মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় আবইয়ান ও শাবওয়া রাজ্যে একের পর এক ভারী অভিযান চালাচ্ছেন প্রতিরোধ বাহিনী ‘একিউএপি’এর মুজাহিদিন। দলটির বীর যোদ্ধারা রাজ্য দুটিতে সাম্প্রতিক সময়ে আক্রমণ এতটাই প্রসারিত করেছেন যে, তাদের হামলায় প্রতিদিন রেকর্ড পরিমান শত্রুসেনা নিহত ও আহত হচ্ছে।
আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি এই প্রতিরোধ বাহিনীটি গত সপ্তাহে ইয়েমেনের কয়েকটি জায়গায় ৯টির বেশি পৃথক অভিযান চালিয়েছেন বলে জানা গেছে। যাতে কয়েক ডজন সৈন্য নিহত এবং আহত হয়েছে।
এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অভিযান হচ্ছে, গত সপ্তাহে শাবওয়া রাজ্যে টানা ৩ দিনের তীব্র লড়াইয়ের পর ২২ জুন সকালে আল-কায়েদা কর্তৃক ‘আল-ধালিয়া’ শহর বিজয়। এতে শত্রু বাহিনীর ১ জন ব্রিগেড কমান্ডার ও ১ কর্নেল সহ অন্তত ১৮ সৈন্য নিহত হয়েছে। অহত হয়েছে আরও বহু সৈন্য। এছাড়াও ধ্বংস হয়েছে সামরিক বাহিনীর ৩টি সাঁজোয়া যান সহ অসংখ্য যুদ্ধ-সরঞ্জাম।
এদিন আল-ধালিয়া শহর বিজয় করেই ক্ষান্ত থাকেননি মুজাহিদগণ। তাঁরা শহরটি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আড়াই ঘন্টার মাথায়ই নিকটস্থ ‘হাবিল জাবারি’ এলাকায় অভিযান চালাতে শুরু করেন। এলাকাটিতে ঐদিন (২২ জুন) দুপুর পর্যন্ত মুজাহিদদের পরিচালিত হামলায় ‘নাবিল আল-মুকার’ নামে নিরাপত্তা বেল্টের একজন ব্রিগেড কমান্ডার এবং তার অধীনে থাকা ২০ এরও বেশি সৈন্য হতাহত হয়।
অপরদিকে (২২ জুন) বিকালে রাজ্যটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত-সমর্থিত গাদ্দার বাহিনীকে টার্গেট করেও আক্রমণ চালান মুজাহিদগণ। যা রাজ্যটির আটাক এলাকায় একটি সামরিক চৌকি লক্ষ্য করে চালানো হয়। এলাকাটিতে ২ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে অভিযান। অবশেষে মহান রবের সাহায্যে মুজাহিদগণ সামরিক চৌকিটি ঘুড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। পাশাপাশি শত্রু বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে ‘আটাক’ এলাকারও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন।
স্থানীয় সূত্র মতে অভিযানের সময় মুজাহিদদের হাতে নিহত হয় ৫ সেনা এবং আহত হয় আরও ৫ সেনা সদস্য, বাকিরা ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। এর আগেও অর্থাৎ গত ৩১ মে এবং ১ জুন উপরোক্ত চৌকিটিতে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ২টি হামলা চালিয়েছিলেন ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাগণ।
তারপর গত ২০ জুন আবইয়ানের আহওয়ার জেলায় হামলা চালান মুজাহিদগণ। যেখানে সামরিক পোস্টে অবস্থানরত ২ সৈনিককে হত্যা করেন মুজাহিদগণ তাদের লাশ রাস্তার পাশে ঝুলিয়ে দেন।
এই হামলার একদিন পরে অর্থাৎ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আবইয়ানে দ্বিতীয় হামলাটি চালান মুজাহিদগণ। যা রাজ্যটির ‘শুকরা’ এলাকায় একটি সামরিক কনভয়ে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে চালানো হয়েছে। হামলাটি এমন সময় চালানো হয়, যখন সেনারা এলাকাটিতে টহল দিচ্ছিল। এতেও অর্ধডজন সেনা সদস্য নিহত এবং আহত হয়।
আল-কায়েদা যোদ্ধারা দেশটিতে গত সপ্তাহে তাদের সর্বশেষ অভিযানটি চালান ২৩ জুন দুপুরের কিছুক্ষণ পর শাবওয়া রাজ্যে। উপজাতীয় সূত্রগুলি জানিয়েছে যে, আল-কায়েদার প্রায় ৩০ জন সশস্ত্র যোদ্ধা রাজ্যটির প্রবেশদ্বারে আরব জোটের “শাবওয়া ডিফেন্স” পয়েন্টে আক্রমণটি চালালে ১৫ এরও বেশি গাদ্দার সৈন্য নিহত ও আহত হয়।
দেশটিতে আল-কায়েদার এমন পদক্ষেপকে অনেকেই নতুন যুদ্ধের সূচনা বলে নির্দেশ করছেন। যার মাধ্যমে আল-কায়েদা ইয়েমেনে পূণরায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।
২০১৭ সালের পর দলটিকে বড় কোন অভিযান চালাতে দেখা যায় নি। বরং একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে যোদ্ধাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে ইডেন ও মাকাল্লার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর। যেখানে ইডেনকে বলা হতো ইয়েমেনে আল-কায়েদার শক্তির উৎস এবং মাকাল্লাকে বলা হতো আল-কায়েদার অঘোষিত রাজধানী।
