মদকে ‘হালাল’ বানানোর পথে বাংলাদেশ সরকার : একুশেই মিলবে লাইসেন্স

0
984
মদকে ‘হালাল’ বানানোর পথে বাংলাদেশ সরকার : একুশেই মিলবে লাইসেন্স

হিন্দুত্ববাদের দালাল হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকার ও এদের তাবেদার প্রশাসন ইসলামিক কাজে বাধা দিলেও, অনৈসলামিক ও ইসলামবিরোধী কাজকর্মের প্রচার-প্রসারে খুবই আন্তরিক! ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ বিভিন্ন উপায়-উপকরণকে সহজলভ্য করে দেওয়াতেও তাদের জুরি নেই এদেশে।

ইসলাম-বিরোধী এই দালাল সরকার এখন থেকে ২১ বছরের উপরে হলে মদ খাওয়ার লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা মদপানের প্রসার ঘটাতে এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, কোন এলাকায় একশ জন দেশি মদ বা বিদেশি মদের পারমিটধারী থাকলে অ্যালকোহল বিক্রয়ের লাইসেন্স দেয়া যাবে। অর্থাৎ পাড়া, মহল্লায়, কোন ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানে যদি কমপক্ষে একশ জন সদস্য থাকে, যাদের এই পারমিট আছে সেখানেই অ্যালকোহল বিক্রি করা যাবে।

নতুন ঘোষিত নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, কোনো ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে দুশো জন অ্যালকোহল পারমিটধারী থাকলে তাদেরকে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে।

ইপিজেড, থিমপার্ক বা সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে যেখানে বিদেশি নাগরিক থাকবে সেখানে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে।

বিধিমালার অধীনে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, ডিউটি ফ্রি শপ ও প্রকল্প এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক বার স্থাপন লাইসেন্স দেয়া যাবে। যেমন ক্লাব ও রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে একটি করে, আর পাঁচ তারকা বা তার চেয়ে বেশি মানসম্পন্ন সাতটিরও বেশি বারের লাইসেন্স দেয়া যাবে।

মোটকথা, কেউ চাইলেই হাতের নাগালে মদ পেয়ে যাবে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশের আনাচে কানাচে প্রকাশ্যভাবে মদের রমরমা ব্যবস্যা শুরু হয়ে যাবে। এ যেন মদের নেশায় মগ্ন করে মুসলিম যুব সমাজকে ধ্বংস করার প্রকাশ্য আয়োজন।

এমনিতেই ইসলাম বিদ্বেষী দালাল সরকারের প্রকাশ্য মদদে ইসলামের বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে রমরমা চলছে মদের বারগুলো। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীতি নৈতিকতা আর ইসলামি মূলবোধ অনেক আগেই কৌশলে বাতিল করেছে হিন্দুত্ববাদের দালাল প্রশাসন। কোন মুসলিম ইসলাম মানতে চাইলেও বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। শুধু তাই নয়, ইসলামের বিধি বিধানগুলোকে কথিত জঙ্গিবাদের আলামত হিসেবে তুলে ধরেছে হিন্দুত্ববাদের গোলাম প্রশাসন। ফলে ইসলামি মূলবোধ হারিয়ে শিক্ষাঙ্গন গুলো মদ, জুয়া আর যিনা-ব্যভিচারের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে।

অথচ প্রায় রাতেই মদপান করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই মাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত মদপানে অসুস্থ হয়ে প্রতিদিন রাতেই চিকিৎসার জন্য আসেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থার এতটাই অবনতি যে, এর মধ্যে কারও কারও উন্নত চিকিৎসারও প্রয়োজন হয়।

অতিরিক্ত মদপানে গত বৃহস্পতিবার ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে এক শিক্ষার্থী মারা গিয়েছিল; সে ছিল অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী বেলায়েত হোসেন। সেদিন ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে চবি মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে যান তিনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে তাৎক্ষণিক চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভোর ৬টার দিকে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

বেলায়েতের বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে জানা যায়, সন্ধ্যারাতে বন্ধুরা মিলে ‘কেরুর’ অ্যালকোহল খেয়েছিল। বেলায়েত একটু বেশি খেয়ে ফেলেছিল।

