পৃথিবীতে সামরিকায়িত অঞ্চল যতগুলো আছে, তার মধ্যে কাশ্মীর উপত্যকা সবার শীর্ষে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই উপত্যকায় প্রায় আট লাখ ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সেনার উপস্থিতি আছে। ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরকে তারা নরকে পরিণত করেছে। হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের পৈশাচিক হামলার বিরুদ্ধে যখনই মুসলিম যুবকরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে, তখন থেকেই ধর্ষণকে ভারতীয় সেনারা বিদ্রোহ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই উপত্যকার মুসলিম মহিলাদেরদের কেবল ভারতীয় সেনারাই ধর্ষণ করেনি, বরং ডোগরা সেনা, হিন্দু ও শিখরাও তাদের ধর্ষণ করেছে। ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে যখন জম্মুতে গণহত্যা চালায় হিন্দু উগ্রপন্থীরা, তখন ডোগরা সৈন্যদের সহায়তায় শিখ ও হিন্দুরা মুসলিম মহিলাদের অপহরণ ও ধর্ষণ করে। গণধর্ষণের ঘটনাও অনেক ঘটেছে এই উপত্যকার সম্ভ্রান্ত মুসলিম নারীদের সাথে।
ধর্ষণই হিন্দুত্ববাদীদের অস্ত্র
১৯৯৩ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) রিপোর্ট অনুসারে, কাশ্মীরি নাগরিকদের বিদ্রোহের প্রতিশোধ হিসেবে ধর্ষণকে বেছে নেয় ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী বাহিনী। বেশিরভাগ ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটেছে তল্লাশির সময়। এইচআরডাব্লিউ এর ১৯৯৬ রিপোর্টেও অনুরূপ তথ্য উঠে এসেছিল।
পণ্ডিত ইঙ্গার সখজেলসবেইক বলেছে, সৈন্যরা যখন বেসামরিক বাড়িতে প্রবেশ করে, তখন মহিলাদের ধর্ষণ করার আগে বাড়ির পুরুষদের হত্যা বা গ্রেফতার করে।
পণ্ডিত শুভ মাথুর ধর্ষণকে কাশ্মীরে ভারতীয় সামরিক কৌশলের অপরিহার্য উপাদান বলে অভিহিত করেছে।
পণ্ডিত সীমা কাজির মতে, কাশ্মীরি পুরুষদের দমানোর হাতিয়ার হিসেবে ভারতীয় সেনারা মহিলাদের ধর্ষণ করে এবং কাশ্মীরি জনগণের প্রতিরোধের মনোবল ভেঙে দিতেই তারা ধর্ষণকে বেছে নিয়েছে। মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করাকে তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব মনে করে।
মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ৫২তম অধিবেশনে অধ্যাপক উইলিয়াম বাক বলেছিলেন, কাশ্মীরি জনগোষ্ঠীকে অপমান করা ও ভয় দেখানোর জন্য ভারতীয় বাহিনী ধর্ষণকে ব্যবহার করছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনেও অনুরূপভাবে বলা হয়েছে, কাশ্মীরি বিদ্রোহের পাল্টা জবাব দিতে ভারতীয় বাহিনী ধর্ষণকে ব্যবহার করছে। সংস্থাটি কয়েকজন ভারতীয় সৈন্যকে ধর্ষণের কারণ জিজ্ঞেস করেছিল। কেউ উত্তর দিয়েছে, কাশ্মীরি মেয়েরা সুন্দর। তাই ধর্ষণ করেছে। কেউ উত্তর দিয়েছে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ধর্ষণ করেছে।
হিন্দুত্ববাদীদের ধর্ষণের আনুমানিক হার
