প্রকাশিত হল শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরীর কিতাব ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’

3
3657
প্রকাশিত হল শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরীর কিতাব ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’

মিডিয়া থেকে দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর সম্প্রতি বৈশ্বিক জিহাদী তানযিম জামা’আতুল কায়দাতুল জিহাদের সম্মানিত আমির হাকিমুল উম্মত শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরীর হাফিজাহুল্লাহ্’র নতুন একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ফের মিডিয়ার সামনে এসেছেন। সেই সাথে সম্প্রতি শাইখের রচিত ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান’ নামে সাড়ে আটশত পৃষ্ঠার সুবিশাল একটি কিতাবও প্রকাশ করেছে জামাআতের কেন্দ্রীয় আস-সাহাব মিডিয়া।

‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’  (এটির বাংলা অনুবাদ হচ্ছে ‘কিতাব ও শাসক – মিল ও অমিল’) শিরোনামের কিতাবটির প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয়েছে। ৩টি অনুচ্ছেদ ও দেড়শতাধিক শিরোনামে ৮৫২ পৃষ্ঠায় সম্বলিত প্রথম খন্ডে শাইখ রাজনৈতিক বিচ্যুতির নিয়ে ভাবনা ও মুসলিমদের ইতিহাসে তার প্রভাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। বইয়ের শুরুতে দেওয়া ভূমিকা অনুযায়ী বইটির প্রথম খণ্ড চূড়ান্ত করা হয়েছে এপ্রিল ২০২১ নাগাদ।

কিতাবের শুরুতে শাইখ বলেনঃ আমি এই কিতাবে উম্মাহর বিচ্যুতি, ধ্বংস ও গোমরাহির সীমা নিয়ে আলোচনা করেছি, যার কারণ হচ্ছে; মুসলিমদের ইতিহাসে রাজনৈতিক ভ্রান্তি ও ফাসাদ।

শাইখ বলেনঃ এই কিতাব লিখার চিন্তা মাথায় এসেছে অনেক আগে। আমি আরব বসন্তের আগে থেকেই বুঝতেছিলাম যে, অচিরেই বিশাল এক ইসলামী জিহাদী গণজোয়ার শুরু হতে যাচ্ছে। তখন আমি ভয় করলাম যে, এখানে সেসব দূর্বলতা ও বিচ্যুতির উপাদানগুলো ছড়িয়ে পড়তে পারে যা ইসলামী শাসনকে স্বৈরাচার, হত্যা ও জুলুমের ইতিহাসে পরিণত করেছে। যেখানে রাজনৈতিক, সামাজিক ও বিশ্বাসগত অকল্যান ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই আমি নসিহাত সরূপ এই দূর্বলতা ও ওয়াহানের কারণ লিখতে শূরু করলাম। যাতে আমরা জানতে পারি কিভাবে ও কেন আমরা পরাজিত হয়েছি। শত্রুই মূল কারণ নাকি মূল দূর্বলতা আমাদের ভিতরেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল?

আরব বসন্তের সময় জিহাদী জোয়ার বৃদ্ধির সাথে সাথে দেখলাম আমরা ভয় বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। নামধারী উলামারা ইলমের নামে মানুষকে গোমরাহ করছে ও ধোকা দিচ্ছে। আর সত্যপন্থী আলেমদের আওয়াজকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

আমি দেখলাম উম্মাহর শত্রুরা এক ঝাক আলেমকে তৈরি করেছে যারা স্বৈরাচারী মুরতাদ ও কাফেরদের সামনে নত হওয়ার বৈধতা দিচ্ছে। আর জুলুম প্রতিরোধকারীদেরকে অসংখ্য অপবাদ দিচ্ছে। তারা আন্তর্জাতিক কুফফারদের বানানো সংবিধানের বৈধতা দিচ্ছে। আরো বৃদ্ধি পেয়ে তারা এই মুরতাদ প্রশাসনগুলোকেই শরয়ী শাসক বানিয়ে দিচ্ছে, যারা কুফুরী শাসনে দেশ চালাচ্ছে। অন্যদিক যারা খিলাফতকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে তাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দমন করছে। দেখলাম তারা পাগড়ী ও রুমাল পরে ইসলামী শরিয়াহ ও সিয়াসাতের সমস্ত পরিভাষাকে বিকৃত করছে।

