
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত ১০ মাসেও প্রকাশ্যে আসতে পারেনি টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। বারবার ফিরে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে দেশের সবচেয়ে প্রকাশ্যে গণহত্যা চালানো দলটি। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সবধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বসে নেই বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এবং দেশে গা ঢাকা দেওয়া দলটির নেতাকর্মীরা। তারা এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে নতুন করে পরিকল্পনা সাজিয়েছে। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ, সড়কে ছিনতাই এবং ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর পেছনে আওয়ামী লীগের যোগসূত্রতা পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে মূলত তারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) চত্বর ও হাইকোর্টের সামনের সড়ক থেকে সাতটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাবি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের পাশে একটি গাছের নিচে প্রথমে ছয়টি অবিস্ফোরিত ককটেল দেখতে পায় নিরাপত্তা প্রহরীরা। পরে ঢাবির প্রক্টরিয়াল টিম, শাহবাগ থানা ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্ফোরকগুলো নিরাপদভাবে নিষ্ক্রিয় করে।
এর আগে ভোরবেলা হাইকোর্ট মাজার গেটের সামনে ও এর বিপরীত পাশে দুর্বৃত্তরা দুটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এর মধ্যে একটি ককটেল গেটের সামনেই বিস্ফোরিত হয়। অন্যটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় সড়কে পড়ে থাকে। পরে সেটিও নিষ্ক্রিয় করে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।
এর পাশাপাশি গত কয়েক দিনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং সেগুনবাগিচা এলাকায় সন্ধ্যায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে গত কয়েক দিনে ডেমরা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। এসব ছিনতাইয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ করছে অনেকে।
সম্প্রতি এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে জানানো হয়েছে, দেশকে অস্থিতিশীল করতে আওয়ামী লীগের একাধিক টিম মাঠে সক্রিয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় আওয়ামী লীগের লোকজন এখন প্রকাশ্যে কিছু করতে পারছে না। ফলে বেকায়দায় আছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, নানা সংগঠন ও আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগ তৎপরত হওয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিভাগে কর্মরত তাদের নেতাকর্মীদের কাজে লাগানো হচ্ছে। এছাড়াও বিদেশে বসে জুম, হোয়াটসআপ ও সামাজিক মাধ্যমে মিটিং করে নানা পরিকল্পনা করছেন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাসহ পলাতক নেতারা। তাদের প্রধান টার্গেট ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ব্যর্থ করা। আগামী ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে বেশ কিছু প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৬ জুলাই পর্যন্ত সময়কে তারা টার্গেট করেছে। এই সময়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করবে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে আউট হয়ে যাওয়া দলটি।
গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, সরকারি চাকরিবিধি অধ্যাদেশ-২০২৫ সংশোধনের নামে যে আন্দোলন চলছে এর নেপথ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বড় একটি অংশ। যা গোয়েন্দা রিপোর্টেও উঠে এসেছে। তারা দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়কে উত্তপ্ত করে সব কাজ স্থবির করতে চায়। এজন্য ঈদের ছুটির আমেজ কাটতে না কাটতেই আবার আন্দোলনে সরব হয়ে উঠেছে সেই গোষ্ঠীটি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ধানমন্ডি ৩২ ও ২৭, জিগাতলা, খেজুরবাগান, শুক্রাবাদ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বসিলা, ঢাকা উদ্যান, পল্লবী মেট্রোরেলের ফাঁকা জায়গা, বনানী ও বিমানবন্দর এলাকায় ঝটিকা মিছিলের পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ধানমন্ডি এলাকায় গতকাল রোববার (১৫ জুন) ২৭ সেকেন্ডের একটি ঝটিকা মিছিলের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
তথ্যসূত্র:
১. আ.লীগের নতুন ছক, দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা!
– https://tinyurl.com/3r3pxd4m