শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২৬-২৭ মার্চ ঢাকা সফরে আসছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কসাই নরেন্দ্র মোদী।
বাংলাদেশের হিন্দুঘেষা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে মোদী ঢাকা সফর করবে। বাংলাদেশের কথিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ নামের শিরকী পূজা উপলক্ষে মোদির এই সফর।
সারা বিশ্বে নরেন্দ্র মোদি খুনি কসাই হিসেবে পরিচিত। আমেরিকার মতো সন্ত্রাসী রাষ্ট্রও একবার নরেন্দ্র মোদিকে আমেরিকার ভিসা দেয়নি গুজরাটে মুসলিম গণহত্যার জন্য। অথচ এই সন্ত্রাসী মোদিকেই রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা দিচ্ছে শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকার। বরং বলা যায় দিতে বাধ্য হচ্ছে। শেখ হাসিনা গদি টিকিয়ে রেখেছে হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। ভারতকে রাগালে শেখ হাসিনা পরেরদিনই গদি হারিয়ে ফেলবে। গদি টিকিয়ে রাখার জন্য তাই শেখ হাসিনা স্বজাতি মুসলিমদের সাথে গাদ্দারি করেছে। অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তৈরির অংশ হিসেবে ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসছে চরমমাত্রার ইসলাম বিদ্বেষী , মুসলিম গণহত্যাকারী কসাই মোদীকে।
মোদির উত্থানের পর থেকে ভারতের মুসলিমদের উপর অত্যাচার তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। ভারতে মুসলিমদের উপর বহু দশক ধরে চলমান নির্যাতনের দীর্ঘ অপরাধনামার সংক্ষিপ্ত কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে আমাদের এই সিরিজে। গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং গুজরাট গণহত্যা নিয়ে। এই সিরিজে আমরা আলোচনা করব কাশ্মীরের মুসলিমদের উপর মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারতের অত্যাচার নির্যাতন নিয়ে।
৩/কাশ্মীর আগ্রাসন:
গত তিন দশক ধরে দখলকৃত কাশ্মীরে হিন্দুদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও বিদ্রোহের কারণে ব্যাপক সহিংসতা চালাচ্ছে ভারত।
১৯৮৯ সাল থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যন্ত কাশ্মীরে হিন্দুত্ববাদী ভারত কর্তৃক নির্যাতনের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিস। এই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় এই ৩০ বছর সময়ে ভারতীয় বাহিনীর হাতে-
১) খুন হয়েছে ৯৫ হাজার ৭৪৭ জন
২) যৌন নির্যাতন/ গধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১ হাজার ২৩৫ জন নারী
৩) গ্রেফতার হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৭০ জন
৪) কারাগারে খুন হয়েছে ৭ হাজার ১৬৬ জন
৫) ইয়াতীম হয়েছে ১ লাখ ০৭ হাজার ৮১৩ জন শিশু
৬) বিধবা হয়েছে ২২ হাজার ৯২৪ জন নারী
৭) ধ্বংস হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৩৩৮ টি স্থাপনা
১৯৯৩ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) রিপোর্ট অনুসারে, কাশ্মীরি নাগরিকদের বিদ্রোহের প্রতিশোধ হিসেবে ধর্ষণকে বেছে নেয় ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী বাহিনী। বেশিরভাগ ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটছে তল্লাশির সময়। HRW এর ১৯৯৬ রিপোর্টেও অনুরূপ তথ্য উঠে এসেছে।
.
পণ্ডিত ইঙ্গার সখজেলসবেইক বলেছেন, সৈন্যরা যখন বেসামরিক বাড়িতে প্রবেশ করে, তখন মহিলাদের ধর্ষণ করার আগে বাড়ির পুরুষদের হত্যা বা গ্রেফতার করে। পণ্ডিত শুভ মাথুর ধর্ষণকে কাশ্মীরে ভারতীয় সামরিক কৌশলের অপরিহার্য উপাদান বলে অভিহিত করেছে। পণ্ডিত সীমা কাজির মতে, কাশ্মীরি পুরুষদের দমানোর হাতিয়ার হিসেবে ভারতীয় সেনারা মহিলাদের ধর্ষণ করে এবং কাশ্মীরি জনগণের প্রতিরোধের মনোবল ভেঙে দিতেই তারা ধর্ষণকে বেছে নিয়েছে।
.
