
আল-কায়েদা পশ্চিম আফ্রিকা শাখা জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (জেএনআইএম) নিশ্চিত করেছে যে, দলটির মুজাহিদিনরা ২০২৫ সালের ৪ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত নাইজারে শত্রু সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তত ৬টি পৃথক অভিযান পরিচালনা করছেন। এতে দেশটির জান্তা বাহিনীর অন্তত ৪৭ সেনা সদস্য নিহত এবং আরও বহু সংখ্যক সৈন্য আহত হয়েছে।
আঞ্চলিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, জেএনআইএম মুজাহিদিনরা সম্প্রতি নাইজারে তাদের পরিচালিত প্রথম অভিযানটি পরিচালনা করেন গত ৪ জুলাই শুক্রবার সকালে। অভিযানটি নাইজারের রাজধানী নিয়ামে থেকে মাত্র ৯৫ কিলোমিটার দূরে, সামিরা শহরে একটি শত্রু সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হয়। ‘জেএনআইএম’ এর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও সুসংগঠিত শতাধিক মুজাহিদিন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং পরিশীলিত কৌশলের উপর ভিত্তি করে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানটি পরিচালনা করেন। এসময় জান্তা বাহিনী ও মুজাহিদদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য একটি তীব্র সংঘর্ষের শুরু হয়। এতে নাইজার জান্তা বাহিনীর ৩৯ সৈন্য নিহত এবং আরও অসংখ্য সৈন্য আহত হয়।
শত্রু বাহিনীতে হতাহতের এই তালিকা ভারী হতে শুরু করলে এক পর্যায়ে জান্তা বাহিনী তাদের জীবন রক্ষায় সামরিক ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করে। শত্রুর এই পলায়নের পর মুজাহিদিনরা সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেন। সেই সাথে গনিমত হিসাবে জব্দ করেন ৩টি সামরিক যান এবং বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম।
একইদিন নাইজারের টিলাবেরি রাজ্যের বোলাগোঙ্গা এলাকায় একটি সামরিক পোস্টে হামলা চালান ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদিনরা। অভিযানে নাইজার সেনাবাহিনীর ৩ সৈন্য নিহত হয় এবং অন্যরা সামরিক পোস্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়।
আয-যাল্লাকার রিপোর্ট অনুযায়ী, শত্রু বাহিনীর এই পলায়নের পর মুজাহিদিনরা সামরিক পোস্ট থেকে ২টি সামরিক যান, ২টি ডিএসএইচকে, ৭টি আরপিজি, ২টি ক্লাশিনকোভ অ্যাসল্ট রাইফেল এবং অন্যান্য অস্ত্র গনিমত হিসাবে জব্দ করেন।
শুক্রবার রাজধানী থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মুজাহিদদের অভূতপূর্ব ২টি অভিযানের পর, রাত ৮:৩০ মিনিটের সময় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন থেকে একটি বিবৃতি সম্প্রচার করে জান্তা বাহিনী। বিভ্রান্তিকর বিবৃতিটির মাধ্যমে জান্তা বাহিনী নিজেদের পরাজয় লুকানোর জন্য ঘোষণা করে যে, শুক্রবার মুজাহিদদের পরিচালিত অভিযানে মাত্র ১০ সৈন্য নিহত এবং ১৫ সৈন্য আহত হয়েছে। এই ঘোষণাটিকে জান্তা বাহিনী এমনভাবে উপস্থাপন করছিল, যেনো এটি ‘জেএনআইএম’ এর হামলায় হতাহতের একটি ন্যূনতম সংখ্যা এবং জান্তার জন্য একটি বড় বিজয়। জান্তা বাহিনী এই ঘোষণার মাধ্যমে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতার মাত্রা ঢেকে রাখা চেষ্টা করে।
অতঃপর ৮ জুলাই ফের, মুজাহিদিনরা টিলাবেরি রাজ্যের সামিরা শহরে নাইজার সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি লক্ষ্য করে আইইডি হামলা চালান। শত্রু বাহিনীর একটি টহল দল যখন সামিরা থেকে বুলকাবো এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, ঠিক তখনই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নাইজার সেনাবাহিনীর একটি সাঁজোয়া যান সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় এবং যানটিতে থাকা সমস্ত সৈন্য হতাহতের শিকার হয়।
একদিন পরে একই এলাকায় নাইজার সেনাবাহিনীর আরও একটি গাড়ি লক্ষ্য করে বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটান মুজাহিদিনরা। এতে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শত্রু বাহিনীতে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।
এমনিভাবে গত ১৪ ও ১৫ জুলাই, নাইজারের দোসো রাজ্যে ২টি পৃথক হামলা চালান মুজাহিদিনরা। এরমধ্যে রাজ্যের ডোডো এলাকায় শত্রু বাহিনীর একটি দলের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালান মুজাহিদিনরা। এতে নাইজার সেনাবাহিনীর ৫ সৈন্য নিহত হয়। সেই সাথে মুজাহিদিনরা ১টি রাইফেল, ১টি আরপিজি, ৫টি ক্লাশিনকোভ অ্যাসল্ট রাইফেল, ১টি পিস্তল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম গনিমত হিসাবে জব্দ করেন।
মুজাহিদিনরা ১৫ জুলাইয়ে তাদের পরিচালিত অভিযানটি পরিচালনা করেন রাজ্যের কর্ডো এলাকায়। মুজাহিদিনরা অতর্কিত এই অভিযানটি জান্তা বাহিনীর একটি সামরিক টহল দলকে টার্গেট করে পরিচালনা করেন। ফলশ্রুতিতে শত্রু বাহিনীতে হতাহতের ও বস্তুগত ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।
তধ্যসূত্র:
– https://tinyurl.com/4juefp4w
– https://tinyurl.com/2xkcwfek


