হিন্দুত্ববাদীদের একেরপর এক মুসলিম বিদ্বেষী ইস্যুগুলো ভারতীয় মুসলিমদের চরম দুরবস্থায় ফেলেছে। রমজান মাস শুরু হওয়ার পর তাদের আগ্রাসী আচরণ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
রোজার প্রথম সপ্তাহ। রাজস্থানের করৌলি শহরে ভারতীয় মুসলিমরা করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসাকে একটু গুছিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছিল। এমন সময় গেরুয়া স্কার্ফপরা মোটরসাইকেলে শত শত উগ্র হিন্দুত্ববাদী তাদের আশেপাশে আসে। তারা তাদের লাউডস্পীকারে ভলিউম চালু করে এবং একটি ভাষণ বাজায় –
‘হিন্দুরা যেদিন জেগে উঠবে, তার ফল দেখতে পাবে’, ‘যে মাথায় টুপি পরিধানকারীরা প্রণাম করবে এবং ভগবান রামের জয় বলবে’, ‘যেদিন আমার রক্ত ফুটবে, আমি তোমাকে তোমার জায়গা দেখাতে চাই’, ‘তাহলে আমি কথা বলব না, শুধু আমার তরবারি বলবে’, ইত্যাদি।
মুসলমানরা এসময় ভয় ও আতঙ্কে ছিল, সমাবেশটির মাত্রা এবং হুমকি বেড়ে চলে।
এক পর্যায়ে তারা ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র বা হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আহ্ববান জানাতে থাকে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস সেই উস্কানিমূলক সমাবেশ পরিচালনা করে। সমাবেশ শেষে উগ্র হিন্দুরা মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেওয়া দেয়, পাড়ায় পাড়ায় আগুন জ্বলতে থাকে।
পুলিশ, বরাবরের মতো ভিড়ের মধ্যে শান্তভাবে দেখেও হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অবশেষে তারা আবার উল্টো মুসলিম বাসিন্দাদের উস্কানিদাতা তকমা দিয়ে গ্রেফতার করে। অভিযোগ তুলে হিন্দুরা তাদের দেবতা, রামের জন্ম উদযাপন করার সময় হিন্দুদের ওপর মুসলমানরা আক্রমণ করেছিল।
সহিংসতার জন্য স্বাভাবিকভাবেই দায়ী করা হয়েছিল তাদের। আন্তর্জাতিক হলুদ মিডিয়া ঘটনাটিকে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ‘সংঘর্ষ’ বলে বর্ণনা করে। অথচ, হিন্দুরাই মুসলিমদের উপর হামলা চালিয়েছিল। এদিকে হিন্দু প্রতিবেশীদের মুসলমানদের দোকান বয়কট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুসলিমদের উপর হামলার খবর যেন প্রচারিত না হয়, যে জন্য রাজ্য সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে এবং এলাকায় কারফিউ জারি করে। হিন্দুত্ববাদী সরকার ওই এলাকায় ‘টহল’ দিতে ৬০০ পুলিশ অফিসার পাঠিয়েছে।
ঘৃণার বার্তা : গত ১০ দিনে, উপরে উল্লেখিত ঘটনার মতো দৃশ্য ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে দেখা গেছে। রাম নবমী নামে পরিচিত কল্পিত দেবতা রামের জন্ম উদযাপনের ছদ্মবেশে, হাজার হাজার হিন্দু সন্ত্রাসী এবং আধিপত্যবাদীরা কেউ কেউ লাঠি ও তলোয়ার নিয়ে ঘৃণার বার্তা ছড়াচ্ছে এবং মুসলমানদের উসকানি দিচ্ছে। মুসলিমরা প্রতিবাদ করায় হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র বিস্ময়কর বর্বরতার সাথে কাজ করেছে। ১০ এপ্রিল অনুরূপ উস্কানিমূলক আচরণের পর ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মধ্যপ্রদেশের খারগোন জেলায় মুসলিম মালিকানাধীন অন্তত ১৬টি বাড়ি এবং ২৯টি দোকান গুঁড়িয়ে দেয় হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন।
মুসলমানরা কয়েক দশক ধরে ভারতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের পরিধিতে বসবাস করে আসছে। কিন্তু ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মুসলমানরা হিন্দুত্ববাদীদের বলির পাঁঠা হয়ে উঠেছে।
মুসলিম পুরুষদের ওপর হামলা করা হয়েছে এবং ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্যে হিন্দু নারীদেরকে (‘লাভ জিহাদ’) বিয়ে করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মুসলিমদেরকে গো-রক্ষার নামে রাস্তায় হতাহত করছে।
২০২০ সালে মুসলিম সম্প্রদায়কে অমানবিক করার একটি সুস্পষ্ট প্রয়াস চালায়। যে, মুসলমানরা করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। যেটিকে তারা ‘করোনা জিহাদ’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল। কিন্তু গত আট বছরের ভয়ঙ্কর মানদণ্ডেও গত ছয় মাস তাদের আগ্রাসন নজিরবিহীন।