কাশ্মীরের দোদা জেলার লুদনা গ্রামের ৫০ বছর বয়সী এক নারী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানান যে, ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সদস্যরা তাঁর বাড়ি থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় এবং প্রহার করে। এরপর একজন হিন্দু ক্যাপ্টেন তাঁকে ধর্ষণ করে এবং বলে যে, “তোমরা মুসলিম, এবং তোমাদের সকলের সাথে এমন আচরণ করা হবে”
.
এছাড়া একটি হিসেব বলছে, প্রতিদিন ভারতে গড়ে ১০০টিরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়৷ বছরে যা ৪০,০০০-এর বেশি৷ প্রতি ১০টি ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে অন্তত ৪টির শিকার নাবালিকারা৷ যে নাবালিকা শিশুদের মাঝে আসিফাও ছিল। যাকে হিন্দুত্ববাদীরা মন্দিরে রেখে গণধর্ষণ করে মাথা থেতলে দিয়েছিল। তাকে এক সপ্তাহ ধরে আটকে রেখে ধর্ষণ করার পর পাথর ছুড়ে হত্যার আগে আবারও ধর্ষণ করা হয়েছিল।
জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার রাসানা গ্রামে আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে।এতে নেতৃত্ব দেয় স্থানীয় মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক সাঞ্জি রাম, স্পেশাল পুলিশ কর্মকর্তা দীপক খাজুরিয়া ও সুরেন্দ্র বর্মা, সাঞ্জি রামের বন্ধু পরভেশ কুমার ওরফে মন্নু, রামের নাবালক ভাতিজা ও ছেলে বিশাল জঙ্গোত্র ওরফে শম্মা।কত জঘন্য চিন্তা করুন- বাপ, ছেলে, ভাতিজা, বন্ধু মিলে এক মুসলিম নাবালিকাকে তাদের উপসানালয় মন্দিরে রেখে গণধর্ষণ করে মাথা থেতলে হত্যা করেছে।
এই বর্বরোচিত ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মন্দির তত্ত্বাবধায়ক সাঞ্জি রাম। সে তদন্ত কর্মকর্তাদের ঘটনার তদন্ত প্রভাবিত করতে ঘুষ দেয়। এ বিষয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে হেড কনস্টেবল তিলক রাজ ও সাব-ইন্সপেক্টর আনন্দ দত্ত অভিযুক্ত সাঞ্জি রামের কাছ থেকে চার লাখ রুপি ঘুষ দিয়ে ঘটনার প্রমাণ নস্যাৎ করেছে।
HRW এর রিপোর্ট অনুসারে, কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর ধর্ষণের ঘটনার কোনো হিসাব নেই। ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হলেও এর বিচার হয় না। আবার লজ্জায় অনেকে বলতেই চায় না ধর্ষণের ঘটনা।
এমনিভাবে, ভারত দখলকৃত কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামী কমান্ডার বুরহান ওয়ানিকে শহীদ করে দেওয়ার পর কাশ্মীরী জনগণ ব্যাপক বিক্ষোভে নামে। ওই বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার জন্য পুলিশ আর আধা সামরিক বাহিনীগুলি ব্যাপকহারে ছররা গুলি ব্যবহার করেছিল।এক মাসে প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ ছররা ব্যবহার হয়েছিল। একই সময়ের মধ্যে সাড়ে আট হাজার কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটিয়েছিল ।
২০১৬ সালের ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভে শুধু এক মাসেই মোদির সন্ত্রাসী বাহিনী ৬৬ জন মুসলিমকে হত্যা করে। মানবাধিকার সংগঠনগুলি বলছে সবথেকে বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ছররা গুলিতে। বহু মানুষ আহত হয়েছেন, অনেকে অন্ধ হয়ে গেছেন।
একসময়ে শিকার করার জন্য এধরণের ছররা গুলি ব্যবহার করা হত। ছোট ছোট ধাতব বলের ভেতরে বারুদ ভরে তারপরে প্লাস্টিকের আচ্ছাদন দিয়ে একেকটি ছররা তৈরি হয়। একেকটি কার্তুজে সাড়ে চারশো ছররা থাকে – যেটা বন্দুক থেকে ছোঁড়া হলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীদের আহত করে।
পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি দীর্ঘসময় ধরে অনুচ্ছেদ কাশ্মীরের ৩৭০ এর বিরোধিতা করে আসছিল। ঐ অনুচ্ছেদের বিলোপ দলের ২০১৯ সালের নির্বাচনি তফসিলের অংশও ছিল। এপ্রিল-মে মাসে হওয়া সাধারণ নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর ৫ আগস্ট ২০১৯ তারিখে ভারতের নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট সরকার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫(এ) ধারা পার্লামেন্টের দুই পক্ষের ভোটে বাতিল করেছে।এর মাধ্যমে ভারতের সংবিধানে কাশ্মীরের যে বিশেষ মর্যাদা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। কাশ্মীরকে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ এ দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে।
সেইসাথে কাশ্মিরের আজাদী চাওয়া মুসলিমদেরকে রুখতে মোদি সরকার মোতায়েন করেছিল হাজার হাজার সেনা। করোনা আক্রমণ শুরু হওয়ার এক বছর আগেই কাশ্মিরের মানুষকে কারফিউ জারি করে যে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই বন্দিত্ব আজোবধি চলছে।
.
