দেশের শেয়ারবাজারে চলছে টানা দরপতন। বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা দিন দিন ভারী হচ্ছে। খোয়া যাচ্ছে মূলধন। এতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে লেনদেন নেমেছে চরম খরা। এতে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি লোকসানে পড়েছে মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউস এবং খোদ স্টক এক্সচেঞ্জও।
বাজারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের শেয়ারবাজার খাদের কিনারায় নেমেছে। এর প্রতিবাদে মুখে কালো কাপড় বেঁধে স্টক এক্সচেঞ্জর সামনে কর্মসূচি পালন করে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদ।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে মন্দা থাকায় প্রায় সব শেয়ারের দর এখন তলানিতে। এমন সঙ্গিন অবস্থার মধ্যেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির দায়িত্বশীলরা দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের কারণেই দরপতন হচ্ছে।
ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা বলেন, শেয়ারের দাম অনেক কম দেখে লাভের আশায় যারা বিনিয়োগ করেছিলেন এমন অনেক বিনিয়োগকারী এখন লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাদের যে ধৈর্য ধরতে বলব, সে সাহসও আমাদের নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ জানি না, এ পতনের শেষ কোথায়। তা হলে কী করে বিনিয়োগকারীদের লোকসানে শেয়ার বিক্রি করতে বলি। তার পরও যে বলা হয় না, তা নয়। বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী এখন কারও পরামর্শ কানে তোলেন না। কেউ কেউ লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে যতটুকু পাচ্ছেন ততটুকু নিয়ে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে চলে যাচ্ছেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহের চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই বড়পতন হয়েছে। আগের দিনের ধারাবাহিকতায় বুধবারও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় পতন ঘটেছে। ডিএসইর মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বড় পতন হয়েছে।
জানা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২২৮ পয়েন্টে। যা ৩ বছর ৮ মাস ৬ দিন অর্থাৎ ৪৪ মাস বা ৮৯২ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৬ সালের ২ মে বুধবারের চেয়ে নিম্নে অবস্থান করছিল ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচকটি। ওই দিন ডিএসইএক্স অবস্থান করছিল ৪ হাজার ১৭১ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৯ পয়েন্ট ও ডিএসই-৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৫৪ ও ১ হাজার ৪২১ পয়েন্টে। ডিএসইর চালু হওয়া নতুন সূচক সিডিএসইটি ১০ পয়েন্ট কমে ৮৫১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ২৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা আগের দিন থেকে ৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩২৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকার।
ডিএসইতে ৩৫১টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫১টির বা ১৫ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৪৯টির বা ৭১ শতাংশের এবং ৫১টি বা ১৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৮৮ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২১৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৪৭টির, কমেছে ১৪৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির দর। সিএসইতে ১৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
দরপতনের প্রতিবাদের মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ :
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের প্রতিবাদে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে কালো মুখোশ পরে বিক্ষোভ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। কারসাজি করে যারা কোটি কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে তুলে নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
গতকাল বুধবার মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষোভে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, যেখানে বাজার মূলধন ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা, সেখানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ট্রেড হয়, এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই। এ মুহূর্তে সূচক নেমে এসেছে ৫ হাজার ৪০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ তে। এগুলো সব বাজার কারসাজির কুফল।
উল্লেখ, ২০১০ সালের ধসের পর থেকেই থেমে থেমে পতন চলছে পুঁজিবাজারে। সাম্প্রতিক সময়ে এ পতন অতিমাত্রায় বেড়েছে।
সুত্রঃ আমাদের সময়