১৯ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শরণার্থী ফারজানা রেহমান। এত অল্প বয়সেই চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেছে তার। শরীরের অবস্থা খুবই দুর্বল। এমনকি অন্য কারো সাহায্য ছাড়া হাঁটতেও পারেন না। ১৫ মাস ডিটেনশন সেন্টারে ছিলেন তিনি। এরপর থেকেই তার এই অবস্থা। এই বয়সেই বেশ কয়েকবার চিকিৎসা জটিলতার মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি সাময়িকভাবে প্যারালাইসিসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
ডিটেনশন সেন্টারে কাটানো সময়গুলোর কথা মনে পড়তেই উদ্বেগে কেঁপে ওঠে ফারজানা রেহমানের কণ্ঠ। তিনি বলেন, অধিকাংশ রোহিঙ্গা বন্দী চিকিৎসা জটিলতায় ভোগেন। ডাক্তাররা অবশ্য ডিটেনশন সেন্টার পরিদর্শনে আসেন। তবে, সুচিকিৎসা প্রদানের জন্য নয়। কেউ যেন মরে না যায় সেটা নিশ্চিত করতে আসেন তারা। মারাত্মকভাবে অসুস্থ বন্দীদের কেবল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বন্দীদের অনেকে শুধু রোহিঙ্গা ভাষায় কথা বলতে পারেন। হিন্দিতে কথা বলতে পারে এমন রোহিঙ্গাদের সাথে থাকার জন্য তারা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলেও, তাদের এই আবেদন গ্রহণ কখনই করে না হিন্দুত্ববাদী কর্তৃপক্ষ।
নিজের বন্দী জীবনের কথা স্মরণ করে ফারজানা রেহমান আরও বলেন, “আমি যখন তীব্র যন্ত্রণায় কাঁদতাম, কর্মকর্তারা বলতো আমি নাকি অভিনয় করছি! আমি নাকি জন্তু-জানোয়ারের চেয়েও খারাপ। কোনো যত্ন পাবার অধিকারও নাকি রোহিঙ্গাদের নেই।”
মুহাম্মাদ ইমরান আখতারের বয়স ৩০ বছর। টগবগে যৌবনের দুটি বছরই তিনি কাটিয়েছেন হিন্দুত্ববাদীদের ডিটেনশন সেন্টারে। তিনি জানান, চিকিৎসার জন্য তাকে হ্যান্ডকাফ পরিহিত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তারদের সাথে স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে কোনো কথা বলারও অনুমতি তাকে দেয়নি হিন্দুত্ববাদী কর্মকর্তারা। তারা ডাক্তারদের বলেছে যে, এই ব্যক্তি একজন ‘কয়েদি’ এবং ‘অনুপ্রবেশকারী’। ফলে ডাক্তাররাও কথা বাড়ায়নি। অতি সামান্য চিকিৎসা দিয়ে বিদায় দিয়েছে।
মুহাম্মাদ আখতার লম্বা ও সুঠাম দেহের অধিকারী। তাতে কী? তাকে এখন আরও ছয়জন রোহিঙ্গা পুরুষের সাথে ভিকাশপুরির একটি মাত্র কক্ষে থাকতে হয়। পুলিশ তাকে বলে দিয়েছে, যদি তিনি ভিকাশপুরির বাইরে এক কদমও ফেলেন, তাকে পুনরায় ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হবে।
মুহাম্মাদ আখতার বলেছেন, ডিটেনশন সেন্টারে কোনো প্রবাহমান পানির ব্যবস্থা নেই। বন্দীরা বাহিরের একটি ট্যাপ থেকে কলস পূর্ণ করে পানি আনেন। পুরুষরা কোনো ভাবে এটা করতে পারেন, কিন্তু অনেক নারীই এই কলস বহনে সক্ষম নন।
আখতারের বর্ণনানুযায়ী, ডিটেনশন সেন্টারের কক্ষগুলোতে আলো-বাতাস প্রবেশেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। গরম কালে কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসে সেখানে, পাখাগুলোও খুব কমই কাজ করে। আর শীতকালে প্রত্যেককে দুটি করে কম্বল দেওয়া হলেও, কোনো উষ্ণ কাপড় দেওয়া হয় না বন্দীদের। তাদেরকে গোসল করতে হয় বরফ-শীতল পানি দিয়ে। এই অবস্থায় বিশেষভাবে বাচ্চাদের অসুস্থতা বেড়ে যায়।
“সেন্টারে স্বস্তি নিয়ে একটু নড়াচড়ার মতোও কোনো জায়গা নেই। আমরা সর্বদাই আবদ্ধ হয়ে ছিলাম”, বলেছেন মুহাম্মাদ আখতার।
[চলবে ইনশাআল্লাহ…]
অনুবাদ: সাইফুল ইসলাম
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হালাত নিয়ে তৈরি “Rohingya Refugees Recall Desperate Conditions With No Legal Recourse In Delhi Detention Centre” এই শিরোনামে article14 এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমরা ধারাবাহিক ভাবে বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করছি।
তথ্যসূত্রঃ
১। Rohingya Refugees Recall Desperate Conditions With No Legal Recourse In Delhi Detention Centre – https://tinyurl.com/yvxps73w
আগের পর্বগুলো পড়ুনঃ
কেমন আছেন ভারতের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ||পর্ব-১ || এক রোহিঙ্গা নারীর আত্মকাহিনী
কেমন আছেন ভারতের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা || পর্ব-২ || রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না ভারত
কেমন আছেন ভারতের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা || পর্ব-৩ || ভয়ানক ডিটেনশন সেন্টার
আল্লাহ আমাদের মুসলিম উম্মাহকে
হেফাজত করুন আমীন 😢😢