মেডিসিনস সায়েন্স ফ্রন্টিয়ারসের করা ২০০৫ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কাশ্মীরি নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার হার বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এইচআরডাব্লিউয়ের রিপোর্ট অনুসারে, কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর ধর্ষণের ঘটনার কোনো হিসাব নেই। ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হলেও এর বিচার হয় ন। আবার লজ্জায় অনেকে বলতেই চায় না ধর্ষণের ঘটনা।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে ভারতীয় বাহিনী ৮৮২ কাশ্মীরি মহিলাকে গণধর্ষণ করেছিল। এদের মধ্যে ধর্ষণ ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে ১৫০ থেকেও বেশি ভারতীয় বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা।
২০১৬ সালে কাশ্মীরি মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী পারভেজ ইমরোজ বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক ধর্ষণের এই ভয়াবহ চিত্র এখনো অপরিবর্তিত আছে।
ধর্ষণের পরবর্তী প্রভাব
ধর্ষণের পর মহিলারা সাধারণত শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেন। যেহেতু সমাজ বিশ্বাস করে— ধর্ষিত হয়ে সে তার সম্মান হারিয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অস্টিনের সাগর গবেষণা জার্নালের হাফসা কানজওয়ালের মতে, কাশ্মীরি সমাজ যেহেতু ধর্ষণের দোষ চাপায় মহিলাদের উপর, তাই তারা মনে করে তারা সম্মান হারিয়েছে। পবিত্রতা খুইয়ে ফেলেছে। এই বিশ্বাস অনেক সময় হতাশা ডেকে আনে। এমনকি বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্তও গড়ায়। সাক্ষাৎকারে অনেক মহিলা বলেছেন, ধর্ষিত হবার পর তাদের স্বামী তাদেরকে অপবিত্র মনে করছে। অনেকের বিবাহ ভেঙেছে। অনেকে পরিবার থেকে বহিষ্কারও হয়েছে।।
ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক ধর্ষণ
১৯৯০ সালের ২৬ জুন বিএসএফ সদস্যরা জামির কাদিমের একটি এলাকায় তল্লাশি চালানোর সময় ২৪ বছর বয়সী একজন তরুণীকে গণধর্ষণ করে। সেবছর জুলাইয়ে সোপোরের পুলিশ থানায় বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। [Kazi, Seema. “Rape, Impunity and Justice in Kashmir]
১৯৯০ সালের ৭ মার্চ সিআরপিএফ শ্রীনগরের ছানপোরা এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে হানা দেয়। এসময় বেশ কয়েকজন মহিলা ধর্ষণের শিকার হন। ১৯৯০ সালের ১২ থেকে ১৬ মার্চ ‘কমিটি ফর ইনিশিয়েটিভ ইন কাশ্মীর’-এর সদস্যরা কাশ্মীর সফর করেন এবং ধর্ষিতাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ধর্ষিতাদের মধ্যে ২৪ বছর বয়সী নূরা বিবরণে জানান যে, নূরা ও তাঁর ননদ জাইনাকে তাঁদের রান্নাঘর থেকে সিআরপিএফের ২০ জন সদস্য টেনে-হিঁচড়ে বের করে এবং তারপর তাঁদেরকে গণধর্ষণ করে। তাঁরা অন্য দু’জন কিশোরীকে ধর্ষিত হতে দেখেছেন বলেও বর্ণনা করেন। [CHAPTER-V PROBLEM OF HUMAN RIGHTS IN JAMMU AND KASHMIR (PDF)। পৃষ্ঠা 224।]
১৯৯১ সালে শ্রীনগরের বাবর শাহ এলাকায় ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীরা একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত বৃদ্ধা মহিলাকে ধর্ষণ করে। [Bhat, Aashaq Hussain, and R. Moorthy. “Impact of Security Provisions in Kashmir.” (2016).]
