থামছেই না ধর্ষণ

0
1303
থামছেই না ধর্ষণ

সম্প্রতি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ধর্ষণ। রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন তরুণী থেকে বৃদ্ধা। এমনকি শিশুরাও বাদ পড়ছে না পাশবিক নির্যাতন থেকে। অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষণের বিভিন্ন ঘটনায় ধর্ষককে সহযোগিতা করছেন নির্যাতিতার আপনজনরাই।

সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। জানা গেছে, কামরাঙ্গীচরের ব্যাটারিঘাট এলাকায় বাবার সহায়তায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পরপরই গত মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে কিশোরীকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

সোনিয়া পারভিন নামে একজন মানবজমিনকে জানান, এর আগে কামরাঙ্গীরচর ব্যাটারিঘাট এলাকায় থাকে কিশোরীর পরিবার। তার মা বিদেশে থাকেন। বাবা একটি মুরগীর দোকানে কাজ করে। দোকানের মালিক আবুল (৩৫) কিশোরীর বাবার কাছে ছয় হাজার টাকা পায়। সেই টাকা দিতে পারছিল না কিশোরীর পিতা। একপর্যায়ে টাকার বিনিময়ে তার মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চায় দোকানের মালিক আবুল। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর কয়েকদিন আগে কিশোরীর বাবার সহায়তায় তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাশের বাসার এক নারীর কাছে সব ঘটনা খুলে বলে।

এদিকে, হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর এলাকায় চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে আট বছরের এক শিশুকে ধষর্ণের অভিযোগ ওঠেছে। অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে মঙ্গলবার রাত ১২টায় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে সকালে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো সকালে ওই শিশুর বাবা-মা তাকে ঘরে একা রেখে কাজে চলে যায়। এ সুযোগে প্রতিবেশী শাহীন মিয়া চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে তার নিজ ঘরে নিয়ে যায় শিশুটিকে। পরে দরজা বন্ধ করে মুখে কাপড় দিয়ে তাকে ধর্ষণ করে অসুস্থ অবস্থায় তাদের ঘরে রেখে যায়। সন্ধ্যায় কাজ শেষে বাবা-মা বাড়ি ফিরলে শিশুটি ধর্ষণের ঘটনা তাদেরকে জানায়। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শাহীন ওই গ্রামের ভাড়াটিয়া বাসিন্দা।

কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজের একাদশ দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বান্ধবীসহ গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে সদরের ওয়াপদা (স্টেডিয়াম) এলাকায় গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের শিকার দুজনই মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শেখ রিজাউল হক দিপু নামে একজন জানান, গত ১১ই জানুয়ারি, শনিবার বিকেলে আশুলিয়ার কুরগাঁও এলাকায় বাড়ির পাশের একটি মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল সাত বছরের এক শিশু। এসময় প্রতিবেশি আলহাজ কৌশলে শিশুটিকে মাঠের একপাশে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে শিশুটি চিৎকার দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে গিয়ে তার পরিবারকে জানায়। এছাড়া সাভারের আড়াপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে নয়ন মোল্লা নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে জানান, কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বান্ধবীসহ গণধর্ষণের ঘটনা চাউর হওয়ার পর জেলাজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ক্ষোভে সোচ্চার মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজসহ আশেপাশের কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শহরের  মধ্যে ধর্ষকদের এমন দুঃসাহসিকতায় হতবাক সচেতন মহল। তারা এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। মঙ্গলবার বিকালের দিকে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবের সামনে এসে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের এক ছাত্রী (১৮) ও তার বান্ধবী (২০) উঠেন। কিছুক্ষণ পর যাত্রীবেশে চারজন ছেলে ওই সিএনজি অটোরিকশাতে উঠে। তারা চালককে সিএনজি ঘুরিয়ে তাদের কথামতো চালিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়। চালক তাদের কথামতো গাড়ি নিয়ে চলে। ওই চারজন গাড়ির পর্দা টেনে দুই বান্ধবীর হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে শহরের ওয়াপদা স্টেডিয়াম এলাকার পেছনে একটি ঝোপে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের মারধর করে মোবাইল ফোন, বই ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাদের পালাক্রমে ধর্ষণ করে। দু’জনকে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এবিষয়ে ধর্ষিত কলেজছাত্রী বাদী হয়ে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেন।