অপর দিকে কিছু নামধারী ইসলামী জিহাদী দলে মাঝে বে আখলাকী ছড়িয়ে গেছে। তারা সততা, ঐক্য ইত্যাদি মূল্যবোধ ত্যাগ করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে ধোঁকা, মিথ্যা ও হারামের দিকে ধাবিত হওয়াকে গর্বের বিষয় মনে করছে। মুতাগাল্লিব শাসকের ক্ষমতার নামে মুসলিমদের রক্তকে হালাল করে নিচ্ছে। আর কতক তাগুতের নিকটবর্তিতাকে রাজনীতি বানিয়ে নিয়েছে, আকীদার মূল বিষয়গুলো অস্বিকারকে আধুনিকতা ও দ্বীনের অকাট্য বিষয়কে পাল্টিয়ে ফেলাকে ইজতিহাদ বলছে।

আমি দেখেছি তাকফীরের ব্যপক বিস্তৃতি। দেখেছি আরব বসন্তের জনবিপ্লব সব তাগুতের অনুগত হওয়ার মাঝে বিলিয়ে গেছে। অনেক জিহাদীদের দেখেছি পিছু হটে এখন স্বার্থের রক্ষক ও বৈশ্বিক রাষ্ট্রগুলোর পুতুলে পরিনত হয়েছে। এমনকি তারা তাদের নেতৃতে যুদ্ধ করছে।

এসব কারনে ইসলামী রাজনীতির বুঝগুলো সংশোধনের জন্য এই কিতাব লিখা শুরু করি। প্রথমে সঠিক ইসলামী শাসন কিভাবে হবে তা দলীল সহ বর্ণনা করেছি। অতঃপর বর্তমান প্রতিষ্ঠিত স্যাকুলার জাতিয়তাবাদী রাষ্ট্রের বাস্তবতা ও ভ্রষ্টতা আলোচনা করেছি। যে ব্যপারে  অনেক ইসলামী দলই জেনে বা না জেনে ভুলের মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া মুসলিমদের রাজনীতির বিচ্যুতির ইতিহাস আলোচনা করেছি। সেই সাথে খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদীদের মধ্যে কিভাবে ভ্রান্তি ছড়িয়েছে এবং বর্তমানে কোন কোন আকিদার ভিত্তিতে তারা বৈশ্বিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে সেগুলো আলোচনা করেছি।

এরপর শাইখ লিখেন, আমি এই কিতাব উৎসর্গ করছি সকল হাকিকত অনুসন্ধানী ব্যক্তিকে। সকল স্বাধীন খ্রিষ্ঠানকে, যারা সত্য জানতে চায়। সকল স্যাকুলারকে যারা সত্যের দিকে ফিরে আসার সাহস রাখে।

এটার সাওয়াব হাদিয়া দিচ্ছি আমার বাবা-মা, সমস্ত মুসলিম ও শুহাদাদের প্রতি। এরপর শাইখ বিশেষ করে অর্ধশতাধিক শহিদ উমারা ও মুজাহিদদের নাম উল্লেখ করেন এবং এই কিতাবের হাদিয়া তাদের জন্য উৎসর্গ করেন।

শহিদদের দীর্ঘ এই তালিকায় রয়েছেন আমিরুল মুমিনিন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর মুজাহিদ, মোল্লা আখতার মোহাম্মদ মানসুর, শাইখ জালালুদ্দীন হাক্কানী ও আফগানের শহীদগণ।

আরও রয়েছেন শাম, জাজিরাতুল আরব, ইসলামিক মাগরিব ও পূর্ব আফ্রিকার অনেক শহিদগণ।

তবে এই তালিকায় দীর্ঘ স্থান পেয়েছেন খুরাসানে হিজরতকারী মুজাহিদ ও আল-কায়েদা ভারতীয় উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় উমারা ও কমান্ডার। যাদের মাঝে আছেন শহিদুদ দাওয়াহ্ উস্তাদ আহমাদ ফারুক, ক্বারী ইমরান, ডক্টর আবু খালেদ (হেদায়াতুল্লাহ মেহমান্দ), এবং ভারতীয় উপ-মাহাদেশের আমীর শাইখ আসেম উমর রহিমাহুমুল্লাহ।