সহিংসতার ডাক :
২০২১ সালের ডিসেম্বরের মতো যেখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আসন্ন গণহত্যায় নিজেদের সশস্ত্র করার জন্য হিন্দুদের একদল সন্ন্যাসীর আহ্বান সম্প্রতি হিন্দুদের‘ক্ষোভ’কে উস্কে দিয়েছিল। ভারতে এখন মুসলিমদের গণহত্যার আহ্বান নিয়মিত এবং সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে।
আক্রমণের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের কয়েকটি পর্বের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে, যেখানে উগ্র হিন্দুরা মুসলিম ফল ব্যবসায়ী, ট্যাক্সি ড্রাইভার এবং হালাল দোকান বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে, যখন মুসলিম মহিলাদের বিভিন্ন কলেজে মাথার স্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই অবস্থায় রাজ্য সরকার এখন মসজিদে লাউডস্পিকার থেকে আজান সম্প্রচার নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে।
শুধুমাত্র গত সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গসহ অন্তত সাতটি রাজ্যে সহিংসতার আহ্বান এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গোয়ায় গেরুয়া পতাকা বহনকারী একটি হিন্দু গোষ্ঠি একটি মসজিদে প্রবেশ করে হামলা চালায়। এ কয়দিনে বেশ কয়টি মসজিদে হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালিয়েছে।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান রাষ্ট্রের লক্ষ্যগুলোর থেকে পৃথক বা বিরোধী কোন ঘটনা ছিল না। তারা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গুজরাটে মুসলিম বিরোধী হত্যাকাণ্ডের পর হয়তো বিশ বছর কেটে গেছে, কিন্তু আজকে তরুণ হিন্দুত্ববাদীদের পুরো প্রজন্ম বিশ্বাস করে যে, মুসলমানদের নির্মূল করলে তাদের জীবন উন্নত হবে। রাজস্থানের কৌরালাইতে আগের সমাবেশে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের বাড়ির বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গান বাজিয়েছিল।
গানগুলোর মধ্যে একটিতে নিম্নলিখিত কথাগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল:
‘আমরা কট্টর হিন্দু, আমরা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করব’
‘আমরা শত্রুদের বাড়িতে প্রবেশ করব এবং তাদের মাথা কেটে ফেলব,
‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে গেরুয়া পতাকা দেখা যাবে, রামের শাসন ফিরবে।
‘শুধু একটি সেøাগান, একটি নাম, প্রভু রামের জয়, প্রভু রামের জয়’।
একজন ২২ বছর বয়সী হিন্দু ব্যক্তি একজন সাংবাদিককে বলেছে যে, ‘যখন আমরা গানটি শুনি, আমরা শক্তিশালী বোধ করি, আমরা অনুভব করি যে, আমরা আশেপাশের প্রতিটি মুসলমানকে হত্যা করতে চাই’।
তাই বিশ্লেষকগণ বলেছেন, ভারতে মুসলিমদের জাতিগত নির্মূলের একটি বড় প্রকল্প চলছে। হিন্দুত্বের যুক্তি অনুসারে- মুসলমানদের ধর্মান্তরিত হতে হবে বা ধ্বংস হতে হবে। ভারতীয় মুসলমানরা এখন অতল গহ্বরের কিনারায় দাড়িয়ে আছে। এখনি সচেতন না হলে পরিণাম হবে ভয়াবহ।
প্রতিবেদক : মাহমুদ উল্লাহ্
তথ্যসূত্র:
1. Police watched Hindutva mob’s violence unfold: Muslims in Gujarat’s Himmatnagar
– https://tinyurl.com/r5swhder
– https://tinyurl.com/352ehnyr
2. Ramdhun played in front of mosque, then war started, police stopped speaker
– https://tinyurl.com/2p92m93f
3. In pictures: Victims of Islamophobic violence in Rajasthan
– https://tinyurl.com/2s76wfxe
4. ভারতীয় মুসলমানদের জন্য শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে
– https://tinyurl.com/2p8mtpx7
It’s True, but all of Muslim political leader are silent. but why? all democratic Muslim leader are Munafiq(Allah known well) they betray them. there are no “Imani” Power that gifted from Allah Sub.Otala. Oh Allah awake them.