আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামপন্থী লেখকদের বই নিষিদ্ধ, স্কুল থেকে মসজিদ শিক্ষা সফরে বাধা

মুহাম্মাদ ইব্রাহীম

0
725

ভারতে মধ্যপ্রদেশের স্কুল পাঠ্যক্রম থেকে মুঘল শাসকদের ইতিহাস বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’জন ইসলামিক স্কলারের বই পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেয়ার দাবি ছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের। এরই প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইসলামপন্থীদের বই পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

একজন সিনিয়র শিক্ষাবিদ জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে ইসলামপন্থী এ দুই লেখকদের বই কথিত ‘সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মান্ধতা সৃষ্টির’ অযুহাতে সেগুলো নিষিদ্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এর পরই এ দু’জন লেখকদের বই নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রতিষ্ঠানটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ ইসমাইল ভারতীয় গণমাধ্যম ‘দ্যা টেলিগ্রাফ’ কে জানিয়েছেন, ‘কোন বিতর্ক হোক আমারা তা চাই না, বিধায় আমারা পাকিস্তানের আবুল আ’লা আল-মৌদুদী এবং মিশরের সাইয়্যেদ কুতুবের বইগুলি পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও জানান যে, ‘ ইসলামপন্থী লেখকদের বই ‘সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মান্ধতা’ প্রচার করেছে কথাটি সঠিক নয়। বইগুলিতে আপত্তিকর কিছু নেই। ডানপন্থী হিন্দুরা কিভাবে বুঝতে পেরেছে বই দু’টিতে সমস্যা আছে তা আমার জানা নেই।’

অন্যদিকে ভারতের রাজধানী দিল্লি শহরের একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফর হিসেবে এই সপ্তাহে শহরের একটি মসজিদে ভ্রমণে যেতে চেয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। মসজিদে ভ্রমণের খবর পেয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বজরং দলের সদস্যরা বাধা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ সময় জয় শ্রীরাম স্লোগান তুলে মসজিদে ভ্রমণ বাদ দিতে দাবি জানায় তারা। অন্যথায় বড়সড় আন্দোলনের হুমকি দেয়া হয় তাদের পক্ষ থেকে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এর আগে আমরা শিক্ষা সফরের অংশ হিসেবে মন্দির পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। এবার আমারা ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শহরের একটি মসজিদে যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করেছিলাম। কিন্তু তাদের বাধার কারণে মসজিদে ভ্রমণ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমারা।

মূলত মসজিদে ভ্রমণে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ইসলামি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবে এটা হিন্দুত্ববাদীদের সহ্য হয়নি। বরং ভারত থেক ইসলামি সংস্কৃতি ধ্বংস করে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র কায়েম করতে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদকে শহিদ করেছে তারা। অন্যান্য ইসলামি স্থাপনা ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে আছে তারা। এবং বর্তমানে ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতিও ধ্বংস করার জঘন্য কাজ করছে হিন্দুরা। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলামপন্থী লেখকদের বই ও মসজিদে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করছে। এবং প্রাইমারি স্কুলে ভারত মাতা পূজা করার নির্দেশ জারি করেছে বলে মনে করেন ইসলামি বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের এমন শোচনীয় অবস্থায় নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় স্থাপনা তথা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তন্ত্র-মন্ত্রের ধোঁকায় না পড়ে মুসলিমদেরকে নববী মানহাজের অনুসরণ করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উপদেশ দিয়ে আসছেন সচেতন উলামায়ে কেরাম।


তথ্যসূত্র:
——-
1. Aligarh Muslim University drops texts of two Islamic scholars-
https://tinyurl.com/y86hdkc9
2. Vadodara school calls off kindergarten field trip to mosque after Bajrang Dal threat-
https://tinyurl.com/53ap23s3

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধকঙ্গোতে বেসামরিক নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করছে জাতিসংঘ
পরবর্তী নিবন্ধতুচ্ছ অযুহাতে মুসলিম যুবককে পিটিয়ে খুন, দিলশান হত্যাকাণ্ডে মামলা নেয়নি পুলিশ