পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ হেফাজতে মুসলিম তরুণীর মৃত্যু

উসামা মাহমুদ

0
665
অসহায় মুসলিম মেয়েটির মৃতদেহ

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলায় ১৮বছর বয়সী এক মুসলিম তরুণীর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয়। ভারতীয় একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে পুলিশ দাবি করে, মেয়েটি ২০শে অক্টোবর হেমতাবাদ থানার একটি টয়লেটে আত্মহত্যা করে।

মানবাধিকার গ্রুপের সেক্রেটারি জনাব মাসুম, কিরীটি রায় এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও দুই কর্মী এই ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিমের নেতৃত্বে ছিলেন। তারা বলছেন, পুলিশ মেয়েটির পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অল্প কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি ধাঁমাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

কিরীটি রায় মাকতুব মিডিয়াকে বলেন, “মুসলিম পরিবারটি পুলিশ এবং স্থানীয় হিন্দু রাজনীতিবিদদের চাপের মধ্যে রয়েছে যাতে মামলাটি না চালানো হয়। তিনি তার দাবির সমর্থনে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিও দেখিয়েছেন।”

প্রতিবেদনে এটাও অভিযোগ করা হয়েছে যে পুলিশ প্রায় তিন ঘণ্টা পর মুসলিম ঐ মেয়েটির মৃত্যুর খবর পরিবারকে জানায়।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, “২০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের মেয়েটির দেহ দেখতে দেওয়া হয়নি।”
অথচ তাকে সুস্থ অবস্থায় আটক করা হয়েছিল এবং “নিরাপত্তার কারণে” পুলিশ স্টেশনে আনা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, মেয়েটি বাঙ্গলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং বাগিডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। মেয়েটির আত্মীয়রা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমকে জানিয়েছে যে, একজন মহিলা পুলিশ কনস্টেবল, তিনজন পুরুষ সিভিক ভলান্টিয়ার এবং একজন পুরুষ সাব ইন্সপেক্টর এসে মেয়েটিকে আটক করে নিয়ে গিয়েছিল। গ্রেপ্তারের সময় (সিআরপিসির 46 ধারা) হেমতাবাদ থানার পুলিশ কর্মীরা ভিকটিম মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের কিছু জানায়নি।

ঘটনার পর দুপুর ১টার দিকে পুলিশ সদস্যরা মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কালিয়াগঞ্জ থানা পুলিশ মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়।

এটিও অভিযোগ আছে যে, তদন্তটি কোনও বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা করা হয়নি, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৬(1A) ধারা সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন করেছে। এটিও একটি বাধ্যতামূলক নিয়ম যে তদন্তের সময় মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের উপস্থিত থাকতে হবে। পুলিশ তার কোন কিছুর তোয়াক্কা করে নি।

কার্যধারায় অস্বাভাবিকতা

মুসলিম মেয়েটির মৃতদেহ যে স্থানে ডাক্তার কর্তৃক মৃত ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে তদন্ত করতে হবে। এখানে মেয়েটিকে হেমতাবাদ হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা হয় এবং রায়গঞ্জ PS U/D মামলা নং 361/22 এর অধীনে রায়গঞ্জ সরকারি হাসপাতালে তদন্ত করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেয়েটির পিঠ ও ডান হাত ও ডান পায়ে গুরুতর আঘাতের লালচে চিহ্ন রয়েছে।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বেও ভারতের বিভিন্ন কারাগারে হিন্দুত্ববাদী পুলিশের নির্মম আঘাতে অনেক মুসলিমের মৃত্যু হয়েছে। ভারতে মুসলিমদের জীবন যেন এখন নিতান্তই মূল্যহীন।



তথ্যসূত্র:
——–
1. Custodial death of Muslim girl: Fact-finding report alleges foul play (Maktoob Media)
https://tinyurl.com/4m9e9fu7

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানঃ ঊর্ধ্বমুখী রপ্তানি ও বিনিয়োগ অর্থনীতিকে দৃঢ় করছে
পরবর্তী নিবন্ধবর্বর জান্তা বাহিনীর গুলিতে ২ রোহিঙ্গা শিশু নিহত, আহত ৬