গাযওয়াতুল হিন্দের পদধ্বনি: ইসলাম প্রতিষ্ঠা ঠেকাতে ভিএইচপির তিন দিনের বৈঠক

উসামা মাহমুদ

0
1447

ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি হিন্দুত্ববাদীদের চিরাচরিত বিদ্বেষ তারা কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করে চলেছে। যে ভারতে মুসলিমরা প্রায় হাজারো বছর বীরদর্পে শাসন করেছেন, সেখানে আজ মুসলিমদেরকেই শেষ করে দেওয়ার লীলনকশা তৈরী করছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। তারা চায় মুসলিমরা যেন আর মাথা উচু করে দাঁড়াতে না পারে। সেই লক্ষেই তারা বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।

তারই অংশ হিসেবে এবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উগ্র নেতারা গত ০১ জানুয়ারী রবিবার থেকে সংস্থার সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ অ্যান্ড গভর্নিং কাউন্সিলের তিন দিনের বৈঠক করেছে। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, ভারতে ইসলামের অগ্রগতি রুখে দেওয়া। ভারতের কোনো অংশ যেন দারুল-ইসলাম না হয়ে যায় সেজন্য যথাযথ ব্যাবস্থা নেওয়া। পরে ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সংকল্প নিয়ে তিন দিনের ভিএইচপি বৈঠক শেষ হয়েছে।

সভা শেষে ভিএইচপি-র ট্রাস্ট বোর্ড হিন্দু সমাজের সকল শ্রেণীর কাছে “দেশবিরোধী প্রবণতাকে” (ইসলামের অগ্রগতিকে) পৃষ্ঠপোষকতা না করার জন্য আবেদন করে। এর পাশাপাশি রাজ্যগুলোর সরকারকে “নিয়ন্ত্রণ” করার জন্য মাদ্রাসাগুলোতে ‘বহির্ভূততা’, ‘চরমপন্থা’ এবং ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ শেখানো হয় বলে অভিযোগ করে।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উগ্র নেতারা বলেছে, “কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত ধর্মান্তরকরণ এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা। সারা দেশে ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) পাস করা উচিত এবং প্রয়োগ করা উচিত।”

ভিএইচপি জানিয়েছে, ২৪ টিরও বেশি দেশ থেকে কর্মীরা বৈঠকে এসেছিল এবং ৩০ টিরও বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। ভিএইচপি সভাপতি অলোক কুমার বলেছে যে “ধর্মের বিষাক্ত প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য বিশ্বব্যাপী একটি ব্যাপক নীতির প্রয়োজন।”

সে আরো বলেছে, সংস্থাটি ২০২৩ সালে অস্তিত্বের ৬০ বছর পূর্ণ করেছে, তাই তারা ভারতের কোনো অংশ যেন দারুল-ইসলাম হয়ে না যায় সেজন্য একটি প্রস্তাব পাস করেছে।

উল্লেখ্য, ভারতে মুসলিমদের অবস্থা এমন পর্যায়ে নেই যে তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে ফেলবে। তারপরেও হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ তারা জানে, রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ হিন্দের ব্যাপারে ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন। যা অবশ্যই সত্যি হবে। তাই তারা আগে থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, হিন্দের মুসলিমরা এখনো এ ব্যাপারে উদাসিন হয়ে আছেন।

হিন্দের ব্যাপারে হাদিসে বেশ কিছু রেওয়াত পাওয়া যায়, যা একজন মুসলিমকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট। কয়েকটি হাদিস নিচে দেওয়া হলো:

১.আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু’আনহু) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ আমাকে বলেছেন যে, “এই উম্মাহর মধ্যে একটি দল সিন্ধ এবং হিন্দ এর দিকে অগ্রসর হবে।”
হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু’আনহু) বলেন, “আমি যদি এই অভিযানে শরীক হতে পারতাম এবং শহীদ হতে পারতাম তাহলে উত্তম হত; আর যদি আমি গাজী হয়ে ফিরে আসতাম তবে আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম, যাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিতেন।” (সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)

২.নবীজী মুহাম্মাদ ﷺ এর আজাদকৃত গোলাম হযরত সাওবান (রাদিয়াল্লাহু’আনহু) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ বলেছেন,

“আমার উম্মতের দুটি দল এমন আছে, আল্লাহ যাদেরকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ করে দিয়েছেন। একটি হল তারা, যারা হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আরেক দল তারা যারা ঈসা ইবনে মারিয়ামের সঙ্গী হবে।” (সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)

৩. হযরত সাওবান (রাদিয়াল্লাহু’আনহু) হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু’আনহু) কে বলতে শুনেছেন যে রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, “অবশ্যই আমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন, আর তারা রাজাদের শিকল/বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে এবং আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন (এই বরকতময় যুদ্ধের দরুন) এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে তারা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আলাইহি’ওয়াসাল্লাম) কে শামে (সিরিয়া) পাবে।”

হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু’আনহু) বলেন, “আমি যদি সেই গাযওয়া পেতাম, তাহলে আমার সকল নতুন ও পুরাতন সামগ্রী বিক্রি করে দিতাম এবং এতে অংশগ্রহণ করতাম। যখন আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়াতা’আলা আমাদের সফলতা দান করতেন এবং আমরা ফিরতাম, তখন আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম; যে কিনা শামে (সিরিয়ায) হযরত ঈসা (আলাইহি’ওয়াসাল্লাম) কে পাবার গর্ব নিয়ে ফিরত। ওহ রাসূলুল্লাহ ﷺ! সেটা আমার গভীর ইচ্ছা যে আমি ঈসা (আলাইহি’ওয়াসাল্লাম) এর এত নিকটবর্তী হতে পারতাম, আমি তাকে বলতে পারতাম যে আমি রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ এর একজন সাহাবী।”
বর্ণনাকারী বলেন যে রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ মুচকি হাসলেন এবং বললেন, “খুব কঠিন, খুব কঠিন!” (আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০৯)



তথ্যসূত্র:
——–
1. Three-day VHP meet concludes with resolve to fight ‘religious dogmatism’ ( Deccan Herald )
https://tinyurl.com/kzyfz8xy
https://tinyurl.com/445fnycm
https://tinyurl.com/26sy4kyz

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় স্বনির্ভরতা প্রোগ্রাম চালু করবে ইসলামি ইমারত
পরবর্তী নিবন্ধমালির রাজধানী বামাকোতে একযোগে ২টি সফল হামলা আল-কায়েদার: নিহত ৫