
ভারতের আসামে রাজ্য সরকার চালু করেছে তাদের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ উচ্ছেদ অভিযান। ২৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান মূলত পূর্ব আসামের গোলাঘাট জেলার উরিয়ামঘাট এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ২,০০০ বাঙালি মুসলিম পরিবারকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে।
তবে এই অঞ্চলে প্রায় ১৫০টি বড় জনগোষ্ঠী পরিবার বাস করে, তাদের উচ্ছেদ করা হবে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তাদের কাছে ২০০৬ সালের বন অধিকার আইন অনুসারে বন অধিকারের সনদ রয়েছে।
ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সূত্রে জানা গেছে, অভিযানের লক্ষ্য প্রায় ১৫,০০০ বিঘা জমি (প্রায় ৪,৯০০ একর) দখলমুক্ত করা, যা রেংমা সংরক্ষিত অরণ্যের অন্তর্গত। এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন প্রায় ২,৭০০ পরিবার, যাদের অধিকাংশই বাঙালি মুসলিম।
আসামের বনবিভাগ এলাকার বাসিন্দাদের সাত দিনের মধ্যে এলাকা খালি করার নোটিশ দেওয়ার পর ২৯ জুলাই থেকে এ অভিযান শুরু করে। এতে অংশ নিয়েছে পুলিশ, কমান্ডো ও বনরক্ষীদের সমন্বয়ে গঠিত প্রায় ১,৫০০ সদস্যের নিরাপত্তা বাহিনী।
এই অভিযান আসামে চলমান একাধিক উচ্ছেদ কার্যক্রমের সর্বশেষ পর্ব। শুধু জুন ও জুলাই মাসেই রাজ্য সরকার চারটি জেলায় পাঁচটি অভিযানে প্রায় ৩,৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করেছে, যার ফলে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আসামের হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই অভিযানকে ‘জনসংখ্যাগত আগ্রাসন’ ঠেকানোর অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, মধ্য ও পশ্চিম আসাম থেকে বাঙালি মুসলিমরা পূর্বাঞ্চলে এসে বনভূমি দখল করে সুপারি চাষ করছে, যা পরিবেশ ও জনসংখ্যার ভারসাম্য বিঘ্নিত করছে।
সরকারি ভাষ্যে বলা হচ্ছে, যারা ১৯৭১ সালের আগে থেকে বসবাস করছেন, তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে উচ্ছেদই এখন সরকারের অগ্রাধিকার।
এই উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে প্রতিবেশী রাজ্য নাগাল্যান্ডেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ উরিয়ামঘাট এলাকার একটি অংশ আসাম-নাগাল্যান্ড সীমান্তে পড়েছে। নাগাল্যান্ড সরকার সীমান্তে পুলিশ মোতায়েন করেছে যেন উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো তাদের এলাকায় প্রবেশ না করতে পারে।
এদিকে নাগাল্যান্ডভিত্তিক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (খাপলাং) নিকি সুমি অভিযানের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে এটিকে ‘সুশৃঙ্খল দখল পরিকল্পনা’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
ডিমাপুর নাগা ছাত্র ইউনিয়নও উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর অনুপ্রবেশে রাজ্যের জনসংখ্যাগত ও রাজনৈতিক ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, অর্থাৎ তারা মুসলিমদের তাদের এলাকায় প্রবেশ করতে দিতে চায় না।
তথ্যসূত্র:
1. Assam govt launches massive eviction drive in Golaghat targeting over 2,000 Bengali Muslim families
– https://tinyurl.com/bddzhn3b