এসব গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে সরে যাওয়ার ফলে অনেকেই ইয়েমেনে আল-কায়েদার অস্তিত্ব টিকে থাকা নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন। অপরদিকে আল-কায়েদা এই সময়টাতে নতুন কোন শহর বিজয় এবং বড় ধরনের অভিযান না চালালেও হাদরামাউতের মতো বিশাল রাজ্য সহ বিভিন্ন স্থানে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে। এই দীর্ঘ সময়টাতে মিডিয়ার আলোচানার শিরোনামে না থেকে আল-কায়েদা মূলত এসব অঞ্চলে নিজেদের আরও সুসংগঠিত করতে থাকে।
ইয়েমেনে আল-কায়েদার বর্তমান নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের ম্যাপ:
২০২১ সালের শেষ দিকে দলটির বর্তমান আমীর শাইখ খালিদ আল-বাতরাফি এক সাক্ষাৎকারে ‘একিউপি’ কর্তৃক বড়ধরণের অভিযান না চালানো প্রসংঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ” এটা সত্য যে বর্তমানে আমরা এখানে বড় কোন অভিযান চালাচ্ছি না, তার অর্থ এটা নয় যে আমরা জিহাদ পরিত্যাগ করেছি। বরং আমরা সামনের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই সাথে আমরা আহলুস সুন্নাহ্ অনুসারী স্থানীয় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছি, কেননা আমাদের শত্রু একই।”
একই সময় তিনি ভিডিওটিতে সুন্নী বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর প্রশংসা করেন। এবং ভিডিওতে তাদের বীরত্বপূর্ণ অভিযানের ভিডিও ফোটেজগুলোও তুলে ধরা হয়।
এসময় তিনি ইয়েমেনে আল-কায়েদার দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দলটির ভিতরে গোয়েন্দা অনুপ্রবেশের বিষয়টি তুলে ধরেন। সেই সাথে অর্থনৈতিক সংকটের কথাও স্বীকার করেন। তবে এগুলোকে তিনি সাময়িক পরীক্ষা বলে মন্তব্য করেন, এবং তা অতি দ্রুত কেটে যাবে বলেও আশা পোষণ করেন।
বর্তমান ইয়েমেনে নতুন করে আল-কায়েদার অভিযানের ফলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দলটি ইতিমধ্যে তাদের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে দলটি বড় ধরণের সামরিক অভিযান চালাতে শুরু করেছে। সেই সাথে দলটি নতুন কৌশলে যুদ্ধের ময়দানে আবির্ভূত হয়েছে। যা আরব জোট ও ইরান সমর্থিত হুথি মিলিশিয়াদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখযোগ্য; তা হচ্ছ এডেন সাগর ঘিরে আল-কায়েদার কৌশলগত অবস্থান। এডেন সাগরের একপারে ইয়েমেনের বিস্তৃত এলাকা শত্রুদের কাছ থেকে দখল করে শক্তি বৃদ্ধি করছে আল-কায়েদার আরব উপদ্বীপ শাখা আনসার আশ-শরিয়াহ। আর অপর পারে আল-কায়েদার পূর্ব আফ্রিকা শাখা সোমালিয়া ও কেনিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে ইতিমধ্য শক্তিশালী অবস্থানে আছে। আর এই এডেন সাগর পার হয়েই লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল হয়ে ইউরোপে পণ্য যায়। বলা হয়ে থাকে এই মুদ্রপথ দিয়েই বিশ্বের ৬০ ভাগ বাণিজ্য হয়ে থাকে। তাই এই এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা যে অদূর ভবিষ্যতে শত্রুদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করার ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহের জন্য খুবই সুবিধাজনক হবে, সেটা বরাবরই সোৎসাহে উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকণ। আল-কায়েদা নেতৃত্বের এমন দূরদর্শী কৌশলগত অবস্থান গ্রহণের প্রশংসাও করছেন তাঁরা।
প্রতিবেদক : ত্বহা আলী আদনান
আলহামদুলিল্লাহ খুব সুন্দর প্রতিবেদন!
ভাই আমার একটি বিষয় জানার ছিলো, যে সেখানে বৈদেশিক শত্রু কারা কারা আছে?
বা ইয়েমেনে আল-কায়দার অবস্থান সম্পর্কে জানতে কোন আর্টিকেল বা কিছু আছে কিনা না?
থাকলে একটু অবগত করলে উপকৃত হতাম।
মাশা আল্লাহ! খুব সুন্দর প্রতিবেদন!
ভাই আমার একটি বিষয় জানার ছিলো, যে সেখানে বৈদেশিক শত্রু কারা কারা আছে?
বা ইয়েমেনে আল-কায়দার অবস্থান সম্পর্কে জানতে কোন আর্টিকেল বা কিছু আছে কিনা না?
থাকলে একটু অবগত করলে উপকৃত হতাম।