নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধেই শুরুর পরিকল্পনা ঘোষণায় শিক্ষকরা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। ইতোমধ্যেই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়েছে, তার মধ্যে বেশ কটিতে করোনা সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক-ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ অবস্থায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং হাইস্কুলে ক্লাস শুরু হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে আশঙ্কায় অনেক শিক্ষক অবসর গ্রহণের আবেদন জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে দেয়ার দরখাস্তও করেছেন।
কিন্ডার গার্টেন থেকে দ্বাদশ গ্রেডের শিক্ষকেরাই চাকরি ছাড়া অথবা অবসর গ্রহণের অধিক আবেদন করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্ক এভাবে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে এক ধরনের হতাশায় ফেলেছে বলে শিক্ষা-বিশেষজ্ঞ এবং সমাজবিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন। প্রসঙ্গত, ইউনিভার্সিটি অব অ্যালাব্যামায় সম্প্রতি ক্লাস শুরু হয়েছে। সেখানে এখন করোনাভাইরাস পজিটিভ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। আর স্টাফদের ১৬৬ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ফল পজিটিভ এসেছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট স্টুয়ার্ড বেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আমরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি দেখছি তা মেনে নেওয়া যায় না। এ পরিস্থিতিতে আমরা ক্যাম্পাসে আমাদের সেমিস্টার শেষ করতে পারব কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত। এখন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময়।’
অ্যালাব্যামা ছাড়াও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৭৪ জন করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জর্জিয়া কলেজ এন্ড স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শনাক্ত হয়েছে ৫৩৫ জন এবং নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে নতুন দুটি গুচ্ছ সংক্রমণ ধরা পড়েছে। অর্থাৎ গত মার্চে যে আশংকায় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, তা এখনও দূর হয়নি বলে স্বাস্থ্য-বিজ্ঞানীরা মন্তব্য করছেন।
এরপরেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চাঙ্গা করতে যেভাবে লকডাউন শিথিলের ঘটনা ঘটেছে, একইভাবে লকডাউনে থাকতে থাকতে তরুণ প্রজন্মে সৃষ্ট হতাশা-দুশ্চিন্তা দূর করতে কর্তৃপক্ষ স্কুল/কলেজ/ভার্সিটি খোলা-কে গুরুত্ব দিচ্ছে। যদিও ইতিমধ্যেই নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্থানের শিক্ষকরা ক্লাস শুরুর আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ তথা করোনা মুক্ত হিসেবে নিশ্চয়তা বিধানের দাবি জানিয়েছেন।
অন্যথায় তারা ক্লাসে যাবেন না বলেও হুমকি দিয়েছেন। অনেক সিটির শিক্ষক সমিতি ধর্মঘটের হুমকিও দিয়েছেন। তারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ একেবারেই কমেছে এবং ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে-এমন সময়ে ক্লাস শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন। কিছু কিছু স্টেট প্রশাসন সে অনুরোধে সাড়া দিলেও অধিকাংশেই এখন পর্যন্ত করোনা বিস্তার রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
ফ্লোরিডা স্টেটের শিক্ষকেরা উল্লেখ করেছেন, ঘরে বসে দিনভর অনলাইনে ক্লাস পরিচালনায় তারা হাঁপিয়ে উঠেছেন। আরিজোনা হাই স্কুলের শিক্ষকরা বলেছেন যে, কর্তৃপক্ষ চাপ দিচ্ছেন স্কুল খোলার জন্যে। এটি কোনভাবেই নিরাপদ নয় ছাত্র-শিক্ষকের জন্যে। এ অবস্থায় চাকরি ছেড়ে দেয়ার বিকল্প নেই। সবচেয়ে বেশী উদ্বেগ বিরাজ করছে নিউইয়র্কের শিক্ষকদের মধ্যে। ১০ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার তারিখ ধার্য করা হয়েছে সকল অনুরোধ-উপরোধ উপেক্ষা করে।
এর ফলে আগাম অবসরে যাবার ঘটনা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০% বেড়েছে। জুলাই থেকে মধ্য অগাস্ট পর্যন্ত ৬৫০ জন শিক্ষক অবসরে যাবার আবেদন জানিয়েছেন বলে শিক্ষা বিভাগের সূত্র জানায়। ফ্লোরিডার একটি স্কুল ডিস্ট্রিক্টের ৫৮ জন অবসরে এবং ২৫২ জন চাকরি ছেড়ে দেয়ার দরখাস্ত দিয়েছেন। .
এদিকে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হিসাবে ৩০ অগাস্ট পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৬০ লাখের বেশি মানুষ। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার জনের।
বিডি প্রতিদিন