববাদী পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে।
১৭ মে: ১৭ বছর বয়সী বালক ফয়সাল হুসাইনকে করোনা নিয়ম লঙ্ঘনের কথিত অভিযোগে তুলে নিয়ে যায় হিন্দুত্ববাদী পুলিশ। পরে পুলিশি নির্যাতনে সে মারা যায়। পুলিশ মৃত্যুর ঘটনাকে হার্ট অ্যাটাক বলে দাবি করে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে দেখা যায়, ফয়সাল হুসাইনের মাথা ও কানের নিচে গুরুতর আঘাত ও শরীরে অন্তত ১২ আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় কনস্টেবল বিজয় চৌধুরী এবং সীমাবত এবং হোম গার্ড সত্য প্রকাশ নামে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে বরখাস্ত করা হলেও গ্রেফতার করা হয়নি।
১৭ মে: দিল্লির ছাতারপুর এলাকার বাসিন্দা ২৯ বছর বয়সী ওয়াসিম খানকে ফতেপুর বেরি থানার পুলিশ নির্মমভাবে মারধর করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি থানার হেল্পলাইনে অন্তত ১০০ বার কল করেছিলেন। এ ঘটনায় তদন্তের নামে তাকে তুলে নিয়ে যায় হিন্দুত্ববাদী পুলিশ। ওয়াসিম খান জানান, ‘দিল্লিতে একটি সহিংসতা শুরু হয়েছিল। সহিংসতাটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মনে হয়েছিল। এ জন্য আমি হেল্পলাইনে কল করি। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে, তারা আমার সাথে এমন আচরণ করবে।’
উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনতার আক্রমণ:
২৯ই নভেম্বর: ভারতের ঝাড়খণ্ডে কয়েকজন কাশ্মীরি মুসলিম শীতকালীন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করতে এসেছিলেন। এ সময় অন্তত ২৫ উগ্র হিন্দু তাদের উপর আক্রমণ করে, বেদম পিটিয়ে আহত করে। পরে তাদেরকে ‘জয় শ্রী রাম’ ও ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ স্লোগান দিতে বাধ্য করে।
২৮ই নভেম্বর: মোঃ আদিল একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। তার বয়স ২২ বছর। হিন্দুরা তাকে নির্মমভাবে মারধর করে। সে ভুল করে ঝাড়খণ্ডের একটি হিন্দু মহল্লায় হাঁটাহাটি করছিল। হামলাকারীরা তার দাড়ি ধরে টানাটানি করে অপমান করে এবং মাথার টুপি খুলে মাটিতে ফেলে দেয়। তার ভাই ইউসুফ আনসারি ‘দ্যা টেলিগ্রাফ’-কে জানান, ‘আমার ভাই কয়েকদিন ধরে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। হামলার দিন সে মাগরিবের নামাজ আদায়ের জন্য একটি মসজিদে গিয়েছিল।’
১২ই নভেম্বর: ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী সরকার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কয়েকজন নেতার অংশগ্রহণে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের অন্তত ৬ হাজার সদস্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে এক মিছিলের আয়োজন করে। এ সময় মুসলিমদের দোকান, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে আগুন জ্বালায় ও হামলা চালায় উগ্র হিন্দুরা।
অক্টোবর: এ মাসের শেষ দিকে একটি মন্দির খোলার সময় কর্ণাটকের বেলাগাভি শহরে এক মুসলিম ব্যক্তির মুরগির দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে পুলিশ আক্রমণকারীদের সাথে একটি সমঝোতা করে। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি ছিল সকাল ১১টার আগেই দোকান বন্ধ করে দিতে হবে।
