ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান প্রশাসন দেশটিতে হেডস্কার্ফ/বোরখা বাধ্যতামূলক করে একটি নতুন ডিক্রি জারি করেছে। দেশটির সনামধন্য আলেমে-দ্বীন ও রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে আফগান সরকার।
বৈঠকের পরে প্রকাশিত সিদ্ধান্তের পাঠ্য লিপিটিতে মৌলভি মুহাম্মদ খালিদ হানাফি, মৌলভি আবদুল হাকিম, মৌলভি নূর মুহাম্মদ সাকিফ, মৌলভি শিহাবুদ্দিন দিলওয়ার, মৌলভি ফরিদুদ্দিন মাহমুদ, মৌলভি নুরুল্লাহ মুনির এবং মৌলভি নূরুল হাকিমের স্বাক্ষর রয়েছে। যারা সবাই দেশটির প্রশিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য উলামা।
“এটাই আমাদের ধর্ম”
বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের দাওয়াতুল ইরশাদ এবং পাপ পুণ্য বিষয়ক মন্ত্রী শাইখ মুহাম্মদ খালিদ আল-হানাফি হাফিজাহুল্লাহ্।
মন্ত্রী হানাফি সাহেব আফগান নারীদের সম্পর্কে বলেন, “আমরা চাই আমাদের বোনেরা নিজেদের সতীত্ব, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে বাঁচুক।” আর ইসলাম অন্য যে কোনও ধর্মের চেয়ে নারীদের বেশি অধিকার দিয়েছে।
বৈঠকে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ্ মুজাহিদও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পেশ করেন। এসময় তিনি পবিত্র কোরানের আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “আপনারা জাহেলিয়াতের যুগের মতো বিচরণ করবেন না, নিজেদেরকে প্রকাশ করবেন না।” তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ইমারাতে ইসলামিয়া কর্তৃক ঘোষিত নারীদের পর্দা সম্পর্কিত নীতিগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া শরয়ী আদেশ।
একইভাবে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট অব ডিস্টিনশনের পরিচালক শাইখ মোহাম্মদ শরীফ হাফিজাহুল্লাহ বলেন, “হিজাব পালনের নির্দেশ ইমারাতে ইসলামিয়ার দেওয়া কোন মনগড়া আদেশ নয়! বরং এটি তো মহান রবের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি ফরজ বিধান। যা আমাদের সবাইকে অবশ্যই মানতে হবে”।
এদিকে বৈঠকে উপস্থিত প্রায় সকল আফগান প্রশাসক জোর দিয়েছেন যে, “তাঁরা ইসলামী বিধান বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক চাপের কাছে মাথা নত করবেন না।”
নতুন এই সিদ্ধান্তে কি কি অন্তর্ভুক্ত?
আফগান প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত সিদ্ধান্তের পরিধির মধ্যে নারীদের পর্দার বিষয়ে কিছু নীতিমালা রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে নারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ক্লান্তিকর এবং পদ্ধতিগত অবক্ষয়মূলক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও, আফগানিস্তানের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এখনও গভীরভাবে ইসলামী নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যারা পর্দার এই নীতি বহুকাল ধরেই মেনে চলেন। তারপরেও আমরা উল্লেখ করছি, মহিলাদের জন্য পর্দা ইসলামী শরিয়াহ্ কর্তৃক নির্ধারিত নীতিগুলোর মধ্যে একটি। তাই ইসলামি শরীয়াহ্ ভিত্তিক হিজাব/বোরকা প্রত্যেক সম্ভ্রান্ত এবং প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম মহিলার জন্য বাধ্যতামূলক।”
ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে যে, হিজাব এমনভাবে হওয়া উচিত, যা শরীরের গোপনাঙ্গ সম্পূর্ণরূপে ঢেকে রাখে এবং শরীরের রেখা/ভাজ প্রকাশ না করে। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে যারা ছোট বা অতি বৃদ্ধ, তারা ব্যতীত সকল নারীর জন্য পর্দা বাধ্যতামূলক।
মাহরাম পুরুষ ব্যতীত অন্য পুরুষদের সাথে কথা বলার সময় মহিলাদের চোখ বাদ দিয়ে তাদের সমস্ত মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ যারা ইসলামী অর্থে তাদের সাথে দেখা করার জন্য উপযুক্ত নয়।
বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে যে, “হিজাব হল মুসলিম এবং সতী মহিলাদের এক বিশেষাধিকার।” যা মহিলাদের সুরক্ষা দেবে এবং তাদের উদ্ভট অধঃপতনের অধ্যয়ন থেকেও দূরে রাখবে।
আফগান প্রশাসন জোর দিয়েছে যে, এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে জনসাধারণের সাথে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হবে। সেই সাথে এই বিষয়টি মিডিয়াতে ঘন ঘন কভার করা হবে।
এই বিধান অমান্য করার সম্ভাব্য শাস্তি
বিবৃতিতে, পর্দার বাধ্যবাধকতা না মেনে চলার ক্ষেত্রে যেসব শাস্তি প্রয়োগ করা হবে সেগুলিরও বিশদ বিবরণ ছিল। তদনুসারে, যদি কোনও মহিলা পর্দা/হিজাবের নিয়ম লঙ্ঘন করে, তবে প্রথমে তাকে এবং তার পরিবারের পুরুষদের সতর্ক করা হবে। দ্বিতীয় লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে, মহিলার পরিবারের একজন পুরুষকে ইমারাতের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছে ডাকা হবে এবং আবারও একটি সতর্কবার্তা দেওয়া হবে। তৃতীয়বার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে, মহিলার পরিবারের অবিভাবক পুরুষকে ৩ দিনের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হবে। আর ক্রমাগত লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে, এই শাস্তি বৃদ্ধি করা হবে।
অপরদিকে, সরকারী সেক্টরে কর্মরত নারীরা পর্দা নিয়ম না মানলে তারা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন না। নারীরা হিজাবের নিয়ম লঙ্ঘন করলে ঐ পরিবারের পুরুষদেরও চাকরিচ্যুত করা হবে।
আলহামদোলিলাহ । اللهم أيّدهم بايد المتين وفقهم لما تحب وترضى
মাশাল্লাহ, মুমিনরা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করেনা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সামনে মাথা নত করতে পারেনা।
আলহামদুলিল্লাহ, শরয়ী আইন অনুযায়ী পর্দার বিধানে কড়াকড়ি আরোপ ; একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।
জাযাহুমুল্লাহু খাইরান!
Mashallah