১৯৯১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার কুনান পোশপোরা গ্রামে একটি তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় তারা গ্রামটির বিভিন্ন বয়সের শতাধিক নারীকে গণধর্ষণ করে।
১৯৯১ সালের ২০ আগস্ট ভারতীয় সৈন্যরা কুনান পোষ্পোরা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের পাজিপোরা-বাল্লিপোরা গ্রামের ১৫ জনেরও বেশি নারীকে গণধর্ষণ করে। [Mathur, Shubh (১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। The Human Toll of the Kashmir Conflict: Grief and Courage in a South Asian Borderland। Palgrave Macmillan US। পৃষ্ঠা 60]
১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২২তম গ্রেনেডিয়ার্সের একদল সৈন্য কাশ্মীরের চক সাইদপোরা গ্রামে প্রবেশ করে এবং ৯ জন নারীকে গণধর্ষণ করে। ধর্ষিতাদের মধ্যে ছিলেন ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা এবং ১১ বছর বয়সী এক বালিকা। [Rape in Kashmir: A Crime of War” (PDF). Asia Watch & Physicians for Human Rights A Division of Human Rights Watch.]
১৯৯২ সালের ২০ জুলাই কাশ্মীরের হারান এলাকায় একটি সেনা অভিযানের সময় বেশ কয়েকজন মহিলা ধর্ষিত হন। এশিয়া ওয়াচ এবং পিএইচআর কয়েকজন ধর্ষিতার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। ধর্ষিতাদের একজনকে দুইজন সৈন্য পালাক্রমে ধর্ষণ করেছিল। আরেকজন ধর্ষিতাকে একজন শিখ সৈন্য ধর্ষণ করেছিল। [“Rape in Kashmir: A Crime of War” (PDF). Asia Watch & Physicians for Human Rights A Division of Human Rights Watch.]
১৯৯২ সালের ১ অক্টোবর বিএসএফ সদস্যরা কাশ্মীরের বাখিকার গ্রামে ১০ জন লোককে হত্যা করে এবং এরপর নিকটবর্তী গুরিহাখার গ্রামে প্রবেশ করে কয়েকজন নারীকে ধর্ষণ করে। এশিয়া ওয়াচ গ্রামটির একজন নারীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে, যিনি তাঁর মেয়েকে অসম্মানের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিজেকে ধর্ষিতা বলে দাবি করেন (প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তাঁর মেয়ে)। [“Rape in Kashmir: A Crime of War” (PDF). Asia Watch & Physicians for Human Rights A Division of Human Rights Watch]
১৯৯৩ সালে ভারতীয় সৈন্যরা কাশ্মীরের বিজবেহারা শহরের বহুসংখ্যক নারীকে গণধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করে। স্থানীয় বয়স্ক ব্যক্তিরা ঘটনাটি প্রচার হলে ধর্ষিতাদের পরিবার অসম্মানিত হবে এই আশঙ্কায় এই ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর ওপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সৈন্যরা বিজবেহারা শহরের প্রান্তে গাধাঙ্গিপোরায় একজন নারীকে ধর্ষণ করে। [“The Massacre Of A Town By Murtaza Shibli”। www.countercurrents.org]
১৯৯৪ সালের ১৭ জুন মেজর রমেশ ও রাজ কুমারসহ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সৈন্যরা কাশ্মীরের হিহামা গ্রামের ৭ জন মহিলাকে ধর্ষণ করে। [Hashmi, Syed Junaid (৩১ মার্চ ২০০৭)। “Conflict Rape Victims: Abandoned And Forgotten]
১৯৯৪ সালে কাশ্মীরের শেখপোরায় সৈন্যরা একটি বাড়িতে প্রবেশ করে বাড়ির পুরুষদের বন্দি করে ৬০ বছর বয়সী এক নারীকে ধর্ষণ করে। [Bhat, Aashaq Hussain, and R. Moorthy. “Impact of Security Provisions in Kashmir.” (2016).]
১৯৯৪ সালে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যরা কাশ্মীরের থেনো বুদাপাথারীতে এক মহিলা ও তাঁর ১২ বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ করে। [Bhat, Aashaq Hussain, and R. Moorthy. “Impact of Security Provisions in Kashmir.” (2016).]
