ছাত্রলীগের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ের পরে তথাকথিত গেস্টরুমে উপস্থিত হতে না পারায় ৬ শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। গত ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার দিকে ওই হলের ১০২৭ নাম্বার কক্ষে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেনের ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত। হোসেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিন্দুত্ববাদী লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ থাকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী (ভুক্তভোগী) ছাত্রলীগের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ে গেস্টরুমে উপস্থিত হতে পারেননি। তাই তাদের বিচার করার জন্য আলাদাভাবে গেস্টরুমে ডেকে নেয়া হয়। চড়-থাপ্পড় থেকে শুরু করে লাঠিপেটা পর্যন্ত করা হয় তাদের। গেস্টরুমে উপস্থিত থাকা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এসব ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী জানান, অভিযুক্ত মারুফ নিয়মিত মাদক সেবন করে। যে কারণে প্রায়শই খিটখিটে মেজাজ নিয়ে থাকে আর তার প্রভাব পরে গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের এসব শিক্ষার্থীর উপর। প্রায়ই গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপর পানির বোতল, স্ট্যাম্প ও জুতো ছুড়ে মারে।
আরেক অভিযুক্ত আশরাফুল শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ধরে গালিগালাজ করে। এর আগেও গেস্টরুমে সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে আশরাফুল। খুবই উগ্র স্বভাবের আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী হলো নাবিল, যে গেস্টরুমে জুনিয়রদের আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত। নাবিল প্রায়ই জুনিয়রদের ফোন চেক করতো বলে জানা যায়। নাবিলের বন্ধুদের দাবি সে নিজেকে কর্মী নয় বরং ছাত্রলীগ নেতা মনে করে।
আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী আরিফ প্রায়শই গেস্টরুমে জুনিয়রদের গায়ে হাত তুলে বলে জানা গেছে। সেও জুনিয়রদের কাছে আতঙ্ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
জানা যায়, হলের উক্ত কক্ষটিকে (১০২৭) ছাত্রলীগের তথাকথিত গেস্টরুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হল অফিসের অফিশিয়াল নথি অনুযায়ী এই রুমে কোনো আবাসিক শিক্ষার্থী নেই। দীর্ঘদিন ধরে এটি ছাত্রলীগের দখলে রয়েছে। অভিযোগ আছে, সেখানে সপ্তাহে ৬ দিন কিংবা কখনো কখনো ৭ দিন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমের নামে শারীরিক মানসিক ও নির্যাতন করে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেনের গ্রুপের নেতাকর্মীরা। নিয়মিত দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ও মাঝে মাঝে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখানে গেস্টরুম পরিচালনা করে।
জানা যায়, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। বর্তমানে দেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এ অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষাঙ্গনগুলো একদিকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি নতুবা লম্পট শিক্ষকদের লালসার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বর্তমান অবস্থায় অবিভাবকরা নিজ সন্তানদের শিক্ষালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রেরণ করেও নিশ্চিত থাকতে পারছেনা।
প্রচলিত গণতান্ত্রিক সিস্টেমের অন্তরালে সরকারি দলের পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগের মতো সংগঠনগুলো শিক্ষাঙ্গন সহ সারা দেশেই আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছে। এদের সকল অপকর্ম থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সকল স্তরের মুসলিমদেরকে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকগণ। সেই সাথে এসব পেটোয়া সংগঠনের জন্মদাতা এলিট গণতান্ত্রিক সিস্টেম ও সিস্টেমের পরিচালক পশ্চিমা দালালদেরকে উতখাত করতেও প্রতিরোধ সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে বলে মনে করেন তাঁরা।
তথ্যসূত্র:
——-
১। ৬ শিক্ষার্থীকে পেটালো ছাত্রলীগ
– https://tinyurl.com/2p994dey