
টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় উজানের পানির স্রোতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ১৫টি স্থান ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে জেলার দুই উপজেলার ৩২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হাজারো পরিবার। এছাড়া সোনাগাজী, দাগনভূঞা ও ছাগলনাইয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, পুকুর-মাছের ঘের এবং খেত-খামার পানিতে ডুবে গেছে। রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পরশুরাম উপজেলা।
বুধবার (০৯ জুলাই) সকল ১০টা পর্যন্ত জেলা আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্যমতে, ফেনীতে ৭ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ৯ জুলাই সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মুহুরী নদীর পরশুরাম গেজ স্টেশনে ৮ জুলাই সকাল ৬টায় পানির লেভেল ৬.৯৭ মিটার, রাত ৮টায় ১৩.৮৫ মিটার ছিল। বিপদসীমা ১২.৫৫ মিটার, এই সময়ে প্রায় ৭ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। দীর্ঘ সময় বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর ডান তীরে জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ-ভারত বাঁধের সংযোগস্থল দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। মুহুরী নদীর উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে পরশুরাম উপজেলায়, জঙ্গলগোনা ২টি (মুহুরী, ডান তীর), উত্তর শালধর ১টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), নোয়াপুর ১টি (মুহুরী নদীর বাম তীর), পশ্চিম অলকা ১টি (মুহুরী নদীর বাম তীর), ডি এম সাহেবনগর ১টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর), পশ্চিম গদানগর ১টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর), দক্ষিণ বেড়াবাড়ীয়া ১টি (কহুয়া নদীর বাম তীর), পূর্ব সাতকুচিয়া ১টি (কহুয়া নদীর ডান তীর), উত্তর টেটেশ্বর ১টি (কহুয়া নদীর বাম তীর) সহ ১০টি স্থানে ভাঙন হয়েছে। ফুলগাজী উপজেলায় দেড়পাড়া ২টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), শ্রীপুর ১টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), উত্তর দৌলতপুর ১টি (কহুয়া নদীর ডান তীর), কমুয়া ১টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর) সহ ৫টি ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া, বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। সবশেষ সকাল ৯টায় পানির লেভেল ১৩.৩১ মিটার।
এদিকে জেলার বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ ও ফেনীর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্যমতে, সদর উপজেলা ও সোনাগাজী, পরশুরাম এবং ফুলগাজীর অনেক বাসা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক মিটার এবং সাবস্টেশন পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বৈদ্যুতিক পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে এর পরিধি বাড়তে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
তথ্যসূত্র:
১.ফেনীর ৩ নদীর বাঁধ ভাঙন, প্লাবিত ৩২ গ্রাম
-https://tinyurl.com/27zys2tm