১৯৯৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সৈন্যরা কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার বুরবুন গ্রামের একটি বাড়িতে প্রবেশ করে তিনজন নারীকে যৌন নির্যাতন করে এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে। [“India’s Secret Army in Kashmir”। Human Rights Watch।]
১৯৯৭ সালের নভেম্বরে কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার নরবল পিঙ্গালগোমে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীরা একজন তরুণীকে ধর্ষণ করে। [Bhat, Aashaq Hussain, and R. Moorthy. “Impact of Security Provisions in Kashmir.” (2016).]
১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল ভারতীয় সৈন্যরা শ্রীনগরের নিকটে ১২ জন কাশ্মীরি তরুণীকে জোরপূর্বক নগ্ন করে এবং গণধর্ষণ করে। [Van Praagh, David (২০০৩)। Greater Game: India’s Race with Destiny and China। McGill-Queen’s University Press। পৃষ্ঠা 390]
১৯৯৭ সালের ২২ এপ্রিল ভারতীয় সৈন্যরা কাশ্মীরের বাভুসা গ্রামে ৩২ বছর বয়সী এক নারীর বাড়িতে প্রবেশ করে ঐ নারীর ১২ বছর বয়সী মেয়ের ওপর যৌন নির্যাতন করে এবং ১৪, ১৬ ও ১৮ বছর বয়সী বাকি তিন মেয়েকে ধর্ষণ করে। অন্য একটি বাড়িতে তারা আরো কয়েকটি মেয়েকে ধর্ষণ করে এবং মেয়েটির মা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে মারধর করে। [ “India: High Time to Put an End to Impunity in Jammu and Kashmir” (PDF). 15 May 1997. Archived from the original (PDF) on 29 October 2013]
কাশ্মীরের দোদা জেলার লুদনা গ্রামের ৫০ বছর বয়সী এক নারী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানান যে, ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সদস্যরা তাঁর বাড়ি থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় এবং প্রহার করে।
এরপর একজন হিন্দু ক্যাপ্টেন তাঁকে ধর্ষণ করে এবং বলে যে, “তোমরা মুসলিম, এবং তোমাদের সকলের সাথে এমন আচরণ করা হবে।” [“Under Siege: Doda and the Border Districts”। Human Rights Watch]
২০০০ সালের ২৯ অক্টোবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৫ বিহার রেজিমেন্টের সৈন্যরা কাশ্মীরের বিহোটায় একটি তল্লাশি অভিযানের সময় একজন মহিলাকে তুলে নিয়ে আসে। পরবর্তী দিন ২০ জন নারী ও কয়েকজন পুরুষ ঐ মহিলাকে মুক্ত করার জন্য যান। কিন্তু সৈন্যরা আগত মহিলাদের ৪-৫ ঘণ্টার জন্য বন্দি করে রাখে এবং তাদের ওপর অত্যাচার করে। [Kazi, Seema. “Rape, Impunity and Justice in Kashmir ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে.]