উল্লেখ্য যে, শাইখ আসেম উমর রহিমাহুল্লাহ কয়েকজন বাংলাদেশী মুজাহিদ ও তাঁর কয়েকজন প্রিয় জিহাদী সফরের সঙ্গী সহ বরকতময় খোরাসানের ভূমি কান্দাহারে এক যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছিলেন।

ইতিপূর্বে শাইখের অসংখ্য লেকচার, বয়ান ও ছোটবড় লিখিত কিতাবাদি ও বইপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

  • ফুরসানুন তাহতা রায়াতিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঝান্ডাতলের অশ্বারোহী) ৭০০ এর অধিক পৃষ্ঠার আরবিগ্রন্থ। যেখানে শায়খ বিগত ৫০ বছরের বিভিন্ন ইসলামি, জিহাদি দল ও সংগঠনের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় আত্মজীবনী আকারে লিপিবদ্ধ করেছেন।
  • আস-সুবহু ওয়াল ক্বিনদীল (প্রভাত এবং নিভুনিভু প্রদীপ) পকিস্তানের সংবিধানকে যারা শরীয়াহ সংবিধান বলেন তাদের জবাবে একটি ইলমি আলোচনা।
  • আল-হাসাদুল মুর… ইখওয়ানুল মুসলিমীন ফী সিত্তীনা আমান (তিক্ত অর্জনঃ মুসলিম ব্রাদারহুডের ষাট বছর) ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়ে লিখা।
  • এছাড়া রয়েছে ছোটছোট বার্তা ও পুস্তিকা। যেমন- নিশ্চয় ফিলিস্তিন আমাদের এবং প্রত্যেক মুসলমানদের ইস্যু, ত্বাওয়াগীতদের সাথে কথোপকথন, কুদসের পথ কায়রো হয়ে অতিক্রম করবে, আল-ওয়ালা ওয়াল বারা, কুরআনের ঝান্ডাতলে মানুষ ও ভূমির মুক্তি, মুসলমানদের মিসর জল্লাদদের চাবুক এবং গাদ্দার দোসদের হাতে ইত্যাদি।

বর্তমান সময়ে একই সাথে জিহাদী আন্দোলন অত্যান্ত সম্ভাবনাময় একটি সময় পার করছে। ২০ বছর আগ্রাসনের পর আমেরিকা পিছু হঠেছে। ইসলামি ইমারত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আবার একই সাথে আন্দোলনে নানা ফিতনা দেখা দিয়েছে। ইফরাত ও তাফরিত দেখা দিয়েছে। এক দিকে আইএস এর গুলু ও বাড়াবাড়ি অন্যদিকে, তাহরির আশ শামের মত দলগুলো  শৈথিল্য ও বিশুদ্ধ মানহাযকে কুলষিত করণ। একই সাথে ইখওয়ান ও সমমাননা  দলগুলো এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের পথ ধরে তারা শুধ ব্যর্থতাই পেয়েছে। একই সাথে দ্বীনের সাথে আপস করতে করতে এবং ছাড় দিতে দিতে নিজেদের আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়েছে। আমাদের দেশেও এ ধরনের চিন্তার অসুস্থতাগুলো বিভিন্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। যদিও সীমিত মাত্রায়। এধরণের ভুল চিন্তাধারার নিরসন ও জিহাদী আন্দোলনের সঠিক পথ সম্পর্কে জানতে এ বইটি অনেক উপকার হবে।

প্রতিবেদক: ত্বহা আলী আদনান

3 মন্তব্যসমূহ

  1. জাযাকুমুল্লাহু আহসানাল জাযা।
    মুহতারাম ভাই কিতাবটির বাংলা অনুবাদের লিংক থাকলে দেয়ার অনুরুধ রইল।
    আর শায়খের ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিতাবটির বাঙ্গলা অনুবাদ যথা সম্ভব বের হয়রছ্র। এটিরও লিঙ্ক কোন ভাইয়ের কাছে থাকলে দেয়ার অনুরুধ রইল।
    অগ্রিম জাযাকুমুল্লাহ।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধতালেবান কি চোরের হাত না কেটে কুফুরি করেছে?
পরবর্তী নিবন্ধবেরিয়ে আসছে আমেরিকার কথিত উদ্ধার অভিযানের আসল চিত্র-