মো. আলমঙ্গীর হোসেন নামে একজন মানবজমিনকে জানান, ধর্ষিতাদের বাড়ি সদর উপজেলার বাউরভাগ গ্রামে।

হবিগঞ্জ থেকে জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগরে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে ৮ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে মঙ্গলবার রাত ১২টায় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সূত্র মতে প্রতিদিনের ন্যায় সকালে ওই শিশুর বাবা-মা তাকে ঘরে একা রেখে কাজে চলে যায়। এ সুযোগে প্রতিবেশী শাহীন মিয়া চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে তার নিজ ঘরে নিয়ে যায় শিশুটিকে। সেখানে দরজা বন্ধ করে মুখে কাপড় দিয়ে তাকে ধর্ষণ করে অসুস্থ অবস্থায় তাদের ঘরে রেখে যায়। সন্ধ্যায় কাজ শেষে বাবা-মা বাড়ি ফিরলে শিশুটি ধর্ষণের ঘটনা তাদের অবগত করে। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। শাহীন ওই গ্রামের ভাড়াটিয়া বাসিন্দা। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রথীন্দ্র দেব দৈনিক মানবজমিনকে জানান, শিশুটিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট পরে দেয়া হবে।

সাভার থেকে জানা যায়, সাভারের আশুলিয়ায় বকেয়া বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় স্বামীকে আটকে রেখে এক নারী শ্রমিককে (২৪) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার গভীর রাতে আশুলিয়ার পশ্চিম জামগড়া এলাকার ফকির বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। বাড়ির মালিক মো. কালাম (৪৫) পেশায় একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ী। সে আশুলিয়ার পশ্চিম জামগড়া এলাকার ফকির বাড়ির বাসিন্দা। ভুক্তভোগী নারী শ্রমিকের অভিযোগ, তিনি পশ্চিম জামগড়া এলাকায় মো. কালামের বাড়ির একটি কক্ষে ভাড়া থেকে ডিইপিজেডের একটি তৈরি পোশাক কারাখানায় চাকরি করেন। সোমবার রাতে পরিবহন চালক স্বামীকে নিয়ে তিনি নিজ কক্ষেই ছিলেন। একপর্যায়ে রাত ১২টার দিকে বাড়ির মালিক কালাম তার পাঁচ সঙ্গী নিয়ে বকেয়া ডিসেম্বর মাসের ২ হাজার টাকা ভাড়ার জন্য আসেন। এসময় কারখানায় তাদের বেতন পরিশোধ করা হয়নি বলে বাড়ির মালিককে জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পরে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে আটক রেখে জোরপূর্বক তার স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ও নাকের ফুল খুলে নেয় তারা। একপর্যায়ে তিন জন মিলে তার হাত-পা চেপে ধরলে প্রথমে বাড়ির মালিক তাকে ধর্ষণ করে। পর্যায়ক্রমে বাকি তিনজন ভোর ৪টা পর্যন্ত তাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়।
চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, চিরিরবন্দরে ৬ বছরের এক শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার অমরপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের পশ্চিম মিলপাড়ার আশরাফ আলীর নির্মাণাধীন বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ওই দিন দুপুরে শিশুটি বাড়ির সামনে অন্যান্য শিশুদের সাথে খেলা করছিল। এসময় মোরসালিন ওই শিশুটিকে কৌশলে আশরাফ আলীর নির্মাণাধীন বাড়ির ভিতর নিয়ে যায় এবং জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় শিশুটির চিৎকারে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে ছুঁটে এলে ধর্ষক মোরসালিন পালিয়ে যায়। শিশুটিকে উদ্ধার করে চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে বিকেলে তাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধধাক্কা লাগায় শিশুকে নির্যাতন, ধরা খেলো সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ নেতা
পরবর্তী নিবন্ধগৃহবধূকে ধর্ষণ করে ধরা খেলো সন্ত্রাসী হিন্দু যুবলীগ নেতা