ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গ্রুপ হামাস ইসরাইলের উপর এক অতর্কিত অভিযানে ইসরাইলসহ পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। রকেট বৃষ্টির পাশাপাশি স্থল পথে, সমুদ্র পথে ও আকাশ পথে প্যারা গ্লাইডিং করে কমপক্ষে ১০০০ ফিলিস্তিনি ইসরাইলে প্রবেশ করে এই অভিযান পরিচালনা করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে এখনও সংঘর্ষ চলমান আছে। এছাড়া ড্রোনের মাধ্যমেও তারা হামলা চালাচ্ছেন।
গত ৫০ বছরের মধ্যে আগ্রাসী ইসরাইলের উপর পরিচালিত মুসলিমদের এটিই সবচেয়ে বড় সফল অভিযান। এতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে হাজারেরও বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ইহুদী হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
পাশাপাশি, ইসরাইলি সেনা অফিসারসহ অন্তত ১০০ ইহুদী সৈন্য ও নাগরিককে যুদ্ধ বন্দী করেছে ফিলিস্তিনিরা। এদের মধ্যে এক ইসরাইলি জেনারেল আছে বলেও গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। আরও অন্তত ৭৫০ ইহুদী নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছি ইসরাইলের বিভিন্ন সূত্র।
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা জায়নবাদী আগ্রাসনের প্রতিবাদে হামাস এই হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে। ফিলিস্তিন ও মসজিদুল আকসা স্বাধীন না করা পর্যন্ত তারা পুরো দমে লড়াই চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে হামাস।
ফলে, ইসরাইলও নির্বিচারে ফিলিস্তিনের আবাসিক এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালানো শুরু করে। ইসরাইলি সৈন্যদের গুলিতে এবং বিমান হামলায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে; আহত হয়েছে আরও অন্তত ২০০০ জন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, ইসরাইল বেছে বেছে ফিলিস্তিনি আবাসিক এলাকা, মসজিদ, হাসপাতাল, এম্বুল্যান্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। একাধিক মসজিদ ও উঁচু আবাসিক ভবন ধ্বসে পরেছে এসব বিমান হামলায়।
পরিস্থিতি অশান্ত হতে থাকলে হামাস নেতারা লেবাননের হিজবুল্লাহকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়। হামাসের আহবানে সাড়া দিয়ে লেবানন থেকে গাইডেড মিসাইল ও মর্টাল শেল দিয়ে ইসরাইলি লক্ষ্যে আক্রমণ চালিয়েছে হিজবুল্লাহ।
এদিকে হামাসের হামলার পর, খুব অল্প সময়ের মধ্যে পশ্চীমা বিশ্বের নেতারা একে একে ইসরাইলের পক্ষে বিবৃতি প্রদান করতে থাকে।
জেরুজালেমে অবস্থিত আমেরিকান এম্বেসির চার্জ ডি’এফেয়ার্স, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট, চেক রিপাবলিক, ফ্রান্স, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ইটালি ইসরাইলের পক্ষে বিবৃতি প্রদান করেছে।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে, নিজেদের প্রতিরক্ষা করার অধিকার ইসরাইলি জনগণের আছে।
কিন্তু, ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন নতুন নয়। ২০১৪ সালে ফিলিস্তিনিদের উপর সবচেয়ে ভয়ংকর আগ্রাসন চালিয়েছিল ইসরাইল।
টানা সাত সপ্তাহ ধরে চলা সে ইহুদী আগ্রাসনে ২,২০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। সেসময় ফিলিস্তিনের ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় ৬,০০০ এরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। এসব হামলায় অন্তত ১৮,০০০ ফিলিস্তিনি বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়ে যায়।
কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের কোনো নেতাকে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের নিরাপত্তার অধিকার নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি। এমনকি মুসলিম বিশ্বের নেতারাও ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলি আগ্রাসনের ব্যাপারে কার্যত নীরব ভূমিকা পালন করে।
এদিকে, পুরো বিশ্বে মুসলিম দেশগুলোর উপর সবচেয়ে বেশি আগ্রাসন চালানো আমেরিকা আরও এক ধাপ এগিয়ে ইসরাইলের পক্ষে বলেছে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষার জন্য যা করা দরকার, আমেরিকা তাই করবে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছে, ইসরাইলকে সব রকমের সহায়তা করার জন্য ওয়াশিংটন প্রস্তুত আছে। “আমরা কখনও ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়াতে পিছপা হবো না।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাইডেনের এই বক্তব্য আসলে ফিলিস্তিনের উপর পূর্ণ সামরিক আগ্রাসন চালানোর জন্য ইসরাইলকে গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছে। একই সাথে তারা তাদের যুদ্ধ জাহাজ ও বিমানগুলোকে ইজরায়েলের কাছাকাছি আনছে ইজরাইলকে সমর্থন দেখানোর জন্য।
এদিকে, জাতিসংঘও কার্যত ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইসরাইলি আগ্রাসনে নিপীড়িত-নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে সহমর্মিতা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মধ্য প্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার জাতিসংঘ কোঅরডিনেটর টম ওয়েনসল্যান্ড বলেছে, “এমন প্রশ্নে আমি কিছুটা আশ্চর্য হয়েছি।”
এদিকে, মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সৌদি আরব, মিশর ও তুরস্ক এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও সরাসরি ফিলিস্তিনি মুসলিমদের পক্ষে বিবৃতি না দিয়ে, উভয় পক্ষকে নিজেদের কার্যক্রমে লাগাম টানার পরামর্শ দিয়েছে।
ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান এক বিবৃতিতে স্পষ্ট জানিয়েছে যে, ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর পরিচালিত জায়নবাদী ইসরাইলি আগ্রাসনই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী। স্বাধীনতা এবং প্রতিরক্ষা ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার।
বিবৃতিতে, ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ন্যায্য ও ঐতিহাসিক অধিকারের পক্ষে পূর্ণ সমর্থনও জ্ঞাপন করেছে তালিবান প্রশাসন। পাশাপাশি, নিপীড়িত ফিলিস্তিনি মুসলিমদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য সকল মুসলিম দেশ, অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন এবং আন্তর্জাতিক মহলকে আহ্বান জানিয়েছে তালিবান সরকার।
এদিকে, হামাসের অভিযানকে সমর্থন দিয়ে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “উম্মাহর উচিৎ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করা।”
এছাড়াও, কাতার ও ইরান সরাসরি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে যে, চলমান অস্থিরতার জন্য ইসরাইল এককভাবে দায়ী। বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরাইল যেন এসব ঘটনাকে ভিত্তি করে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের উপর অযৌক্তিক যুদ্ধ শুরু না করে।
ইরানের সুপ্রিম লিডার আলী হুসাইনি খোমেনির এক উপদেষ্টা বলেছে, ইসরাইলের উপর পরিচালিত ফিলিস্তিনি হামলাকে ইরান সমর্থন করে।
মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের বাইরে মিশরের আল-আজহার আল-শরিফ মসজিদের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্বের বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের পদক্ষেপগুলোরও নিন্দা জানানো হয়েছে তাদের বিবৃতিতে। “ফিলিস্তিনের প্রসঙ্গ আসলে [আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়] শুধু দ্বিমুখীতারই আশ্রয় নেয়।”
শায়েখ হামাস যদিও আ ফ গা ন দের মতো সঠিক মানহাজ অনুসরন করে না,, তো আ ফ গা ন তালেবান কি হামাসদের সাহায্য করবেন,, সঠিক উত্তর জানতে চাই প্রিয় শায়েখদের কাছে থেকে