২০ই অক্টোবর: মধ্যপ্রদেশে হিন্দুদের নবরাত্রি উৎসবের সময় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা এলাকায় সাম্প্রদায়িক পোস্টার লাগায়। তাদের পোস্টারে লেখা ছিল, ‘অহিন্দুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ’। পরে ১০ বছর বয়সী মুসলিম শিশুর কথিত উপস্থিতি নিয়ে উগ্র হিন্দুরা মুসলিম এলাকায় হামলা চালায়।
১০ই অক্টোবর: গুজরাটের আহমেদাবাদের পালদি এলাকায় হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণে দুই মুসলিম কিশোর গুরুতর আহত হয়। একজন ভুক্তভোগীর বাবা বলেছেন, ছেলে দুটিকে কেবল এই কারণে আক্রমণ করা হয়েছিল যে, তারা কুর্তা পায়জামা এবং মাথায় টুপি পরিধান করেছিল। এগুলো পরিধানের ফলে তাদের মুসলিম বলে চেনা যাচ্ছিল৷ তারা মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে হিন্দুরা তাদের উপর হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের এতো বেশি মারধর করা হয়েছিল যে, কয়েকদিন পর্যন্ত তারা অজ্ঞান ছিল।
৯ই অক্টোবর: মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরের কাম্পেল এলাকায় একটি মুসলিম পরিবারকে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম থেকে স্থায়ীভাবে চলে যেতে নির্দেশ করে হিন্দুত্ববাদীরা। মুসলিম পরিবারটি চলে যেতে অস্বীকার করার পর একদল হিন্দু লোহার রড দিয়ে মুসলিম পরিবারটিকে আক্রমণ করে। পরিবারটি গ্রামের একমাত্র মুসলিম পরিবার বলে জানা গেছে।
৯ই সেপ্টেম্বর: উত্তর প্রদেশের শামিলি এলাকার বাসিন্দা সমীর চৌধুরী (২২)। তাঁর মুসলিম পরিচয় জানার পর বেশ কয়েকজন হিন্দুত্ববাদী লাঠি, রড ও দা দিয়ে কুপিয়ে তাকে খুন করে৷
২২শে আগস্ট: মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের গোবিন্দ নগর এলাকায় হিন্দুদের কাছে চুড়ি বিক্রি করার অভিযোগে এক মুসলিম চুড়ি বিক্রেতাকে মারধর করেছে হিন্দুরা। তসলিম নামে ২৫ বছর বয়সী এ যুবককে মারধরের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় হিন্দুত্ববাদীদের গ্রেফতার না করে উলটো এই যুবককেই গ্রেফতার করেছে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ।
১৬ই মে: হরিয়ানার নুহ জেলায় ২৭ বছর বয়সী আসিফ খান একজন জিম প্রশিক্ষক। তাকে ও তার কয়েকজন চাচাতো ভাইকে তুলে নিয়ে যায় হিন্দুত্ববাদীরা। পরে তাকে পিটিয়ে হত্যা এবং তার সাথে থাকা তার চাচাতো ভাইদের গুরুতর আহত করে উগ্র হিন্দুরা।
১৬ই মার্চ: ঝাড়খণ্ডের রাঁচি জেলার সিরকা পঞ্চায়েতের মহেশপুর গ্রামে মোটরসাইকেলের টায়ার চুরি করার অভিযোগে মোবারক খান নামে ২৬ বছর বয়সী মুসলিমকে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে উগ্র হিন্দুরা।
গো-রক্ষার নামে সন্ত্রাস:
২৮শে সেপ্টেম্বর: মথুরায় দুইজন মুসলিম ব্যক্তিকে গরুর মাংস বহন করার অভিযোগে উগ্র হিন্দুরা মেরে গুরুতর আহত করে। পুলিশ মুসলিম ব্যক্তিদের উগ্র হিন্দুদের কাছ থেকে উদ্ধার করার পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়; এবং পরে মুসলিমদেরকেই গ্রেপ্তার করে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ।
১২ই সেপ্টেম্বর: রাজস্থান-হরিয়ানা সীমান্তে ১৭ বছর বয়সী এক মুসলিম ছেলেকে হত্যা করে উগ্র হিন্দুরা। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি ছিল, এ যুবক গরু পাচারে লিপ্ত ছিল। পরিবার জানায়, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ওই কিশোরকে ইচ্ছাকৃতভাবে খুন করে হিন্দুরা।
৪ঠা জুন: মথুরা জেলার একটি গ্রামে একজনকে গুলি করে হত্যা ও অপর ৬ জন মুসলিমকে পিটিয়ে আহত করেছে হিন্দুত্ববাদীরা। হিন্দুদের দাবি ছিল, এই মুসলিমরা গরু পাচার করছিল। সংবাদমাধ্যম জানায়, পাচারের জন্য নয়, তারা আলিগড় থেকে হরিয়ানার মেওয়াতে গরু নিয়ে যাচ্ছিল।
২৩শে মে: উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদে মুহাম্মদ শাকির নামে একজন গরুর মাংস বিক্রেতাকে মাংস বহনের কারণে গোরক্ষক পরিচয় দেয়া কয়েকজন লাঠি দিয়ে মারধর করে। পরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী। হিন্দুরাও গো-হত্যার নামে একটি মামলা দায়ের করে; এ মামলায় মুসলিম যুবককেই গ্রেফতার করে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ।
মুসলিম এলাকায় আক্রমণ:
২৩শে মে: গুজরাটের গির সোমনাথের উনা তালুকের নাভা বন্দর এলাকায় দুটি মাছ ধরার নৌকা ধাক্কা খায়। এ ঘটনায় হিন্দুত্ববাদীদের অন্তত ২ হাজার সদস্য মুসলিমদের উপর লাঠি, তলোয়ার, লোহা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সহিংসতা চালায়।
ঘৃণাত্মক বক্তব্যের মাধ্যমে উসকানি:
২৪শে নভেম্বর: হিন্দুত্ববাদী নেতা রাজীব ব্রহ্মর্ষি ফেইসবুক পোস্টে ঘোষণা দেয়, ‘হিন্দুস্তানের প্রতিটি কোণায় কোণায় অস্ত্র পৌঁছে যাবে।’ সে দাবি করে, নভেম্বর থেকেই বেঙ্গালুরে অস্ত্র সরবরাহ করতে শুরু করেছে। এবং সমগ্র ভারতের প্রতিটি ঘরে অস্ত্র পাঠাতে শুরু করেছে। তার দাবি, দেবতাদের হাতে অস্ত্র আছে, তাই মন্দিরে অস্ত্র রাখার জন্য হিন্দুদের আহ্বান জানায়। সে নিজেকে ‘হিন্দু পুত্র সংগঠন’ নামে একটি সংগঠনের প্রধান বলে হিসেবে দাবি করেছে।
মসজিদ ও নামাজের স্থানকে টার্গেট:
২৩শে নভেম্বর: হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন বজরং দলের লোকেরা বল্লবগড়ে একটি মাজার ভাংচুর করে। কোরআন, নামাজের মাদুর ও অন্যান্য জিনিসপত্র আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তারা নিজেরাই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। তাদের বলতে শোনা যায় যে, মাজারে থেকে হিন্দুদের ‘জাদু’ করা হচ্ছে এবং ‘হিন্দু পুরুষদের নপুংসক করার জন্য যৌন ওষুধ রাখা হয়েছে।
২২শে অক্টোবর: ত্রিপুরায় ছয়টিরও বেশি মসজিদ ভাংচুর ও আগুন লাগিয়ে দিয়েছে উগ্র হিন্দুরা। হিন্দুরা এটিকে বাংলাদেশে হিন্দু-বিরোধী সহিংসতার প্রতিশোধ হিসেবে দাবি করেছে। গণমাধ্যমে এসেছে, ত্রিপুরা জুড়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বজরং দলের মতো হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো মুসলিমদের বেশ কয়েকটি মসজিদ, বাড়িঘর ও দোকান ভাঙচুর করে। এছাড়াও কৃষ্ণনগর, ধর্মনগর, পানিসাগর, চন্দ্রপুরের মসজিদগুলোতেও হামলা ও আগুন দিয়েছে উগ্র হিন্দুরা।
