৩ হাজার টাকার ফ্যান ১০ হাজারে কিনলো বিএমডিএ

0
134

এক টাকা দামের প্রতিটি খাম কেনা হয়েছে ৯ টাকায়। আর ৩ টাকার খাম ১৩ টাকায়। বাজারে ১২৮ জিবির যে পেনড্রাইভের দাম ১ হাজার টাকা, তা কেনা হয়েছে আড়াই হাজারে। ৩ হাজার ৩০০ টাকার ইউপিএসের দাম ধরা হয়েছে ৬ হাজার টাকায়। আর ৩ হাজার টাকার ওয়াল ফ্যান ৯ হাজার ৯০০ টাকা দরে কেনা হয়।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) বিভিন্ন প্রকল্পে কোটেশনের মাধ্যমে কেনাকাটায় এমন অস্বাভাবিক দাম দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে প্রকল্প পরিচালকেরা (পিডি) অস্বাভাবিক মূল্য পরিশোধ করে নিজেদের কমিশন বাগিয়ে নেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে মালপত্র বুঝে না নিয়ে শুধু কাগজ-কলমে কেনাকাটা দেখিয়ে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করারও অভিযোগ রয়েছে।

২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিএমডিএর বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীরা ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৬ টাকার কেনাকাটা করেছে শুধু কোটেশন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।

নথিপত্র ঘেঁটে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকা জানিয়েছে, বিএমডিএর ইআইইসিডি প্রকল্পের পরিচালক শহিদুর রহমান গত বছরের ১৯ জুন একটি কোটেশন বিজ্ঞপ্তি দেয়। কমডেক্স ইনফরমেশন টেকনোলজি নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৬ হাজার টাকায় একটি ইউপিএস, আড়াই হাজার টাকায় পেনড্রাইভ, ৩ হাজার ৬০০ টাকায় র‌্যাম ও সাড়ে ৩ হাজার টাকায় সিপিইউ ক্যাসিংসহ অন্যান্য মালপত্র সরবরাহ করে।

মডেল অনুযায়ী অনলাইন বাজার যাচাই করে দেখা গেছে, পাওয়ার গার্ডের ওই ইউপিএসের দাম বাস্তবে ৩ হাজার ৩৯০ টাকা, ক্যাসিংয়ের দাম ২ হাজার ৩০০ টাকা এবং ১২৮ জিবি পেনড্রাইভের দাম মাত্র ১ হাজার টাকা। কোটেশনেই এসব দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল পিডি।
পিডি শহিদুর রহমান ৩ হাজার ৩৯০ টাকার যে ইউপিএস কিনেছে ৬ হাজার টাকায়, সেই একই ইউপিএস আরেক কোটেশনের মাধ্যমে ৪ হাজার ৯০০ টাকায় কিনেছে এইচভিসিপি প্রকল্পের পিডি এটিএম রফিকুল ইসলাম। চার্টার্ড কম্পিউটার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর পিডি রফিকুল ইউপিএসের সঙ্গে ৬৯ হাজার ৮৫০ টাকায় এইচপির কোরআই-৩ প্রসেসরের একটি ল্যাপটপও কিনেছে। বাজারে এর দাম ৬০ হাজারের বেশি নয়। এই পিডি সাইম প্রোডাক্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২৫০ পিস ক্যাপ কিনেছে ১২৯ টাকা দরে। বাস্তবে এই ক্যাপগুলোর দাম ৫০ টাকার বেশি নয়।

নথিতে আরও দেখা যায়, সেচ অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্পের পিডি নূর ইসলাম ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর নাভানা ফার্নিচার থেকে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩০৫ টাকার আসবাবপত্র কেনে কোটেশনের মাধ্যমে। এ ছাড়া গত বছরের ২২ নভেম্বর বিসমিল্লাহ মেট্রো অটোমোবাইলস থেকে কোটেশনে জিপের যন্ত্রাংশ কেনে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭০ টাকার। এই পিডি কমডেক্স ইনফরমেশন টেকনোলজির কাছ থেকে কোটেশনের মাধ্যমে গত বছরের ১৭ অক্টোবর ৪ লাখ ৪১ হাজার ৪৩০ টাকার কম্পিউটার সামগ্রী কিনেছে।

আবার আরেক প্রকল্প পরিচালক নাজিরুল ইসলাম গত বছরের ১৯ জুন চার্টার্ড কম্পিউটার থেকে ৮৫ হাজার টাকা দামের তিনটি ফটোকপি মেশিন কিনেছে প্রতিটি ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৫ টাকায়। এ ক্ষেত্রে তিনটি ফটোকপি মেশিনের জন্য বাড়তি বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৮৩৫ টাকা।


তথ্যসূত্র:
১. বিএমডিএর কেনাকাটা: তিন হাজার টাকার ফ্যান ১০ হাজারে – https://tinyurl.com/4rect84n

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ২৭ জুন, ২০২৪
পরবর্তী নিবন্ধ৫০০ কেভি আরগন্দী সাবস্টেশন নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন করল ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান