আসন্ন ঈদুল আযহায় ভারতের মুসলিমদের কোরবানি করার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে উত্তর প্রদেশের বিজেপি সাংসদ নন্দকিশোর গুর্জর বলেছেন, ‘ঈদে কাউকে কোরবানি দিতে দেখা গেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যদি কেউ ভেবে থাকেন, তিনি কোরবানি দেবেনই তাহলে নিজের প্রিয় জিনিস, নিজের সন্তানকে দিন। আমাদের কোনও আপত্তি নেই’। খবর সংবাদ প্রতিদিন ও আজকালের।
আগামী শনিবার পবিত্র ঈদুল আযহা। মুসলিমরা এদিন নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টির লক্ষে পশু কোরবানি করেন। কোরবানি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান প্রত্যেক নর-নারীর উপর কুরবানি করা ওয়াজিব। করোনার মধ্যে এবং উগ্র হিন্দুদের হিংস্রতার মুখে কীভাবে ঈদের নামাজ আদায় করবেন এবং কোরবানি করবেন তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় মুসলিমরা। এমন অবস্থায় এই বিতর্কিত মন্তব্য করলেন উত্তর প্রদেশ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় থাকা দলের সাংসদ।
গাজিয়াবাদের লোনি কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ নন্দকিশোর গুর্জরের দাবি, করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এ বছর ঈদে মুসলিমদের পশু কোরবানি দেওয়া উচিত নয়। আর যদি কোরবানি দিতে হয়, তাহলে নিজের সন্তানকে দিন। নিরীহ পশুগুলোকে মারবেন না। একটি পশুও যাতে কুরবানি দিতে না পারে সে বিষয়ে গাজিয়াবাদ প্রশাসনকে জানাবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গুর্জর বলেন, ‘যেভাবে সনাতন ধর্মে এখন আর বলি দেওয়া হয় না। নারকেল ফাটিয়ে আমরা বলিদানের রীতি পালন করি। মুসলিমদের আমি বলব, করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এ বছর কোরবানি বন্ধ রাখুন।’
এর আগে করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির এমপি শফিকুর রহমান ঈদে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে বিশেষ ছাড় দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, ঈদুল আজহায় মুসলিমদের ঈদগাহ এবং মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া উচিত। মুসলিমরা যাতে কোরবানির পশু ক্রয় করতে পারে সেজন্য ঈদে পশু বাজার খোলার দাবিও জানিয়েছিলেন তিনি।
পাল্টা জবাবে বিজেপি নেতা ও সাংসদ সঙ্গীত সোম তাকে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যেভাবে আজম খান (সমাজবাদী পার্টির নেতা) কারাগারে ঈদ পালন করেছেন, ওনাকেও সেভাবে কারাগারে ঈদ পালন করতে হবে।’
উল্লেখ্য, কোরবানি উপলক্ষে প্রতিবছরই ভারতীয় মুসলমানদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়ে থাকে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম দেশ ভারতে মুসলিমদের ধর্মীয় বিধান পালনে নিষেধাজ্ঞা এবং হয়রানি করা তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল বলে বিশ্বাস করেন মুসলিমরা। সন্ত্রাসী দল বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের এসব আচরণ ও বক্তব্যের মাধ্যমে ভারত একটি হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বিশ্ব পরিমণ্ডলে ঘৃণিত ও সমালোচিত হচ্ছে বলে ইতোপূর্বে মন্তব্য করেছেন দেশ-বিদেশের বরেণ্য ইসলামি স্কলারগণ। আর করোনার দোহাই দিয়ে মুসলিমদের ধর্মীয় হুকুম-আহকাম পালনে বাধা দিলেও হিন্দুরা তাদের ধর্মাচার ঠিকই পালন করে যাচ্ছে। এমনকি বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দিরের নির্মাণ প্রকল্পের কাজও শুরু হতে যাচ্ছে।