১৪ই অক্টোবর: খেদা জেলার ভাত্রাক নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক রোজা রোজি দরগায় হামলা চালিয়ে স্থানটিতে মূর্তি নিয়ে পূজা করে হিন্দুরা। রিপোর্টে বলা হয়, সেখানে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও হস্তক্ষেপ করেনি।
৫ই অক্টোবর: মধ্যপ্রদেশের নিমুচ জেলায় একটি মসজিদে হামলা চালিয়ে মসজিদ ধ্বংস করে দেয় হিন্দুত্ববাদীরা। পুনরায় নির্মাণ করা হলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে যায় হিন্দুরা।
২২শে মে: উত্তরপ্রদেশে একটি মসজিদকে অবৈধ স্থাপনা উল্লেখ করে ভেঙে দিয়েছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন। মুসলিমরা জানিয়েছেন, বহু বছর আগেই এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
হুমকি:
৪ঠা নভেম্বর:
নরেশ কুমার সূর্যবংশী নামে এক হিন্দু ব্যক্তির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দিল্লির সন্ত নগর এলাকায় একজন মুসলিম বিরিয়ানি বিক্রেতাকে হুমকি দিতে দেখা যায় তাকে। দীপাবলিতে মুসলিম ব্যক্তি কেন দোকান নিয়ে বসেছেন এজন্য সে দোকানদারকে হুমকি দেয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেকে উগ্র সংগঠন বজরং দলের সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছে। হিন্দুদের কোনো অনুষ্ঠানে মুসলিমরা দোকান দিলে আগুন লাগিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। পরে আতঙ্কিত মুসলিমরা দোকান বন্ধ করে দেন।
২রা নভেম্বর: আলিগড়ে মুহাম্মদ আমির নামে এক মুসলিম ব্যবসায়ীকে হিন্দুরা আক্রমণ করে। এসময় মুসলিম বাবা ও ছেলে দুজনকেই জয় শ্রী রাম স্লোগান দিতে বাধ্য করে। দ্যা টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ এলাকায় সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়মিতই নির্যাতন করা হয়।
২৬শে অক্টোবর: গুজরাটে বসবাসকারী মুসলিমদের বিশ্বাসঘাতক দাবি করে মুসলমানদের উপর আক্রমণ করার আহ্বান জানিয়ে একটি মিছিল বের করেছে উগ্র হিন্দুরা। মিছিলে হিন্দু নারীদেরও দেখা যায় যে, তারা স্লোগান দিয়ে মুসলমানদের হুমকি দিচ্ছিল, ‘যদি ভারতে থাকতে চাও, তবে জয় শ্রী রাম বলতে হবে।’
১৮শে অক্টোবর: মধ্যপ্রদেশের ইসলাম নগরে একদল হিন্দু এক মুসলিম যুবতীকে তার বোরকা খুলে ফেলতে বাধ্য করে। একজন হিন্দু বলে, তোর বোরকা খুলে ফেল, তুই আমাদের সম্প্রদায়কে কলংকিত করছিস।
১৪ই অক্টোবর: যতি নরসিংহানন্দ নামে এক মুশরিক হিন্দু নেতা ১০ বছর বয়সী মুসলিম ছেলেকে ধরে নিয়ে মন্দির ঘুরিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। নাবালক ছেলেটি ঘটনাক্রমে মন্দির প্রাঙ্গণে এসে পড়েছিল। পরে সন্ত্রাসী যতি তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ছেলেটি পুলিশকে জানায়, মন্দিরের কাছেই কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে (সিএইচসি) ভর্তি থাকা তার গর্ভবতী বোনকে দেখতে সে এই এলাকায় এসেছিল। উগ্র যতি নরসিংহানন্দর দাবি, ১০ বছরের বাচ্চা ছেলেটি ওখানে গিয়েছিল হিন্দুদের উপর আক্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে!
