ফরিদপুরে উগ্র হিন্দুদের নৃশংস হামলায় নিহত ২, আহত ৮

0
277

ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লীতে উগ্র হিন্দুদের নৃশংস হামলায় দুই নির্মাণশ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ সহ গুরুতর আহত হয়েছেন আরও আটজন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশংকাজনক। গ্রামের কালি মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনার ধোঁয়া তুলে উগ্র হিন্দু জনতা এই হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতা সংঘটিত করে। এলাকায় বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনার একাধিকদিন পার হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নিতে পারেনি পুলিশ।

কিছু সূত্র বলছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তপতি মন্ডল নামে এক নারী মন্দিরে সন্ধ্যাবাতি জ্বালিয়ে ঘরে ঘোষি নিতে আসেন। এসে দেখেন আগুনে দেবতার শাড়ি পুড়ে গেছে। এ সময় কিছু উগ্র হিন্দু ডাকাডাকি করে লোক জড়ো করে পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ করা মুসলিম নির্মাণ শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। সেসময় তারা নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের একটি কক্ষে শ্রমিকদের হাত-পা বেঁধে লাঠি-রড দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে মাথা থেতলে মেঝেতে ফেলে আটকে রাখে। খবর পেয়ে প্রথমে মধুখালী থানার ইউএনও এবং ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারাও হামলার শিকার হন ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। দীর্ঘ ছয় ঘন্টারও বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর আহত সাত শ্রমিককে উদ্ধার করে চারজনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আর বাকি তিনজনকে মধুখালি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

তবে ঐ আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হলো- তা এখনও নিশ্চিত জানে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই ঘটনায় উগ্র হিন্দু জনতা দুই মুসলিম শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করলো। অথচ অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় কয়েকজন মুসলিম ছিলেন কেবল ওই নির্মাণ শ্রমিকেরাই। সেই কারণে নিছক সন্দেহের বশে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে দুই মুসলিম সহোদর ভাইকে। নিহত দুই ভাই হলেন- মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও আশাদুল (১৫)।

আজকের পত্রিকা জানিয়েছে, সরেজমিন অনুসন্ধান ও এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী মন্দিরটি সর্বজনীন। ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রাম আর পঞ্চপল্লী এলাকা। এই এলাকাটি পাঁচটি গ্রাম নিয়ে। সবগুলো গ্রামই হিন্দু অধ্যুষিত। আশেপাশের এলাকাগুলোও হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। আগুন লাগার খবরে বেশি লোক জড়ো হয় আশেপাশের এলাকা থেকে।

স্থানীয় কিছু সূত্র এমনও দাবি করেছে যে, মূলত স্কুলের কাজ করা ঠিকাদারের কাছে স্থানীয় হিন্দু আওয়ামীলীগ নেতার চাঁদা দাবি করার প্রেক্ষিতে হামলা, মারধোর ও হত্যার ঘটনা ঘটলে, পরে বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতেই ইচ্ছাকৃতভাবে মন্দিরে দেবির শাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে। এমনকি নিহত মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করার অভিযোগও উঠেছে।
বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে প্রমাণ না করা গেলেও, ইতিপূর্বে এই এলাকাতে হিন্দু যুবক কর্তৃক মন্দিরে আগুন লাগিয়ে মুসলিমদের দায়ী করার ঘটনা ঘটেছে। দেশের অন্যান্য স্থানেও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্য এমন ঘটনা ঘটানোর অসংখ্য নজির বিদ্যমান।

এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনা শুনে সেখানে মধুখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন আহমেদ ও ওসি মিরাজ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকে ঢুকতে দেয়নি হিন্দু জনতা। ঘটনাস্থলের অদূরে তাদের ঘিরে রাখে হিন্দুরা। ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় তারা অবরুদ্ধ ছিলেন। এরপর ফরিদপুর পুলিশ লাইনস, রাজবাড়ী পুলিশ লাইনস, মাগুরার শ্রীপুর থানা ও ফরিদপুর থেকে র্যাবের সদস্যরা গিয়ে ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ফাটিয়ে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করে। এরপর ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলমের উপস্থিতিতে ওই শ্রমিকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আহতদের মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান, আরেক শ্রমিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত দুইটার সময় বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাকি পাঁচ শ্রমিক এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।

এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা বা গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেনি। নিহত দুই ভাইয়ের পরিবারে চলছে স্বজন হারানোর আহাজারি। একইসাথে কর্মক্ষম দুই ছেলেকে হারিয়ে স্বজনরা পাগলপারা হয়ে গেছেন। কিছুতেই তারা নিজেদের শান্তনা দিতে পারছেন না। তরতাজা যুবক দুই ছেলেকে হারানোর শোক কিভাবে সইবেন বুঝতে পারছেন না তারা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য পাল্টা বক্তব্য চলমান রয়েছে। বিশেষ করে উগ্র হিন্দুদের দেখা যাচ্ছে, এই ঘটনায় তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছে। বিপরীতে মুসলিমরাও পরিস্থিতির গুরুত্ব ও গভীরতা বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ ও প্রস্তুতি নেওয়ার উপর আলোকপাত করছেন।


তথ্যসূত্র:
১। ফরিদপুর মন্দিরে আগুন, সন্দেহের জেরে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহত
https://tinyurl.com/bdfbsvmk
২। উত্তপ্ত ফরিদপুর, পিটিয়ে দুই সহোদরকে হত্যা
https://tinyurl.com/y3bcnm6j
৩। দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা : অন্যতম হোতা আটক
https://tinyurl.com/2s498d92
৪। ফরিদপুরে মন্দিরে আগুনের ঘটনায় নিহত ২ ভাইয়ের দাফন সম্পন্ন
https://tinyurl.com/yas5443e
৫. ফরিদপুরে মন্দিরে আগুনে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই, হামলা সন্দেহের বশে
https://tinyurl.com/46kerm7z

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ২০ এপ্রিল, ২০২৪
পরবর্তী নিবন্ধপশ্চিম তীরে ৩০ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী