লালমনিরহাটে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননা; মিডিয়ার প্রোপাগান্ডায় সত্য ঘটনা আড়ালের অপচেষ্টা

0
165

দেশে বাক স্বাধীনতার নামে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সময়ে সময়ে কটূক্তি করে আসছে এক শ্রেণির ইসলাম বিদ্বেষী মানুষ। এই জঘন্য কাজকে ব্যক্তি স্বাধীনতা কিংবা বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে বৈধতা উৎপাদন করেছে দেশের সেক্যুলার মিডিয়া। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে কটূক্তি করেছে খোদ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক থেকে নিম্ন পর্যায়ের নাপিত পর্যন্ত। কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিমদের ভালোবাসা ও বিশ্বাসকে নিরাপত্তা দেওয়ার দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেয়নি সরকার।

গত বছরের ০৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মুসলিমরা। তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস আবেগের নিরাপত্তার দাবিতে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়েছিল। তারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছিল হাসিনা ও আওয়ামী জাহিলিয়্যাতকে। শহীদদের অধিকাংশই উজ্জীবিত হয়েছিল শাহাদাতের মর্যাদা লাভের আশায়।

সেই হিসেবে অনেকের আশা ছিল দেশে কিছুটা হলেও মুসলিমদের জান, মাল ও বিশ্বাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। কিন্তু ০৫ আগস্টের পর শুরু হয় এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। শুরু হয় একের পর এক আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি ও অবমাননার ঘটনা।

পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটির রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদুর রহমান আল্লাহ তায়ালাকে নিয়ে অত্যন্ত জঘন্য ভাষায় ফেসবুকে পোস্ট করে।

তার এই ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে কোনা পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি তার বিরুদ্ধে। তার বিপক্ষে কোন মিডিয়া লেখেনি। তার বিরুদ্ধে আলেম সমাজসহ সবাই আওয়াজ তুললেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে তা শুনানির পূর্বেই খারিজ করে দেওয়া হয়। এমনকি ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত সকল আইনও বাতিল করা হয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননার সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাটে। স্থানীয় একটি সেলুনের মালিক হিন্দু পরেশ চন্দ্র শীল (৬৯) ও বিষ্ণু চন্দ্র শীল (৩৫) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করে। দীর্ঘদিন যাবত ধরেই দোকানে আসা মুসলিমদের চুল কাটানোর সময় তারা সুযোগে ইসলাম ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি করে। বিশেষ করে তারা কম বয়সী মুসলিম যুবকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। কম বয়সী যুবকদের দ্বীন সম্পর্কে কম জানা শোনার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের মাঝে সংশয় বিস্তার করার অপচেষ্টা চালায়। বিশেষ করে পরেশ চন্দ্র শীল নিয়মিত ভাবেই এই কাজ করে আসছে। স্থানীয়রা তাকে একাধিকবার সতর্কও করেছেন বলে জানা যায়। কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার করেছে পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল। এমনকি তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি স্কুল পড়ুয়া ছোট শিশুও। এমনটিই উঠে এসেছে গণমাধ্যমের রিপোর্টে। অল্প বয়সী এসব ছোট বাচ্চারা চুল কাটাতে গেলে পরেশ কৌশলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি করে এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মনে সংশয়ের সৃষ্টি করে।

ঘটনার সূত্রপাত:

গণমাধ্যমকে দেওয়া ভুক্তভোগী যুবক ও স্থানীয়দের সাক্ষাতকারের বরাতে জানা যায়, গত শুক্রবার (২০ জুন) পরেশের দোকানে চুল কাটাতে যান ১৯ বছর বয়সী মোঃ নাজমুল ইসলাম। চুল কাটানোর এক পর্যায়ে পরেশ তার চিরায়ত অভ্যাসের ধারাবাহিকতায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইসলামকে নিয়ে গল্প শুরু করে। আলাপের এক পর্যায়ে সে সুযোগ বুঝে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে শুরু করে।

ওই যুবক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ চুল কাটার মাঝ পথে সে (পরেশ) আমাকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের নবীর নাম কি? আমি বললাম, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তারপর সে প্রশ্ন করে তার কতজন স্ত্রী ছিলেন? আম উত্তরে বলি ১১ জন স্ত্রী ছিলেন। তারপর সে বলে, সবার ছোট স্ত্রী জয়নাব না কি যেন নাম? উত্তরে আমি বলি তার নাম হযরত আয়েশা রাদ্বিআল্লাহু আনহা’

ওই যুবক আরও বলেন, এক পর্যায়ে পরেশ আয়েশা রাদ্বিআল্লাহু আনহার সাথে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিয়ে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে এবং আপত্তিকর কথা বলে।