কাশ্মিরের ব্যাপারে ভারত যে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাঈলকে নিজদের রোল মডেল হিসেবে নিয়েছে, তা বেশ কয়েকজন অফিয়সিয়ালের বক্তব্যে উঠে এসেছিল।মোদি সরকার ৩৭০ বাতিল করে কাশ্মীরী মুসলিমদের উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অংশ এবং দুনিয়ার সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। কাশ্মীরে ভারতীয়দের জমি কেনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, চাকরি নিষিদ্ধ ছিল।এখন ভারতীয়রা সেখানে জমি কিনতে পারবে, ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারবে, চাকরি করতে পারবে। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের লোকদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করে কাশ্মীরিদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আরও পেছনে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।তাছাড়া এক্ষেত্রে তাদের একটা বড় চক্রান্ত হচ্ছে, কাশ্মীরে ভারতীয় হিন্দুদের বসতি স্থাপন করে সেখানে মুসলিমদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করা।
২০১৫ সালে আল জাজিরাতে সাংবাদিক মেহেদী হাসানকে সাক্ষাতকার দিয়েছিল মোদীর জনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব। সে সুস্পষ্টভাবে বলে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভারত,বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানকে একত্রিত করে অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করা। বিজেপির মূল শেকড় হল আরএসএস। সেই আরএসএস এর প্রধান মোহন ভগবত বলেছে উপমহাদেশে অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
নরেন্দ্রমোদির মুসলিম বিদ্বেষ দেখে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে ভারত অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার দিকেই হাঁটছে । জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই কসাই মোদিকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় অতিথি করে শেখ হাসিনা সরকার যে কলঙ্ক জাতির গায়ে লেপ্টে দিচ্ছে তা কি কোনোদিন মুছবে?
চলবে ইনশা আল্লাহ …
লেখক: উসামা মাহমুদ, প্রতিবেদক আল-ফিরদাউস নিউজ
পড়ুন প্রথম পর্ব-
https://alfirdaws.org/2021/03/23/47983/
রেফারেন্স:
[১] ধর্ষণ যখন অস্ত্র : কাশ্মীরে নারী নির্যাতনের দীর্ঘ ইতিহাস- https://tinyurl.com/4swwprcz
[২] Under Siege: Doda and the Border Districts”, Human Rights Watch – https://tinyurl.com/t9zd52tj
[৩] ধর্ষণ, ধর্ষণ নিয়ে রাজনীতি এবং দেশজুড়ে আতঙ্ক- https://tinyurl.com/536vu9rs
[৪] আসিফা বানু ধর্ষণ-হত্যা; কাশ্মিরিরা কি এভাবেই পঁচে মরবে?- https://tinyurl.com/6cptffny
[৫] হত্যার আগেও ধর্ষণ থেকে রেহাই পায়নি শিশু আসিফা: https://tinyurl.com/byp4cyw
[৬] রক্তাক্ত কাশ্মীর, বিজেপি সরকারের নীতি কতটা দায়ী? https://tinyurl.com/56tzfwcw
[৭] ৩৭০ ধারা বাতিলের আগে ও পরে, জেনে নিন এই তথ্যগুলো: https://tinyurl.com/28u6yh3w
[৮] HR Violations, Kashmir Media Service- https://kmsnews.org/news/
[৯] BJP official backs India-Pakistan-Bangladesh unity- https://tinyurl.com/8e93rw3b