দেশে শুধু এক বেলালত নয়, হাজারো বেলায়েত পশ্চিমা নোংরা কালচারের থাবায় হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক মাদকগ্রস্থরা নেশার টাকার জন্য পিতা মাতার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, মারধর পর্যন্ত করে জন্মদাতা পিতা ও মাতাকে। অনেকে আবার জড়িয়ে যায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানির সাথে। ভার্সিটি পড়রু মেয়েরা পর্যন্ত মদ ও নেসার টাকা জোগাড় করতে নানা অশ্লীল ও অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পরছে অহরহ।

মদ পান করে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আবার ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধেও লিপ্ত হচ্ছে। নেশার কারণে অনেক পরিবার ধ্বংস গেছে।

উল্লেখ্য, ইসলামে নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করা নিষিদ্ধ। কারণ মদপানকারীর উপর আল্লাহর অভিশম্পাত বর্ষিত হয়। তবে বহুকাল থেকে এদেশে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা না থাকায়, মুসলিম নামধারী ইসলামবিরোধী সরকারগুলো এসব বন্ধ করার পরিবর্তে উৎপাদন ও বিপণন বৃদ্ধি করছে। সহজলভ্য করেছে।

ইসলামি শাসন ব্যবস্থা থাকলে মদখোরকে দুনিয়াবীতেই শাস্তি দেওয়া হত।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِرَجُلٍ قَدْ شَرِبَ الْخَمْرَ، فَجَلَدَهُ بِجَرِيدَتَيْنِ نَحْوَ أَرْبَعِينَ»، قَالَ: وَفَعَلَهُ أَبُو بَكْرٍ، فَلَمَّا كَانَ عُمَرُ اسْتَشَارَ النَّاسَ، فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ: أَخَفَّ الْحُدُودِ ثَمَانِينَ، «فَأَمَرَ بِهِ عُمَرُ»،

হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত- নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে মদ পান করা এক ব্যক্তি আসল। তখন তাকে খেজুর গাছের দু’টি ডাল দিয়ে চল্লিশ বেত্রাঘাত করা হয়।[এক বেতে চল্লিশ হলে, দুই বেতের দ্বারা হচ্ছে আশি] একই পদ্ধতিতে আবু বকর রাঃ ও এ অপরাধের শাস্তি দিতেন। তারপর যখন হযরত উমর রাঃ এর সময় আসল। তিনি লোকদের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ করলেন। তখন আব্দুর রহমান পরামর্শ দিলেন যে, কমপক্ষে আশি বেত্রাঘাত। [দুই ডাল একসাথে নয়, বরং আলাদা করে আশিটি] তখন হযরত উমর রাঃ আশিটি বেত্রাঘাতের হুকুম দিলেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭০৬]


মদপানের আখেরাতে শাস্তি:

ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَعَنَ اللَّهُ الْخَمْرَ، وَشَارِبَهَا، وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَمُبْتَاعَهَا، وَعَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَحَامِلَهَا، وَالْمَحْمُولَةَ إِلَيْهِ»

ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদ, তা পানকারী, পরিবেশনকারী বিক্রেতা, ক্রেতা, উৎপাদক ও শোধনকারী, যে উৎপাদন করায়, সরবরাহকারী এবং যার জন্য সরবরাহ করা হয়- এদের সকলকে আল্লাহ লা‘নত করেছেন। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৬৭৪]

যুগ যুগ ইসলামকে পাশ কাটিয়ে রোপন করা কথিত গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা নামক বিষবৃক্ষগুলোর ফল এখন পাকতে শুরু করেছে। যা খুব দ্রুতই মহামারির আকার ধারণ করতে যাচ্ছে।

এমতাবস্থায় এদেশের যুব ও তরুণ সমাজকে সামাজিক নৈতিক অবক্ষয় ও মূল্যবোধের অধঃপতন থেকে বাঁচাতে হলে, তাদেরকে ইসলামি শাসন ব্যবস্থার অধীনে আনার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন ইসলামি চিন্তাবীদগণ।

 

লিখেছেন :   উসামা মাহমুদ 

 

তথ্যসূত্র:

১।
বাংলাদেশে মদ্যপান: নতুন অ্যালকোহল বিধিমালায় যা বলা হয়েছে
https://tinyurl.com/mw7fjc27

২। মদ খাওয়ার লাইসেন্স নিয়ে বিতর্ক
https://tinyurl.com/mefdse44

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্রগ্রামে ২১শে বই মেলায় নিষিদ্ধ ইসলামি বই
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণাটকে প্রতিবাদী মুসলিম ছাত্রীর ভাইয়ের উপর হিন্দুত্ববাদীদের হামলা, বাবার দোকানপাট ভাঙ্গচুর