রাজশাহী মহানগরীর দক্ষিণে চরখিদিরপুর এলাকায় পদ্মার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সীমান্তের জিরোলাইন। ইতিমধ্যে সীমান্তের কিছু অংশের আধিপত্য হারিয়েছে বাংলাদেশ। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুরো এলাকার একক আধিপত্য হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, পবা উপজেলার চরখিদিরপুর ও খানপুর এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন ওইসব গ্রামের শত শত মানুষ। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে সরকার স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে পদ্মা গ্রাস করছে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সীমান্তের জিরোলাইন। ইতিমধ্যে সীমান্তের যে অংশের জিরোলাইন পদ্মায় বিলীন হয়েছে, ওই এলাকায় একক আধিপত্য হারিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। ভাঙন অব্যাহত থাকলে পুরো এলাকায় বাংলাদেশের একক আধিপত্য হারানোর আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। পবার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, রাজশাহী সীমান্তের চরখিদিরপুরের অবস্থা খুবই ভয়াবহ।
ইতিমধ্যে ওই এলাকার ৪০০ পরিবার ঘর-বাড়ি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। বজলে রিজভি আল হাসান মুঞ্জিল জানান, প্রতি বছরই নদী ভাঙনের কারণে ভূমি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। চরের মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে যাচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান বলেন, প্রতি বছর গড়ে ৫ থেকে ৮ হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। এতে করে সীমান্তে বাংলাদেশের আধিপত্য কমছে। এর আগে ১৭৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল খানপুর সীমান্তের জন্য। কিন্তু সরকারি অনুমোদন না পাওয়ায় সেটি আর করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বর্ষায় পদ্মা নদীর দক্ষিণ সীমান্তের ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫০০ মিটার প্রস্থ ভূখ- পদ্মায় হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওই ভাঙনে রাজশাহীর পবা উপজেলায় ভাঙনকবলিত হরিয়ান ইউপির চর খিদিরপুর ও খানপুরের মধ্যবর্তী কলাবাগান এলাকার ১৬৪ নম্বর মেইন পিলার থেকে ১৬৫ নম্বর মেইন পিলার পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখ- নদীতে বিলীন হয়ে ভারতীয় সীমানায় মিশেছে পদ্মার পানি। এরপর থেকেই পদ্মার ওই অংশে বিএসএফ নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর হয়ে ওঠে।
প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে ভারতের মোহনগঞ্জ থেকে বিএসএফ তাদের ক্যাম্প এনে নদীর তীরে স্থাপন করে। এবারও বর্ষায় ভাঙন অব্যাহত আছে। ফলে দেশের আরও জমি ভারতের অধীনে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গেল কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙনে ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শত শত হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের সীমানা পিলারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে প্রতি বছরই সীমান্ত নদীগুলোর ভাঙনে মূল্যবান জমি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। ক্রমাগত ভাঙনে জমি পদ্মা নদীতে তলিয়ে গেছে।
ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগম বলেন, হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চর তারানগর, চর খিদিরপুর, দিয়াড় খিদিরপুর, চর তিতামারি, দিয়াড় শিবনগর, চরবৃন্দাবন, কেশবপুর, চর শ্রীরামপুর ও চর রামপুরের বেশির ভাগ জমিই পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও বিলীন হতে বসেছে। আর পদ্মার তীর ভেঙে ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করলেই ভারতীয় শাসন প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা আছে। এরই মধ্যে সীমান্ত পিলার নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় ওই এলাকায় পদ্মায় মাছ ধরতে দিচ্ছে না বিএসএফ। এতে বাংলাদেশের জেলেরা বেকার হয়ে পড়ছে।
সূত্র জানায়, পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙনে এরই মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চর তারানগরে ২০০ ঘরবাড়ি, চারটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বিতল আশ্রয় কেন্দ্র, খানপুর বিজিবি ক্যাম্প এবং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১৬৪ ও ১৬৫ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আর ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চর খিদিরপুরে প্রায় ৪০০ বাড়ি, একটি বিজিবি ক্যাম্প, একটি পাকা দ্বিতল প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি মসজিদ, দুটি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১৫৯-এর এস-৩, ৪, ৫ নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এ দুই ওয়ার্ডে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। বিডি প্রতিদিন