২০০৪ সালের ২৮ অক্টোবর কাশ্মীরের জিরো ব্রিজের একটি গেস্ট হাউজে ৪ জন নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্য ২১ বছর বয়সী এক তরুণীকে গণধর্ষণ করে। [ Bhat, Aashaq Hussain, and R. Moorthy. “Impact of Security Provisions in Kashmir.” (2016)]
২০০৬ সালের ৬ নভেম্বর কাশ্মীরের বাদেরপাইনে এক মা এবং তাঁর মেয়ে ধর্ষিত হন। হিন্দুত্ববাদীদের পালিত ধর্ষণকারী সেনা কর্মকর্তা (মেজর রহমান হুসেইন) একজন নামধারি মুসলিম হওয়ায় সেনা কর্তৃপক্ষ এটিকে কোনো ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করে নি। [Ashraf, Ajaz। “‘Do you need 700,000 soldiers to fight 150 militants?’: Kashmiri rights activist Khurram Parvez”। Scroll.in (ইংরেজি ভাষায়)]
২০০৯ সালের ২৯ মে কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলায় ভারতীয় সৈন্যরা আসিয়া এবং নিলুফার জান নামে দু’জন নারীকে অপহরণ ও গণধর্ষণের পর হত্যা করে।
ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা
পণ্ডিত সীমা কাজীর মতে, কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে কম তদন্ত ও মামলা হচ্ছে ধর্ষণ মামলায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালের কুনান পোশপোরায় গণধর্ষণের ঘটনার পর ভারত বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, কোনো যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেনি।
এইচআরডাব্লিউ ১৯৯৩ সালের প্রতিবেদনে বলেছিল, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী কর্তৃক ব্যাপক যৌন সহিংসতার ঘটনা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ ধর্ষকদের কোনো বিচার করেনি। সংস্থাটি ১৯৯৬ সালের রিপোর্টে বলেছে, বিচার তো দূরের কথা, ঘটনার তদন্তই করে না হিন্দুত্ববাদী কর্তৃপক্ষ।
সীমা কাজীর মতে, রাষ্ট্রীয় অনুমোদন পেয়েই ভারতীয় সেনারা ধর্ষণের মত পাশবিক কাজে লিপ্ত হয়।
মাথুরের মতে, ভারত সরকার ধর্ষকদের আইনি প্রোটেকশন দেয়। সুখেলসবেইকের মতে, বিচারহীনতাই কাশ্মীরে যৌন সহিংসতার অনুমতি দেয়।
পণ্ডিত ওম প্রকাশ দ্বিবেদী এবং ভিজি জুলি রাজনের মতে, সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (এএফএসপিএ) ভারতীশ সেনাদের যুদ্ধাপরাধ করতে উৎসাহিত করে। এই ক্ষমতার বলে তারা যেকোনো বেসামরিক বাড়িতে ঢুকে পড়তে পারে। তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ দেয়ার কারণে কাশ্মীরের বিচার বিভাগও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।
কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের একটি প্রতিবেদন
১৯৮৯ সাল থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাশ্মীরে হিন্দুত্ববাদী ভারত কর্তৃক নির্যাতনের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিস। এই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় এই ৩০ বছর সময়ে ভারতীয় বাহিনীর হাতে-
১. খুন হয়েছে ৯৫ হাজার ৭৪৭ জন
২. যৌন নির্যাতন/গধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১ হাজার ২৩৫
জন নারী
৩. গ্রেফতার হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৭০ জন
৪. কারাগারে খুন হয়েছে ৭ হাজার ১৬৬ জন
৫. ইয়াতীম হয়েছে ১ লাখ ০৭ হাজার ৮১৩ শিশু
৬. বিধবা হয়েছে ২২ হাজার ৯২৪ জন নারী
৭. ধ্বংস হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৩৩৮ টি স্থাপনা
এগুলো হল নথিভুক্ত হওয়া ধর্ষণের কিছু ঘটনা, যা দখলদার ভারতের হিন্দুত্ববাদী সেনারা কাশ্মীরের মুসলিম নারীদের সাথে ঘটিয়েছে। আর ঘটে যাওয়া ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর তার সাথে যদি যোগ করা হয় মুসলিম পুরুষদের ধর্ষণের সংখ্যাটা, তাহলে সেটা উম্মাহর লজ্জাকে আরও বাড়িয়ে দিবে।
ইসলামি চিন্তাবীদগণ তাই আক্ষেপ করে বলে থাকেন, এই উম্মাহ আর কতদিন নিজেদের ধর্ষিতদের সঙ্খাই শুধু গুণে যাবে!
প্রতিবেদক : উসামা মাহমুদ
আর কত দেখবো আমার বোনের এই ধর্ষিতা খবর আহ্।