ফিলিস্তিনের উত্তর গাজার জাবালিয়া শরনার্থী ক্যাম্প ও এর আশপাশে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ভারী হামলার শিকার হয়েছে জায়োনিস্ট ইসরায়েলি বাহিনী। এলাকাটিতে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ২৪ ঘন্টার তীব্র আক্রমণে জায়োনিস্ট বাহিনীর অন্তত ৯২ সেনা ও উচ্চপদস্থ অফিসার হতাহত হয়েছে।
গত ৭ মাস আগে ইসরায়েলি বাহিনী আকাশ ও স্থল পথে হামলা ও বোমাবর্ষণ করে উত্তর গাজাকে প্রায় মাটির সাথে গুড়িয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী অঞ্চলটিতে এমন বর্বরোচিত হামলার পর দাবি করেছিল যে, এই অঞ্চলের প্রতিরোধ যুদ্ধকে তারা পুরোপুরি নির্মূল করেছে এবং এলাকাটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। কিন্তু জায়োনিস্ট বাহিনীর এমন দাবি ও এলাকাগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার পরেও এই অঞ্চলে প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে পুনর্গঠিত এবং নতুন নতুন কৌশলে হামলা চালাতে দেখা যায়। সর্বশেষ জায়োনিস্ট আগ্রাসনের ৭ মাস পর গত ১৪ মে, বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে উত্তরাঞ্চলে জায়োনিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক সংখ্যক হামলা চালান প্রতিরোধ যোদ্ধারা।
সূত্রমতে, এদিন ২৪ ঘন্টার বেবদানে শুধু উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়াতেই ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তত ৩৩টি আক্রমণ চালিয়েছেন মুজাহিদগণ। এটি ২০২৪ সালে একদিনে নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রমণের রেকর্ড। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এদিনের অভিযানে শত্রু বাহিনী ব্যাপক হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়।
ক্ষয়ক্ষতির এই তালিকায় জায়োনিস্ট বাহিনীর ধ্বংস হওয়া ট্যাংকের সংখ্যা ছিল ১১টি, এপিসি ৩টি, ডি-9 বুলডোজার ২টি এবং একটি ড্রোন ও ২টি রোবট। আর হতাহতের তালিকায় নিহত জায়োনিস্ট বাহিনী সংখ্যা হচ্ছে ৩২ সেনা ও অফিসার, আহত আরও ৬০ এরও বেশি জায়োনিস্ট। যদিও ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এদিনের অভিযানে মাত্র ১ অফিসার ও ৭ সেনা নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে।
উত্তরাঞ্চলে জায়োনিস্ট বাহিনী এমন একসময় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে ভয়ঙ্কর সময় পার করছে, যখন ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো গাজার দক্ষিণে রাফাহ শহরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। ইসরায়েল দাবি করে আসছিল যে, তারা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সবকটি ব্যাটেলিয়ানকে নির্মূল করছে। শুধু রাফাহ শহরে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অবশিষ্ট ৪টি ব্যাটেলিয়ান রয়ে গেছে। আর এই ব্যাটেলিয়ানগুলোকে ধ্বংস করতেই রাফাহ শহরে তারা অভিযান চালাচ্ছে।
কিন্তু ইসরায়েলের এমন দাবিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিরোধ যোদ্ধারা গাজার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের একযোগে ক্ষিপ্রতার সাথে অভিযান চালাচ্ছেন। আল-কাসসাম সহ অন্যান্য প্রতিরোধ বাহিনীগুলো গাজার ধ্বংসস্তুপের নিচে সুড়ঙ্গের সুবিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জায়োনিস্ট বাহিনী ও তাদের অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যানগুলোকে ধ্বংস করছেন। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এমন আক্রমণ এটাই নিশ্চিত করে যে, গাজায় জায়োনিস্ট বাহিনী তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যার্থ হয়েছে এবং তারা নিজ দাবিতে মিথ্যা ছিলো; বিপরীতে জায়োনিস্ট বাহিনী এই অঞ্চলে শুধু বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞই চালিয়েছে।