ভুক্তভোগী নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে আরও জানান, চুল কাটানোর সময় পরেশের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননার সময় তাকে চুপ করে কাজ করতে বলেন। কিন্তু সে তার কথায় কোনোর কর্ণপাত না করে একের পর এক অবমাননার মাধ্যমে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করে।

এমনকি পরেশ ভুক্তভোগী ওই যুবককে দাড়ি রাখতেও নিষেধ করে।

পরে এই ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় জনতা। স্থানীয় জনতা একত্রিত হয়ে এই ঘটনার কারণ জানতে চায় পরেশ ও বিষ্ণুর কাছ থেকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ঘটনার একাধিক ভিডিও গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, স্থানীয় লোকজন তাদের কাছ থেকে এই ঘটনার ব্যাখা জানতে চাইলে তারা ঘটনার কথা শিকার করে মাফ চাইতে থাকে। পরে স্থানীয় জনতা পুলিশকে খবর দেয় এবং তাদেরকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।

দশ টাকা কান্ড:

গ্রেফতারের ঘটনার পর পরেশের ছেলের বৌ একটি ভিডিওতে দাবি করে, তার শ্বশুরের সাথে এক লোকের দশ টাকা নিয়ে কথা কাটাটি হয় যার জের ধরে পরেশকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। যার জের ধরে পরে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং মামলা দায়ের করা হয়।

কিন্তু এই ঘটনা অস্বীকার করেছেন ভুক্তভোগী নাজমুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, দশ টাকার কাহিনী সম্পূর্ণ বানোয়াট। এই ঘটনার সাথে দশ টাকার কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়াও, স্থানীয় জনতা যখন তাদের দোকানে ঘেরাও করে ও পুলিশের হাতে সোপর্দ করে তখন এই ধরনের কোনও দাবিই করেনি পরেশ ও বিষ্ণু। যদি বাস্তবেই এমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকতো তারা পুলিশের সামনে বলতে পারতো যা তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনে ব্যবহার করার সুযোগ থাকতো। কিন্তু তারা সরাসরি দোষ স্বীকার করেছে এবং ক্ষমা চেয়েছে। যার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে পরবর্তীতে।

মামলা দায়ের ও বিদেশি বিভিন্ন নম্বর থেকে বাদী ও সাক্ষীদের হুমকি:
এই ঘটনার জেরে আজিজুর রহমান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি লালমনিরহাট সদর থানায় ধর্ম-অবমাননার একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী আজিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মামলা দায়েরের পর থেকে তাকে এবং মামলার সাক্ষীদের ফোন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে তাদেরকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে।

আজিজুর রহমান গণমাধ্যমকে আরও বলেন, যে সমস্ত নাম্বার থেকে হুমকি আসছে সেগুলোর অধিকাংশই বিদেশি নাম্বার, দেশি নাম্বার নয়। মামলার এজহার থেকে তাদের নাম্বার সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিদেশি ওই সকল নাম্বারগুলো থেকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কাবাঘরসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাজে ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলার এক সাক্ষী।

এমনকি লালমনিরহাট থানার ওসিকেও মামলা গ্রহণ করার জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে। হোয়াটসআ্যপে মেসেজের মাধ্যমে তাকে হুমকি প্রদান করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের দাবি, এইসকল নম্বর ভারতের। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের উগ্র হিন্দুরা নাম্বার সংগ্রহ করে এইসব হুমকি প্রদান করছে।

মিডিয়ার মিথ্যাচার:

যখনই ইসলাম ও মুসলিমদের বিশ্বাসের অবমাননা সম্পর্কিত কোনও ঘটনা ঘটে দেশের সেক্যুলার মিডিয়া সবসময় সেইটাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে ডেমানাইজ করার চেষ্টা করে।

সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এই ঘটনার দীর্ঘ একটি সংবাদ প্রকাশ করে। সেখানে তারা মূল ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। তারা এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা চেষ্টা করেছে। এছাড়াও, দোকানে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা উল্লেখ করেছে যার সাথে বাস্তবের কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়াও ‘গ্রেফতারের পর পরেশ বিষ্ণুর বাড়িতে হামলা ভাঙচুর করা হয়েছে’ এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে দেশের একাধিক গণমাধ্যম। কিন্তু বাস্তবে এই ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পরেশ শীলের স্ত্রী। এমনটাই উঠে এসেছে গণমাধ্যমের রিপোর্টে।


তথ্যসূত্র:
১. https://tinyurl.com/cvnj2sm5
২. https://tinyurl.com/ms3mxcza
৩. https://tinyurl.com/yw3e5vtj
৪. https://tinyurl.com/2tsevcy5

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবুরকিনান জান্তাকে হটিয়ে ২টি সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদিনরা
পরবর্তী নিবন্ধঅর্থের বিনিময়ে নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দেয়ায় পিতাকে গ্রেপ্তার করল ইমারতে ইসলামিয়া প্রশাসন