বুকে ছিল আলেম হবার অদম্য স্বপ্ন; জুলাই আন্দোলনে শহীদ হন ১৩ বছরের মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ

0
66

মুন্সীগঞ্জের পাথরঘাটা বড় কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই কোরআনের ১২ পারা মুখস্থ করেছিলেন আহমদ আবদুল্লাহ। আলেম হওয়ার অদম্য স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিল সে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবদুল্লাহ।

দেশজুড়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় পাথরঘাটা মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র আবদুল্লাহ নিজেকে ঘরে আটকে রাখতে পারেননি। তাঁর পরিবার জানায়, ১৮ জুলাই সকালে কাউকে না জানিয়ে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে সে। এরপর জোহরের নামাজের পর বাসে করে ঢাকার কাজলায় গিয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়।

আবদুল্লাহর বাবা মো. মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক ছাত্র ফোন করে খবর দেয়, আবদুল্লাহকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাজলার অনাবিল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তারা তখন জানতেও পারেনি যে সে ঢাকায় এসেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সহপাঠীদের বর্ণনায়, আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিল আবদুল্লাহ। ছয় রাউন্ড গুলির শিকার হয় সে; তার বুকে তিনটি রাবার বুলেট লাগে, আর বাঁ হাত, কোমর ও পায়ে তিনটি তাজা গুলি বিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও প্রথম গুলি লাগার পর রাস্তা ছাড়েনি সে, প্রতিবাদ চালিয়ে গিয়েছে। পরে সহপাঠীরা তাকে হাসপাতালে নেয়।

হাসপাতালে নেওয়ার পর সহযোদ্ধারা তার কাছ থেকে মায়ের ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করেন। মনিরুজ্জামান বলেন, তখনও ছেলে জ্ঞান হারায়নি, কিন্তু অল্প সময় পর অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

ঢাকায় এসে হাসপাতালে পৌঁছানো কঠিন ছিল। শহরজুড়ে ছিল ব্যারিকেড আর গুলির শব্দ। সেখানে গুলিবিদ্ধদের আর্তনাদ আর মৃতদেহ দেখতে পায় পরিবার। অনেক খোঁজাখুঁজির পর হাসপাতালের এক স্টাফের সহায়তায় ছেলের নিথর দেহ খুঁজে পান বাবা।

তারপরও পুলিশের অনুমতি না পেয়ে দুই দিন মরদেহ ফেরত পেতে অপেক্ষা করতে হয়। ২০ জুলাই বিকেলে পোস্টমর্টেম শেষে মরদেহ গ্রহণ করে মাতুয়াইল কবরস্থানে দাফন করা হয় আবদুল্লাহকে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার সন্তান আবদুল্লাহ তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় বোন মরিয়ম বিবাহিত, ছোট ভাই আনাস সাত বছর বয়সী, শেখদীর মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মনিরুজ্জামান মৌসুমি ব্যবসা করেন।

মায়ের আদরের সন্তান আবদুল্লাহ ছিলেন যত্নবান ও সহযোগী। মা আমেনা বেগম বলেন, ‘ছেলে আমার ফুলের টবের মাটি এনে দিত। ঘরের প্রতিটি কোনায় তার স্মৃতি। বৃষ্টি হলে মনে হয়, আমার ছেলে মাটির নিচে ভিজে যাচ্ছে।’


তথ্যসূত্র:
১. আলেম হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই শহীদ হল ১৩ বছরের আবদুল্লাহ
– https://tinyurl.com/3j39w3w9

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তরায় কোটি টাকা ছিনতাইয়ের নেতৃত্বে সাবেক সেনা ও পুলিশ সদস্য
পরবর্তী নিবন্ধএক বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমানো অর্থের পরিমান বেড়েছে ৩৩ গুণ