পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ায় পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের চাইতেও অধিক ভূমির উপর কর্তৃত্ব করছেন ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাব প্রশাসন, বিশেষ করে দেশের পুরো দক্ষিণাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের সিংহভাগ এলাকা। শাবাবের ক্রমবর্ধমান এই অগ্রযাত্রা বিপাকে ফেলে দিয়েছে পশ্চিমা সমর্থিত মোগাদিশু প্রশাসনকে।
এমন পরিস্থিতিতে আফ্রিকার ৯টি দেশের সম্মিলিত জোট, জাতিসংঘ, ক্রুসেডার আমেরিকা ও সেক্যুলার তুরষ্ক সহ মোট ২৩টি দেশের সর্বাত্মক সহায়তা নিয়ে আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় যুদ্ধে নেমেছে মোগাদিশু সরকারি বাহিনী। কিন্তু তাতেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন সফলতা পায়নি পশ্চিমা সমর্থিত সোমালি সামরিক বাহিনী।
সাম্প্রতিক এই যুদ্ধ নিয়ে সেনাদের সামনে এক বক্তব্যকালে, সোমালি প্রশাসনের কমান্ডার আলি-দিনলাবা জানায়, তাদের বাহিনী শুধু বাল’আদ শহরের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং শহরের আশপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকা আশ-শাবাব থেকে দখল করতে দীর্ঘ একসপ্তাহ যাবৎ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এতে ৩০০ সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আরও শতাধিক সৈন্য আহত হয়েছে। (যদিও বাস্তব সংখ্যা আরও অনেক বেশি)
এটা ছিলো সোমালি বাহিনীর ৩ কিলোমিটার এলাকা দখলের সামান্য একটি চিত্র। তাও তাদের এই বিজয় ছিলো সামান্য সময়ের জন্য। কেননা একসপ্তাহের তীব্র লড়াইয়ে ৩ শাতাধিক সৈন্য হারিয়ে যেই এলাকার দখল নিয়েছে সোমালি বাহিনী, তা হারাকাতুশ শাবাব ফের দুদিনের লড়াইয়ে পুনরুদ্ধার করেছে। এখানেও আরও ডজনকে ডজন সোমালি গাদ্দার সৈন্য হতাহত হয়েছে।
মোগাদিশু প্রশাসনের নেতা হাসান শেখ মাহমুদ ক্ষমতায় আসার পরপরই ঘোষণা করে যে, তার সরকার যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ বাহিনী আশ-শাবাবকে নির্মূল করবে এবং আশ-শাবাবের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলি দখল করবে। হাসানের এই বক্তব্যের পর আশ-শাবাব প্রশাসনও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা করে এবং তাঁরা সোমালি বাহিনীকে বিভিন্ন ময়দানে পরাজিত করে। ফলে উভয় বাহিনীর মাঝে যুদ্ধ তীব্র থেকে আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
এই যুদ্ধে সোমালি সরকার কুফ্ফার বিশ্বের সাহায্য নিয়ে শাবাবের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরে নতুন করে তীব্র লড়াইয়ে জড়িয়েছে। এতে সোমালি বাহিনী উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি করতে পারেনি। কেননা তারা যে এলাকাগুলো শাবাব থেকে দখল করছে- তা কয়েকদিনের মাথায় ফের শাবাব প্রশাসনের সামরিক বাহিনী পুনরুদ্ধার করছেন।
তবে এখন পর্যন্ত সোমালি বাহিনী হারাকাতুশ শাবাবের নিয়ন্ত্রণে থাকা গুরত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র আদান-ইয়াবালের দখল নিতে সক্ষম হয়েছে। তাও সেখানের পথেঘাটে সোমালি বাহিনী বের হতে ভয় পাচ্ছে। প্রতিটি সময় ভয় আর উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়েই শহরে অবস্থান করছে মোগাদিশু সরকারি বাহিনী।
কেননা শহরটি শাবাব যোদ্ধারা কোনো প্রতিরক্ষা করা ছাড়াই কৌশলগত কারণে সোমালি বাহিনীর হাতে ছেড়ে চলে গেছে। আর শহরের প্রতিরক্ষা না করে শাবাবের এভাবে চলে যাওয়াটাই সোমালি বাহিনীর জন্য সবচাইতে ভয়ের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
ইতিপূর্বেও বেশ কিছু শহরে এমন ঘটনা ঘটেছে। যেখানে শাবাব যোদ্ধারা কয়েকদিনের মাথায় শত শত যোদ্ধা ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালান এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। আর এধরণের লড়াইয়ে আশ-শাবাব সবচাইতে বেশি লাভবান হচ্ছেন। কেননা এতে তাঁরা সোমালি বাহিনীকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারেন এবং শহরে সোমালি বাহিনীর নিয়ে আসা শত শত সাঁজোয়া যান, অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম গনিমত হিসাবে লাভ করার সুযোগ পাচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ্।
পশ্চিমা বিশ্ব, সেক্যুলার তুরস্ক আর আফ্রিকান গাদ্দার-কুফফার জোটবাহিনীগুলো তাই বাজেভাবে আল-কায়েদা তথা আশ-শাবাবের জালে ফেঁসে গেছে। না তারা বের হতে পারছে, না তারা থাকতে পারছে; আর লক্লজ্জার ভয়ে না পারছে সবকিছু ছেড়ে লেজ গুঁটিয়ে পালাতে।
পরিস্থিতির আলোকে তাই একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, পূর্ব-আফ্রিকায় হক্ক-বাতিলের যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ এখন প্রায় সম্পূর্ণই আল্লাহ্র দ্বীনের মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে; আর সেখানে আরেকটি সফল ইসলামী ইমারার গঠন এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লিখেছেন : আলী হাসনাত