৫ই অক্টোবর: হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতৃত্বে প্রায় ৩০০০ লোকের একটি দল ছত্তিশগড়ের কবিরধাম জেলার কাওয়ার্ধা শহরের রাস্তায় খোলা তরবারি ও লাঠি হাতে মিছিল করে। এ সময় তারা মুসলিমদের বাড়িঘর ও যানবাহনে হামলা চালায় ।
ডিসেম্বর: হরিয়ানার পালওয়ালের রসুলপুর গ্রামের রাহুল খান নামে এক মুসলিম যুবককে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে খুন করে একদল উগ্র হিন্দু। তারা মুসলিম ছেলেটির বাড়িতে এসে তাকে ধোঁকা দিয়ে বাহিরে নিয়ে এলোপাথাড়ি কুপায়। এর কয়েকদিন পরই ছেলেটি মারা যায়। একটি ভিডিওতে দেখা যায় আক্রমণকারী হিন্দুরা বলছে যে, ‘হাম হিন্দু হ্যায় হিন্দু, তু মোল্লা হ্যায় মোল্লা।
২০শে অক্টোবর: রুদ্রসেনা নামক একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের এক সদস্য ট্রেনের ভীড়ে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে আক্রমণ করে। তার দাবি, মুসলিম ব্যক্তিটি এক হিন্দু মহিলার গায়ে হাত দিয়েছে। মুসলিম ছেলেটি বলেছেন, আমি তো তার দিকে ফিরেও তাকাইনি। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই শেয়ার করেছেন। আক্রমণকারী হিন্দুটি নিজেকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।
১৫ই আগস্ট: উত্তরপ্রদেশের একটি গ্রামে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় একজন মুসলিম ব্যক্তিকে হিন্দুরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। হিন্দুদের দাবি কোনো মুসলিম পতাকা উত্তোলন করতে পারবে না।
২৫শে মার্চ: উত্তর পূর্ব দিল্লির খাজুরী খাস এলাকায় এক মুসলিমকে মারধর করে পাকিস্তান মুর্দাবাদ স্লোগান দিতে বাধ্য করে হিন্দুরা। এ ঘটনার ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল।
১৩ই মার্চ: গাজিয়াবাদের একটি মন্দিরে পানি পান করার জন্য প্রবেশ করেছিল এক মুসলিম কিশোর। এ সময় হিন্দুরা তাকে মেরে মারাত্মকভাবে আহত করে। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
সেপ্টেম্বর ১৬: কর্ণাটকের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন একটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। সেই বিক্ষোভের নিউজ করার জন্য গেলে উর্দু ডেইলির একজন মুসলিম সাংবাদিককে মারধর করে হিন্দুরা।
২০২১ সালে মুসলিমদের উপর হিন্দু সন্ত্রাসীদের আক্রমণের কিছু তথ্য এখানে এসেছে। এভাবেই সমগ্র ভারতজুড়ে মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করে হিন্দু রাষ্ট্র কায়েমের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে হিন্দুরা। মুসলিমদের গণহত্যা চালানোর প্রকাশ্যে হুমকিও দিচ্ছে। কিন্তু তবুও নীরব কথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নিশ্চুপ রয়েছে জাতিসংঘও। কোনো মুসলিম অধ্যুষিত দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে এরা এতদিনে সে দেশকে বোমা মেরে ধ্বংসই করে দিত। কিন্তু আজ মুসলিমদের উপর প্রকাশ্যে গণহত্যার ঘোষণা দিলেও হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না কথিত জাতিসংঘ। কারণ এই জাতিসংঘ মুসলিমদের বন্ধু নয়, বরং চরম শত্রু। এরা মুসলিমদের মুক্তির জন্য কাজ করবে না। মুসলিমদের মুক্তির জন্য নিজেদেরকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়াতে হবে বলে মনে করেন হক্বপন্থী আলেমগণ।
Assalamu alaikum wa rahmatullahi wa barakatuh, খুব ভালো কাজ করছেন
এই নিউজটি ভিডিও আকারে বের হলে ভালো হবে ইনশা আল্লাহ্।
আবিদ ভাই এর সাথে সহমত রইলো ইং শা আল্লাহ্ ,,,,,,,,